ঊর্ধ্বমুখী ডলার-ভোক্তাকে প্রভাবমুক্ত রাখতে হবে

দেশে ডলারের দাম বাড়তির দিকে। চাপ বেড়েছে অর্থনীতিতে। আমদানিনির্ভর দেশ হিসেবে বাংলাদেশে টাকার বিপরীতে ডলারের বিনিময় হার বেড়ে গেলে এর প্রভাব সরাসরি ভোক্তার ওপরই পড়বে। ডলারের বিনিময়মূল্য বেড়ে গেলে তাতে রপ্তানিকারক ও বিদেশি রেমিট্যান্স লাভজনক হলেও সার্বিকভাবে দেশের জন্য তা কোনো সুফল বয়ে আনবে না। বাংলাদেশ আমদানিনির্ভর দেশ। দেশের আমদানি-ব্যয়ের বেশির ভাগ অংশ পরিশোধ করা হয় মার্কিন


ডলারে। স্বাভাবিকভাবে এই আমদানি-ব্যয় মেটাতে বাড়তি টাকার চাপ বহন করতে হবে। তেমনটিই ঘটেছে। কালের কণ্ঠসহ জাতীয় দৈনিকগুলোতে প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, চলতি বছরের প্রথম চার মাসে আমদানি প্রায় ২১ শতাংশ বেড়ে ৮১১ কোটি ডলার ছাড়িয়ে গেছে। আমদানি-চাহিদা বাড়ায় ব্যাংকগুলোতে ডলারের চাহিদা বেড়ে গেছে। এ কারণে বেড়েছে ডলারের দাম। ডলারের দাম বাড়লে রপ্তানিকারক ও প্রবাসীদের খুশি হওয়ার কথা। কারণ রপ্তানি পণ্যের মূল্য সে ক্ষেত্রে বাড়তি পাওয়া যাবে। বাড়তি পাওয়া যাবে বিদেশ থেকে পাঠানো মুদ্রার বিনিময়। কিন্তু বাংলাদেশের মতো একটি আমদানিনির্ভর অর্থনীতির দেশে এর নেতিবাচক প্রভাবই বেশি। এতে আমদানি করা সব পণ্যের দামই বেশি পড়ে, ফলে ভোক্তা পর্যায়ে দাম বাড়ে। আমদানিনির্ভর রপ্তানি পণ্যেরও উৎপাদন খরচ বেড়ে যায়। দেশীয় বাজারমুখী বেশির ভাগ শিল্পপ্রতিষ্ঠানের কাঁচামালও আমদানিনির্ভর। স্বাভাবিকভাবেই টাকার দাম পড়ে গেলে এসব শিল্পপণ্যের দামও স্থানীয় বাজারে বেড়ে যাবে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ডলারের দাম বেড়ে যাওয়ায় দেশের অর্থনীতি বহুমাত্রিক চ্যালেঞ্জের মধ্যে পড়েছে। এত দিন অভ্যন্তরীণ ক্ষেত্রে কিছু চ্যালেঞ্জ ছিল; কিন্তু এখন এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে আন্তর্জাতিক পরিস্থিতি। সরকারকে এসব বাস্তবতা স্বীকার করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে বলে বিশেষজ্ঞদের অভিমত। ব্যয়-সংকোচনের পাশাপাশি অভ্যন্তরীণ চ্যালেঞ্জগুলো ভালো ব্যবস্থাপনায় আনতে এবং বিদেশ থেকে অর্থ আনতে সঠিক পদক্ষেপ নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। কারণ ডলারের এই বিনিময় হার বৃদ্ধিতে সরকারের ব্যাপারেও জনমনে একটা নেতিবাচক মনোভাব সৃষ্টি হতে পারে। একদিকে সরকার যখন পণ্যমূল্য নিয়ন্ত্রণের কথা বলছে, তখনই ডলারের বাজার চড়া। ডলারের দাম বেশি হলে বেশি মূল্যে পণ্য কেনার দায় পড়বে ক্রেতাদের ওপর। ডলারের বাড়তি দাম অব্যাহত থাকলে টাকার বড় ধরনের অবমূল্যায়ন হয়ে যেতে পারে_এমন আশঙ্কাও একেবারে অমূলক নয়। তেমনটি হলে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি কোনোভাবেই রোধ করা যাবে না। নিয়ন্ত্রণে থাকবে না মূল্যস্ফীতি। তা যদি হয়, তাহলে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুদ্রানীতিও কার্যকারিতা হারাবে। এর প্রভাব সরাসরি পড়বে বাজারে।
বিশ্বজুড়ে ডলারের দাম কমলেও বাংলাদেশে বাড়তির দিকে। বাংলাদেশের বাজারে ডলারের বিনিময় হারের এই বিপরীতমুখিতা কেন, সেটা খতিয়ে দেখতে হবে। আমদানি-ব্যয় মেটাতে গিয়ে বাড়তি চাপের পাশাপাশি বৈদেশিক মুদ্রা পাচারের কোনো ঘটনা ঘটেছে কি না, সেটাও একটি বড় প্রশ্ন। ডলারের দামের এই চাপ থেকে সাধারণ ভোক্তা শ্রেণীকে মুক্ত রাখতে হবে। এ জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে হবে।

No comments

Powered by Blogger.