ক্রিকেটাররা ফার্স্ট ক্লাসের প্রয়োজন বুঝছেন, কর্তারা...

কেউ প্রয়োজনটা আগে থেকে বুঝতে পেরে শেখে। আর কেউ সেটা শেখে ঠেকে! যেমন বাংলাদেশ। যাদের কাছে এমনিতে ফার্স্ট ক্লাস ক্রিকেট খুব গুরুত্বপূর্ণ নয়। কিন্তু টেস্ট ক্রিকেটের রহস্যময়তার জালে আটকে গিয়ে লজ্জাজনক হারের পর তাদের ঠিকই হুঁশ হয়। তখন কেবলই মনে হতে থাকে, 'আরে তাই তো, আমাদের ফার্স্ট ক্লাস ক্রিকেট কাঠামোটা ঠিক হওয়া জরুরি।'
বেঠিক কাঠামো নিয়ে অনেক কথা হয়। দেশের একমাত্র ফার্স্ট ক্লাস প্রতিযোগিতা জাতীয় ক্রিকেট লিগকে তারকাবহুল করে তোলার প্রতিশ্রুতিও শোনা যায়। কিন্তু যখন খেলার সময় এসে যায়, তখন দেখা যায় যে তারকা ক্রিকেটাররা নানা ছল-ছুতোয় খেলতে চাইছেন না। তা ছাড়া এ আসরে তাদের খেলার সুযোগও খুব সীমিত। এমন সময়ে এর সূচি করা হয় যখন জাতীয় দল আন্তর্জাতিক ক্রিকেট নিয়ে ব্যস্ত থাকে। এভাবেই দিন দিন ক্রিকেট প্রশাসন থেকে শুরু করে জাতীয় ক্রিকেটার, সবার কাছেই গুরুত্বহীন হয়ে পড়া আসরটির তাৎপর্য বোঝা যায় ব্যর্থতায়।
পাকিস্তানের কাছে চট্টগ্রাম টেস্টে ইনিংস ও ১৮৪ রানে হারার পরও তাই বুঝছেন ক্রিকেটাররা। তাঁদের কাছে সেটা আরো পরিষ্কার করে দিয়েছেন নাজিমউদ্দিনও। এ বাংলাদেশ দলে মোহাম্মদ আশরাফুলের পর সবচেয়ে বেশি ফার্স্ট ক্লাস ম্যাচ খেলা ক্রিকেটার এ ওপেনারই। ৮১টি ফার্স্ট ক্লাস ম্যাচ খেলার পর টেস্টে অভিষিক্ত চট্টগ্রামের তরুণই যে সিরিজের প্রথম টেস্টে দলের সেরা পারফরমার। প্রথম ইনিংসের ৩১ রানের পর দ্বিতীয় ইনিংসেও তাঁর ব্যাট থেকে এসেছে দলীয় সর্বোচ্চ ৭৮ রান। এ দুটো ইনিংস খেলার পথে টেস্ট ক্রিকেটের দাবির সঙ্গে মানানসই ধৈর্যও দেখা গেছে তাঁর ব্যাটিংয়ে। যে ব্যাটিংয়ে পরিষ্কার, মান নিয়ে হাজারটা প্রশ্ন থাকলেও জাতীয় লিগ খেলারও মূল্য যথেষ্ট।
মাস দেড়েক আগে একই মাঠে বল হাতে সে মূল্যটা বুঝিয়েছেন ইলিয়াস সানিও। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সিরিজের প্রথম টেস্টে ফার্স্ট ক্লাস ক্রিকেট অভিজ্ঞতার সুফল পেয়েছিলেন এ বাঁহাতি স্পিনারও। অভিষেকেই ক্যারিবীয়দের বিপক্ষে ৬ উইকেট পেয়েছিলেন তিনি। এবারও চট্টগ্রামে আরেক অভিষিক্ত নাজিম বোঝালেন ফার্স্ট ক্লাব অভিজ্ঞতা দলের সবার জন্যই খুব জরুরি, 'অবশ্যই আমার ফার্স্ট ক্লাসের অভিজ্ঞতা এ টেস্টে খুব কাজে দিয়েছে। এ অভিজ্ঞতা সবার জন্যই খুব দরকার।' জাতীয় লিগের ম্যাচ থেকে সরাসরি টেস্ট স্কোয়াডে এসে যোগ দেওয়া এ ওপেনার চলতি জাতীয় লিগে চট্টগ্রাম বিভাগীয় দলের হয়ে ৬ ম্যাচে করেছেন ৫৪০ রান।
অথচ বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) এ জাতীয় লিগের সূচিটা এমনভাবে করেছে যে জাতীয় দলের ক্রিকেটারদের একটার বেশি ম্যাচ খেলার সুযোগ ছিল না। ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও পাকিস্তানের বিপক্ষে দুটো হোম সিরিজের মাঝখানে সেই একটা ম্যাচও খেলেছেন মোটে চারজন। তাতে না খেলা অধিনায়ক মুশফিকুর রহিম পাকিস্তানের বিপক্ষে দুঃস্বপ্নের এক টেস্ট শেষে তাই জানাচ্ছেন এমন দাবি, 'পরবর্তী বছর থেকে বিসিবি যেন ফার্স্ট ক্লাস ক্রিকেটটা এমন সময়ে করে, যখন জাতীয় দলের খেলোয়াড়রা সবাই তাতে খেলতে পারে। তাহলে জাতীয় লিগের মানও বাড়বে।'
ক্রিকেট প্রশাসন যদি সে দাবির প্রতি আবারও উদাসীন থাকে, তাহলে এমনই হতে থাকবে। মুশফিকের কালকের কথায় তো সে আভাসই, 'সিরিজ শুরুর আগেই বলেছিলাম, ফার্স্ট ক্লাস ক্রিকেট কাঠামো ঠিক না করে টেস্ট ক্রিকেটে ধারাবাহিকভাবে সাফল্য পাওয়া খুব কঠিন। হয়তো দেখা যাবে, ১০টি টেস্টের মধ্যে আমরা একটিতে ভালো খেলছি, বাকি ৯টি খারাপ। ফার্স্ট ক্লাস ক্রিকেটে এক শ, দেড় শ, দুই শ রান না করার অভ্যাস থাকলে টেস্টে গিয়ে খু্ব সমস্যা হয়ে যায়। হয়তো এক-দুবার হয়ে যায়, তবে ধারাবাহিকতা ঠিক রাখা খুব কঠিন। তা ছাড়া আমাদের স্কিলও ওই পর্যায়ের না যে টেস্টে গিয়ে চাপ সামলাতে পারব। ফার্স্ট ক্লাসে মনোযোগ দিলে সেটির প্রতিফলন ঘটবে টেস্টে।'
ক্রিকেটাররা বুঝছেন, ক্রিকেট প্রশাসনও বুঝলেই হয়!

No comments

Powered by Blogger.