বাংলাদেশে ক্ষুদ্রঋণ কার্যক্রম চালাতে চায় আইডিবি by আবুল কাশেম

ক্ষুদ্র থেকে বিশ্বব্যাপী সম্প্রসারিত হয়েছে ক্ষুদ্রঋণ বিতরণকারী সংস্থা গ্রামীণ ব্যাংক। ক্ষুদ্রঋণের বাণিজ্য করে সহজেই মুনাফা অর্জনে গ্রামীণ ব্যাংকের দৃষ্টান্তে উৎসাহী হয়ে বাংলাদেশে এ কার্যক্রম চালাতে চায় ইসলামিক ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (আইডিবি)। সংস্থাটি গ্রামীণ ব্যাংক মডেলে বিশেষ ব্যবস্থাপনায় 'ইসলামিক মাইক্রো ফাইন্যান্স' নামে বাংলাদেশে ক্ষুদ্রঋণ কার্যক্রম পরিচালনার অনুমতি চেয়েছে। স্থানীয় ইসলামী ব্যাংকসহ মোট চারটি ব্যাংকের


সহযোগিতায় শত কোটি টাকা মূলধন নিয়ে যাত্রা করতে চায় সংস্থাটি। বিশেষ অনুমোদনের জন্য অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের কাছে চিঠিও পাঠিয়েছেন আইডিবির প্রধান। গ্রামীণ ব্যাংকের আদলে আরেকটি প্রতিষ্ঠানের বিশেষ অনুমোদন দিতে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগকে (ইআরডি) চাপ দিচ্ছে আইডিবি।
আইডিবির পাঠানো চিঠিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে মাইক্রো ফাইন্যান্স (ক্ষুদ্রঋণ) কার্যক্রমে ইসলামিক কোনো মডেল নেই। আর ইসলামিক মডেলের জন্য আলাদা কোনো প্রতিষ্ঠান বা সংস্থাও নেই। বাংলাদেশে ইসলামিক মাইক্রো ফাইন্যান্স নামে গ্রামীণ ব্যাংকের আদলে একটি বিশেষ প্রতিষ্ঠান বা সংস্থা দরকার। এ অবস্থায় শত কোটি টাকার মূলধন নিয়ে বাংলাদেশে ইসলামিক মাইক্রো ফাইন্যান্স সংস্থাটি পথ চলতে চায়। এর মধ্যে আইডিবি নিজে ২০ কোটি টাকা এবং স্থানীয় ইসলামী ব্যাংকসহ চারটি ব্যাংক আরো ৭০ কোটি টাকার জোগান দেবে। এর অর্থ দাঁড়ায়, অর্থের মূল জোগানদাতা হবে ইসলামী ব্যাংকসহ চারটি স্থানীয় ব্যাংক।
অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের কাছে পাঠানো আইডিবি প্রধানের চিঠিতে আরো বলা হয়েছে, এ সংস্থাটি চার বছরের মধ্যে অর্থনৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য হয়ে উঠবে।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, গ্রামীণ ব্যাংকের সাফল্য পর্যালোচনা করেই আইডিবি স্থানীয় কয়েকটি ব্যাংককে সঙ্গে নিয়ে ইসলামিক ক্ষুদ্রঋণ কার্যক্রমের জন্য বিশেষ সংস্থা প্রতিষ্ঠায় আগ্রহী হয়ে উঠেছে। ইতিমধ্যে এ সংস্থার পক্ষ থেকে একটি জরিপও চালানো হয়েছে। আর জরিপে ইতিবাচক ফলাফলে উদ্বুদ্ধ হয়েছে আইডিবি ও স্থানীয় ইসলামিক ব্যাংকগুলো।