পবিত্র কোরআনের আলো-ইহুদিরা সৌভাগ্যবান, তবে যুগে যুগে তারা বহু নির্যাতনও সহ্য করেছে

৬৭. ওয়াইয্ তাআয্যানা রাব্বুকা লাইয়াবআ'ছান্না আ'লাইহিম ইলা- ইয়াওমিল কি্বয়ামাতি মাই ইঁয়াছূমুহুম ছুআল আ'যা-ব; ইন্না রাব্বাকা লাছারীউ'ল ই'ক্বা-ব। ওয়া ইন্নাহূ লাগাফূরুর রাহীম। ১৬৮. ওয়া ক্বাত্ত্বা'না-হুম ফিল আরদ্বি উমামা-; মিনহুমুছ্ ছ্বা-লিহূনা ওয়া মিনহুম দূনা যা-লিকা ওয়া বালাওনা-হুম বিল হাছানাতি ওয়া চ্ছায়্যিআ-তি লাআ'ল্লাহুম ইয়ারজিঊ'ন। ১৬৯. ফাখালাফা মিম্ বা'দিহিম খালফুন ওয়ারিছু ল্কিতা-বা ইয়া'খুযূনা আ'রাদ্বা হা-যা
ল্আদনা- ওয়া ইয়াক্বূলূনা ছাইউগ্ফারু লানা-; ওয়াই ইঁয়্যা'তিহিম আ'রাদ্বুম্ মিছলুহূ ইয়া'খুযূহু; আলাম ইউ'খায্ আ'লাইহিম্ মীছাক্বু ল্কিতা-বি আঁ ল্লা- ইয়াক্বূলূ আ'লাল্লাহি ইল্লাল্ হাক্কা ওয়া দারাছূ মা- ফীহ; ওয়াদ্দা-রুল আ-খিরাতু খাইরু ল্লিল্লাযীনা ইয়াত্তাক্কূনা আলাফা- তা'কি্বলূন। [সুরা : আল-আ'রাফ, আয়াত : ১৬৭-১৬৯]

অনুবাদ : ১৬৭. আর (সে বিষয়টিও স্মরণ রেখো) যখন তোমার প্রতিপালক ঘোষণা করলেন, তিনি কিয়ামত দিবস পর্যন্ত তাদের (বনি ইসরাইলদের) ওপর এমন লোকদের কর্তৃত্ব দান করবেন, যারা তাদের খুব খারাপভাবে শাস্তি দেবে। তোমার প্রতিপালক দ্রুত শাস্তিদানকারী এবং সেই সঙ্গে তিনি অতি ক্ষমাশীল ও পরম দয়ালু।
১৬৮. আমি পৃথিবীতে তাদের বিভিন্ন সম্প্রদায়ে বিভক্ত করে দিয়েছি। সুতরাং তাদের মধ্যে সৎকর্মশীল লোকও ছিল এবং কিছু অন্য রকম লোকও। আমি তাদের ভালো ও মন্দ অবস্থা দ্বারা পরীক্ষা করেছি, যাতে তারা সঠিক পথে ফিরে আসে।
১৬৯. এরপর তাদের অযোগ্য পরবর্তী প্রজন্ম পৃথিবীতে তাদের উত্তরাধিকারী হলো, তারা আল্লাহর কিতাবেরও উত্তরাধিকারী হলো। তারা অত্যন্ত নিকৃষ্ট পথে পার্থিব ধনসম্পদ করায়ত্ত করতে থাকল আর বলতে থাকল, অবিলম্বেই আমাদের ক্ষমা করে দেওয়া হবে। কিন্তু আবার যদি ঠিক সেভাবেই কোনো ধন-সম্পদ তাদের কাছে চলে আসত, তবে তাও তারা করায়ত্ত করে নিত। তাদের কাছ থেকে কি কিতাবে বর্ণিত সেই প্রতিশ্রুতি নেওয়া হয়নি যে তারা আল্লাহর প্রতি সত্য ছাড়া কোনো কথা আরোপ করবে না? আর সেই কিতাবে যা কিছু লেখা ছিল, তা তারা পড়েও ছিল। যারা তাকওয়া অবলম্বন করে তাদের জন্য আখিরাতের নিবাস শ্রেষ্ঠতর। হে ইহুদিরা, এর পরও তোমরা বুদ্ধি কাজে লাগাবে না?

