'আমি লোকমানকে গুলি করি' by পিনাকি দাসগুপ্ত ও প্রীতি রঞ্জন সাহা

রিভলবারটি আমার। আমিই লোকমানকে গুলি করি। রিভলবারের সাতটি গুলির মধ্যে পাঁচটি লোকমানের শরীরে বিদ্ধ হয়। দুটি করি ফাঁকা গুলি।' নরসিংদী পৌর মেয়র লোকমান হত্যা মামলায় গ্রেফতারকৃত আসামি নাজমুল হাসান শরীফ ওরফে কিলার শরীফ এভাবেই তার স্বীকারোক্তি দেয়। পুলিশ শনিবার রাতে রাজধানী ও নরসিংদী থেকে গ্রেফতার করে শরীফ এবং তার তিন সহযোগীকে। তারা হলো_ আওলাদ হোসেন, সারোয়ার হোসেন ও মীর
দেলোয়ার হোসেন শরীফ। উদ্ধার করা হয় মেয়র লোকমান হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত একটি রিভলবার, ২২ রাউন্ড গুলি ও কিলিং মিশনে ব্যবহৃত
মুখোশটিও। এ নিয়ে লোকমান হত্যার ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে মোট ১২ জনকে গ্রেফতার করা হলো। তবে তাদের মধ্যে ১০ জনকে লোকমান হত্যা ও দু'জনকে অস্ত্র মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়। সোমবার দুপুরে নরসিংদী জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে এক প্রেস ব্রিফিংয়ের মাধ্যমে উদ্ধারকৃত অস্ত্র ও গুলিসহ কিলার শরীফ এবং তার অন্য তিন সহযোগীকে সাংবাদিকদের সামনে হাজির করা হয়। গ্রেফতারকৃত চারজনকে আজ আদালতে হাজির করে রিমান্ডের আবেদন জানাবে পুলিশ।
মামলার তদন্ত সূত্র জানিয়েছে, শরীফ একজন পেশাদার খুনি। তার বিরুদ্ধে হত্যাসহ বেশ ক'টি মামলা রয়েছে। বেশ ক'বছর জেল খাটার পর কয়েক মাস আগে সে ছাড়া পায়। পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে শরীফ জানায়, এক সময় লোকমানের সঙ্গে তার ভালো সম্পর্ক ছিল। কিন্তু পরে কয়েকটি ঘটনায় লোকমান তাকে পুলিশে ধরিয়ে দেন। লোকমানের কারণেই তাকে জেল খাটতে হয়েছে। আর জেলে থাকতেই শরীফ মনস্থির করে মুক্তি পাওয়ার পর লোকমানকে সে হত্যা করবে। তবে লোকমানকে হত্যার ব্যাপারে সর্বাত্মক সহায়তা দেন আওয়ামী লীগ নেতা মোবারক হোসেন মোবা। মোবাই তাকে জেল থেকে মুক্তি পেতে সহায়তা করেন। হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত রিভলবারটিও মোবাই তাকে কিনে দিয়েছিলেন। কিলার শরীফ শহরের ব্রাহ্মন্দী এলাকার কুখ্যাত সন্ত্রাসী পুলিশের ক্রসফায়ারে নিহত এমরান ওরফে মিয়া ভাইয়ের অন্যতম সহযোগী।
সূত্র জানায়, পুলিশের কাছে তথ্য রয়েছে লোকমান হত্যার জন্য শরীফ মোটা অঙ্কের টাকা পেয়েছে; যার পরিমাণ প্রায় কোটি টাকা। তবে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে শরীফ বারবার টাকার প্রসঙ্গে এড়িয়ে গেছে।
হত্যাকাণ্ডের পরই শরীফ ঢাকার নন্দীপাড়া এলাকায় তার এক আত্মীয়ের বাসায় আশ্রয় নেয়। লোকমানকে গুলি করার সময় শরীফের পরনে ছিল কালো প্যান্ট, হাফহাতা কালো গেঞ্জি ও মুখে ছিল কালো মুখোশ। মুখোশটি দু'খণ্ড করে রান্নার হাঁড়ি-পাতিল ধরার জন্য ব্যবহার করা অবস্থায় দেলোয়ার হোসেন শরীফের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয়। আর পরিহিত কালো রঙের গেঞ্জির ওপর সাদা রঙে ইংরেজিতে লেখা ছিল 'ডিজিটাল ফিউচার'।
যেভাবে গ্রেফতার করা হয় : নরসিংদী জেলা পুলিশ সুপার খন্দকার মহিদউদ্দিন সাংবাদিকদের জানান, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে নরসিংদী পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের (ডিবি) একটি দল শনিবার রাত সোয়া ১২টায় রাজধানীর খিলগাঁও থানার নন্দীপাড়া এলাকায় অভিযান চালায়। সেখান থেকে গ্রেফতার করা হয় লোকমান কিলিং মিশনের সদস্য শিবপুরের সোনাদিয়া গ্রামের মৃত আবদুল হাইয়ের ছেলে নাজমুল হাসান শরীফ ও নরসিংদীর পুরানপাড়ার মতিউর রহমানের ছেলে আওলাদ হোসেনকে। পরে তাদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী রাত সোয়া ২টায় গাজীপুরের চাপুলিয়া গ্রাম থেকে নরসিংদীর ঘোষপাড়ার ছিদ্দিক খানের ছেলে সারোয়ার ও ঘোড়াদিয়ার মোঃ কুতুবউদ্দিনের ছেলে মীর দেলোয়ার হোসেন শরীফকে গ্রেফতার করা হয়। এ সময় তাদের কাছ থেকে ২২ রাউন্ড তাজা গুলিসহ হত্যাকা ে ব্যবহৃত ৩২ বোরের একটি বিদেশি রিভলবার ও মুখোশ উদ্ধার করে পুলিশ।
পুলিশ জানায়, কিলার শরীফসহ শনিবার গ্রেফতার হওয়া চারজন মেয়র লোকমান হত্যা মামলার এজাহারভুক্ত আসামি না হলেও তারা হত্যাকা ে জড়িত ছিল বলে জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছে মামলায় গ্রেফতার হওয়া এজাহারভুক্ত আসামিরা।
পুলিশ সুপার খন্দকার মহিদউদ্দিন বলেন, পেশাদারিত্বের সঙ্গে লোকমান হত্যার তদন্ত কাজ শেষ করতে চাই। সততার সঙ্গে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করতে চাই। প্রকৃত খুনিদের গ্রেফতার করে আইনের কাঠগড়ায় দাঁড় করানোর প্রত্যয় ব্যক্ত করেন পুলিশ সুপার।

No comments

Powered by Blogger.