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, গ্রামীণ ব্যাংক মডেলে বিশেষ ব্যবস্থাপনায় ক্ষুদ্রঋণ কার্যক্রম পরিচালনার অনুমতি পেতে 'চাপ' দিচ্ছে আইডিবি। সরকারের বিশেষ অনুমোদন পেতে ইআরডিকে তাগিদ অব্যাহত রেখেছে আইডিবি। তবে অর্থ মন্ত্রণালয় এখনো এ ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি। কারণ হিসেবে অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা মনে করছেন, গ্রামীণ ব্যাংকের মতো নতুন কোনো ইস্যু তৈরি হোক_তা সরকার এ সময় চাইছে না। আর স্থানীয় ক্ষুদ্রঋণ পরিচালনাকারী সংস্থাগুলোও বিশেষ অনুমোদনের মাধ্যমে পৃথক সংস্থা গঠনের পক্ষে নয়।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, শত কোটি টাকা মূলধন রয়েছে_এমন প্রায় ২০টি স্থানীয় সংস্থা বাংলাদেশে ক্ষুদ্রঋণ কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে। ক্ষুদ্রঋণ নিয়ে কাজ করা সংস্থাগুলোর নেটওয়ার্কিং প্রতিষ্ঠান ক্রেডিট অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট ফোরামের (সিডিএফ) নির্বাহী পরিচালক মো. আবদুল আউয়াল বলেন, সরকারের বিশেষ অনুমোদন নিয়ে ক্ষুদ্রঋণের জন্য বিশেষ কোনো সংস্থার প্রয়োজন নেই। মাইক্রো ক্রেডিট রেগুলেটরি অথোরিটির (এমআরএ) লাইসেন্স নিয়ে কাজ করলে সংস্থাগুলোর মধ্যে আন্তপ্রতিযোগিতা বাড়বে।
বাংলাদেশে ক্ষুদ্রঋণের আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু হয় ১৯৭৪ সালে। ব্র্যাকের হাত ধরে এ কার্যক্রম শুরু হলে গ্রামীণ ব্যাংক এ খাত বিকাশে নতুন মাত্রা যোগ করে। ১৯৯৫ সালে ক্ষুদ্রঋণ পরিচালনাকারী সংস্থাগুলোর পক্ষ থেকে রেগুলেশনের জন্য সরকারের কাছে প্রস্তাব করা হয়। সরকার প্রথমদিকে 'রেগুলেশন বা কন্ট্রোলিং'-এর আওতায় না আনার পক্ষে ছিল। তবে এনজিও সেক্টরের দীর্ঘদিনের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে 'ফ্যাসিলিটেটরের ভূমিকায়' একটি সংস্থা গঠন করা হয়। ২০০৬ সালে গঠিত সরকারি বিধিবদ্ধ এ সংস্থার নাম মাইক্রো ক্রেডিট রেগুলেটরি অথোরিটি। প্রাতিষ্ঠানিক ও অপ্রাতিষ্ঠানিক উভয় খাত থেকে তহবিল সংগ্রহ করে থাকে ক্ষুদ্রঋণ পরিচালনাকারী এনজিও। অনুদানের ওপর নির্ভরশীল প্রতিষ্ঠানের ব্যয় নূ্যনতম এবং বাণিজ্যিক ব্যাংকের ঋণের ওপর নির্ভরশীল প্রতিষ্ঠানগুলোর ব্যয় সর্বোচ্চ। ক্ষুদ্রঋণ খাতে বিদেশি অনুদানের পরিমাণ শতকরা ৫ ভাগ। সরকারি সংস্থা পল্লী কর্মসহায়ক ফাউন্ডেশন (পিকেএসএফ) এ খাতে শতকরা ১৮ ভাগ অর্থের জোগান দেয়। পিকেএসএফ ঋণ দেয় ৪ থেকে ৭ শতাংশ সুদে। বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোও প্রায় পিকেএসএফের সম পর্যায়ের অর্থ জোগান দিয়ে থাকে। বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে নেওয়া তহবিলের খরচ পড়ে যায় প্রায় ১২ থেকে ১৩ শতাংশ।

No comments

Powered by Blogger.