ব্যাখ্যা : ১৬৭ নম্বর আয়াতে ইহুদিদের ব্যাপারে আল্লাহর এমন একটি ঘোষণার কথা উল্লেখ করা হয়েছে, যাতে বলা হয়েছে, তাদের ঔদ্ধত্যের কারণেই আল্লাহ কিয়ামত পর্যন্ত তাদের এমন সব শাসকগোষ্ঠীর অধীন করে দেবেন, যারা তাদের ওপর অত্যন্ত খারাপভাবে অত্যাচার করবে। ইহুদি সম্প্রদায়ের উদ্ভব ও বিস্তৃতি লাভের দীর্ঘ ইতিহাস লক্ষ করলেও আমরা দেখতে পাই, তারা মানবসভ্যতার আদি যুগ থেকে এক সুপরিচিত ও সৌভাগ্যবান জাতি। কিন্তু যুগ যুগ ধরেই তারা নানাভাবে নিপীড়িত ও নিগৃহীতও বটে। তারা নিজেদের পিতৃভূমি থেকেও বহুবার বিতাড়িত ও নির্বাসিত হয়েছে। অত্যাচারী শাসকগোষ্ঠীর কাছে বহুবার তাদের দাসত্ব বরণ করতে হয়েছে। ইসলামের আবির্ভাবের আগেও আমরা দেখতে পাই; কিছুকাল পর পর তাদের ওপর এমন অত্যাচারী শাসক চেপে বসেছে, অথবা কোনো অত্যাচারী জাতির দ্বারা বিতাড়িত হয়েছে অথবা বশ্যতা স্বীকার করে বাঁচতে হয়েছে। তবে মানবসভ্যতার ইতিহাসে তাদের গৌরব ও অহংকারের স্থানও অনেক বিস্তৃত। হাজার হাজার বছরের সুদীর্ঘ ইতিহাসে তাদের এমন সৌভাগ্যও এসেছে, যখন তারা সুখ-সমৃদ্ধি অর্জন করেছে এবং সম্মান ও কর্তৃত্বে অগ্রগণ্য বিবেচিতও হয়েছে। মানবসভ্যতার ইতিহাসে আমরা ইহুদিদের জটিল জাতি হিসেবেই দেখতে পাই; তবে সর্বাধিক নবী-রাসুলের আগমন এই বংশে হয়েছে। এই আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, আমি তাদের ভালো ও মন্দ অবস্থা দ্বারা পরীক্ষা করেছি। ইহুদিরা মহাপয়গম্বর হজরত ইব্রাহিম (আ.)-এর বংশধরদের একটি শাখা। ১৬৯ নম্বর আয়াতে ইহুদিদের লালসাবৃত্তি, অসততা ও কতিপয় নীচু স্বভাবের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। তারা নিজেদের ক্ষুদ্র স্বার্থ হাসিলের জন্য অথবা মানুষের কাছ থেকে ঘুষ নিয়ে আল্লাহর কিতাবের অপব্যাখ্যা করত। সেই সঙ্গে তারা বিশ্বাস করত এবং বলত যে আমাদের এ গুনাহ মাফ হয়ে যাবে। কারণ আমরা ঈশ্বরের সন্তান। আমাদের পূর্বপুরুষরা পবিত্র মানুষ ছিলেন, তাদের সুপারিশেই আমরা পার পেয়ে যাব। অথচ গুনাহ মাফ হয় তওবার দ্বারা, আর তওবার অপরিহার্য শর্ত হলো ভবিষ্যতে সে রকম গুনাহ থেকে বেঁচে থাকার দৃঢ় প্রতিজ্ঞা। কিন্তু তাদের অবস্থা সে রকম ছিল না। তারা সুযোগ পেলেই নির্দ্বিধায় সে কাজটা আবার করত। এই আয়াতে আল্লাহ তায়ালা ইহুদিদের প্রসঙ্গ ধরেই মানুষকে তাকওয়াবান হওয়ার উপদেশ দিয়েছেন।

গ্রন্থনা : মাওলানা হোসেন আলী

No comments

Powered by Blogger.