টিপাইমুখ নিয়ে ব্যাখ্যা দাবি প্রসঙ্গে ফখরুল-পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ঔদ্ধত্য দেখিয়েছে

টিপাইমুখ বাঁধের বিষয়ে খালেদা জিয়ার কাছে ব্যাখ্যা চেয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ঔদ্ধত্য দেখিয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, 'পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালকের বিবৃতি ঔদ্ধত্যপূর্ণ। একটি মন্ত্রণালয়ের একজন মহাপরিচালক দেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে কিভাবে প্রশ্ন করার অধিকার রাখেন কিংবা তাঁর কাছে ব্যাখ্যা চান, তা বোধগম্য নয়। এটা দেশের জন্য দুর্ভাগ্যজনক।' তিনি আরো বলেন, 'পররাষ্ট্র


মন্ত্রণালয়ের একজন মহাপরিচালকের প্রশ্নের জবাব দিতে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া রাজি নন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী যদি জানতে চাইতেন, তাও চলত।' গতকাল সোমবার জাতীয় প্রেসক্লাবের সেমিনার কক্ষে এক আলোচনা সভায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ওই বিবৃতির তীব্র সমালোচনা করে এসব কথা বলেন মির্জা ফখরুল। টিপাইমুখ নিয়ে সরকারের অবস্থান ব্যাখ্যা করে গত ৯ ডিসেম্বর পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দেওয়া বিবৃতিতে বিরোধীদলীয় নেতা ও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উদ্দেশ করা বলা হয়, এখন বিরোধিতা করলেও প্রধানমন্ত্রী থাকাকালে খালেদা জিয়া এ বাঁধ নিয়ে নীরব ছিলেন। এদিকে পররাষ্ট্র মন্ত্র্রণালয়ের বিবৃতি দেওয়ার তিন দিন পর গতকাল বিএনপির পক্ষে দলের দপ্তরের দায়িত্বে যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীও এক বিবৃতিতে সরকারের কঠোর সমালোচনা করে পররাষ্ট্র দপ্তরের দেওয়া বিবৃতির তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান।
বাংলাদেশ জমিয়তে ওলামায়ে ইসলাম আয়োজিত ভারতের টিপাইমুখ বাঁধ নির্মাণের প্রতিবাদে জকিগঞ্জ অভিমুখে রোডমার্চ পরবর্তী এক গোলটেবিল আলোচনায় মির্জা ফখরুল আরো বলেন, সরকার জনগণের সঙ্গে প্রতারণা করে ভারতের চাটুকারিতা করছে। তিনি বলেন, 'আমাদের দরকষাকষির পথ ছিল ট্রানজিট। ভারতও ট্রানজিট নিয়ে গেছে। পানির ন্যায্য হিস্যা আদায় করে চুক্তি করা উচিত ছিল। আমাদের স্বার্থের দিকে না তাকিয়ে ক্ষমতায় আসতে তারা বাংলাদেশের স্বত্ব ভারতকে লিখে দিয়েছে। বাংলাদেশ সরকার কিছুই পায়নি।' তিনি আরো বলেন, বর্তমান সরকার বাংলাদেশকে পরনির্ভরশীল রাষ্ট্রে পরিণত করছে। সরকারের এ ষড়যন্ত্র রুখতে সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে টিপাইমুখে বাঁধ নির্মাণে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। এ সময় বাংলাদেশ ও ভারতের যৌথ কমিশন গঠন করে টিপাইমুখে জরিপ চালানোর তাগিদ দেন তিনি।
আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন জমিয়তের নির্বাহী সভাপতি মওলানা মোস্তফা আজাদ। অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন দৈনিক আমার দেশের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহমুদুর রহমান, জমিয়তের মহাসচিব মুফতি মোহাম্মদ ওয়াক্কাস, সিনিয়র সহসভাপতি জহুরুল হক ভুঁইয়া, খেলাফত আন্দোলনের মহাসচিব জাফরুল্লাহ খান, ইসলামী ঐক্যজোটের সাংগঠনিক সম্পাদক মুফতি ফয়জুল্লাহ, ন্যাপ ভাসানীর চেয়ারম্যান শেখ আনোয়ারুল হক, ইসলামিক পার্টির সভাপতি আবদুল মবিন প্রমুখ।
রিজভীর বিবৃতি : টিপাইমুখ বাঁধ প্রকল্প ইস্যুতে সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা ও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার অতীত ভূমিকার বিষয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কর্তৃক ব্যাখ্যা চেয়ে যে সংবাদ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছে তা উদ্ভট, বিস্ময়কর ও উদ্বেগজনক বলে মন্তব্য করেছেন দপ্তরের দায়িত্বে থাকা দলের যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতির তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে পাল্টা বিবৃতিতে গতকাল রিজভী বলেন, 'আওয়ামী সরকার ক্ষমতাসীন হওয়ার পর থেকেই প্রশাসন, বিচার বিভাগসহ নিরপেক্ষ প্রতিষ্ঠানগুলোকে করায়ত্ত করে আওয়ামী প্রতিষ্ঠানে পরিণত করার যে অভিযান চালিয়ে এসেছে তা আবারও প্রমাণিত হলো পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এহেন অভিনব ব্যাখ্যা চাওয়ার মধ্য দিয়ে।' তিনি আরো বলেন, 'ভারতের অন্যায্য, একতরফা টিপাইমুখ বাঁধ নির্মাণের উদ্যোগকে আড়াল করতেই দেশের স্বার্থে সোচ্চার কণ্ঠ খালেদা জিয়াকে তারা টার্গেট করেছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিরোধীদলীয় নেতার কাছে ব্যাখ্যা চাওয়া শুধু হাস্যকরই নয়, সরকারের ভারতমুখী পররাষ্ট্রনীতি যে কত নির্লজ্জ বেহায়াপনার পর্যায়ে পেঁৗছেছে, এই ঘটনার মধ্য দিয়ে আর একটি নজির সৃষ্টি করল।'

No comments

Powered by Blogger.