কিংবদন্তির ডাকপিয়ন

প্রযুক্তির কল্যাণে আমরা এখন খুব সহজেই সবার সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারি। কিন্তু সুদূর অতীতে কি এমন সুবিধা ছিল? অবশ্যই না। একটা সময় যোগাযোগের জন্য শুধু ডাক ব্যবস্থার ওপর নির্ভর করতে হতো। খুব জরুরি প্রয়োজনে ছিল টেলিগ্রাম। কিন্তু তারও আগে সংবাদ আদান-প্রদান হতো হেঁটে। সেই সময় সংবাদ আদান-প্রদানের আর এক উপায় ছিল কবুতর। বিশেষ করে প্রাচীনকালে রাজা-বাদশারা বার্তা আদান-প্রদানের ক্ষেত্রে বিশেষ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত


কবুতর ব্যবহার করতেন। জানা যায়, এখনও নেপালের দুর্গম এলাকায় কবুতরের সাহায্যে ডাকের চিঠি বিলি করা হয়! একটি বিশেষ প্রজাতির কবুতরকে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে এ কাজ করানো হয়। আমাদের দেশে অনেক ধরনের কবুতর পাওয়া যায়। সব ধরনের কবুতর পোষও মানানো যায়। কবুতরের স্মৃতিশক্তি অসম্ভব পরিষ্কার। পথ চিনতে পারে খুব সহজেই। এরা কয়েকশ' কিলোমিটার পথ অতিক্রম করে গন্তব্যে পেঁৗছতে পারে।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় কবুতরকে গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহের কাজে ব্যবহার করা হয়েছিল। যেসব স্থানে উড়োজাহাজ নেওয়া সম্ভব ছিল না, সেখানে ছবি তোলার জন্য কবুতর ব্যবহার করা হতো। এ জন্য কবুতরের বুকে একটি হালকা ক্যামেরা বেঁধে দেওয়া হতো। এ অবস্থায় কবুতর নির্দেশিত স্থানের ছবি নিয়ে দ্রুত ফিরে আসত। একটি রাবারের বলের ভেতর দিয়ে বায়ু প্রবাহিত করে ক্যামেরাটিকে সচল রাখা হতো। এছাড়া দূরের আত্মীয়-স্বজনের খবর নেওয়ার জন্যও তখন কবুতর ব্যবহার করা হতো। প্রেমিক-প্রেমিকারা নিত্যদিন কবুতরের সাহায্যে পরস্পরের খবর রাখত। শখ করে অনেকেই পুষে থাকেন বিভিন্ন প্রজাতির কবুতর। এটি যে শান্তি আর পবিত্রতার প্রতীক, তা আজ আন্তর্জাতিকভাবেই স্বীকৃত।
গ্রামবাংলায় কবুতর নিয়ে অনেক সংস্কার চালু আছে। বলা হয়, যে বাড়িতে কবুতর থাকে না, সে বাড়িতে শনির দৃষ্টি পড়েছে। আবার যদি একঝাঁক কবুতর এসে কারও বাড়িতে বাসা বাঁধে, তাহলে বলা হয়, সেই বাড়িতে লক্ষ্মী এসেছে। এছাড়া দুর্লভ কোনো কিছুর কথা বলতে গিয়ে বলা হয় 'কবুতরের দুধ' পাওয়া সহজ নয়। যা-ই হোক, কবুতর আমাদের খুব কাছের একটি গুণী পাখি। এ পাখি যেন বিলুপ্ত না হয়, সেদিকে আমাদের সবার দৃষ্টি রাখা প্রয়োজন।
সোহাগ আহমেদ

No comments

Powered by Blogger.