সবজিভাণ্ডার-খাসখালীর দুই কূলে সবুজের সমারোহ by জাহেদুল আলম

রাউজানের খাসখালী খালের দুই কূলজুড়ে সবুজের সমারোহ। বিশাল বিলের বিস্তীর্ণ সবুজ ক্ষেত দেখলেই মন জুড়িয়ে যায়। নানা শাকসবজিতে ভরে উঠেছে পৌরসভার ওপর দিয়ে প্রবহমান খাসখালী খালের দুই পারের চার কিলোমিটার এলাকা। বিপুল সবজিভাণ্ডার। রাউজান উপজেলার শস্যের অন্যতম জোগানদাতা এই খাসখালী খালের দুই কূলের জমি। প্রতিবছর এ ভাণ্ডার থেকে উপজেলার বিভিন্ন হাটবাজারে যায় যাবতীয় শাকসবজি।


গতবারের চেয়েও এবার বেশি চাষাবাদ করেছেন খাসখালীকূলের কৃষকরা। তাই রাউজান পৌর এলাকা ছাড়াও পার্শ্ববর্তী হাটহাজারী উপজেলার হাটবাজার খাসখালীকূলের সবজিতে ভরে উঠেছে।
সরেজমিনে খাসখালী তীরবর্তী ক্ষেত পরিদর্শন করতে গিয়ে কথা হয় স্থানীয় কৃষিজীবীদের সঙ্গে। তাঁরা জানান, রাউজন পৌরসভার শরীফপাড়া গ্রামের বাসিন্দারা খাসখালী খালের দুই পারে বিশাল বিলজুড়ে মৌসুমি ক্ষেত-খামার করে থাকে। গ্রামের ৯৬ শতাংশ মানুষ কৃষিনির্ভর। শীতকালীন সবজি চাষ করেই তাঁরা সারা বছরের আয়-রোজগার করে থাকেন। বর্ষাকালীন আমন ও বোরো চাষাবাদ করলেও বন্যা ও পাহাড়ি ঢলের কারণে ধানের আবাদে তেমন একটা লাভের মুখ দেখেন না তাঁরা। তাই শরীফপাড়ার কয়েক শ কৃষি পরিবারের হাজার হাজার মানুষ শীত মৌসুম এলেই নেমে পড়েন রাউজানের বিখ্যাত এ শস্যভাণ্ডারে চাষ করতে। এ ছাড়া ঢেউয়া হাজীপাড়া এবং পাশের অনেক এলাকার কয়েক শ পরিবারও জমি বর্গা নিয়ে খাসখালী কূলে সবজির চাষ করে।
পরিদর্শনকালে দেখা যায়, খাসখালীর দুই কূলে শত শত কৃষক মহাব্যস্ত নানা জাতের শাকসবজির আবাদে। ইতিমধ্যে অনেকে জমি আবাদ করে ফসল তুলে বাজারে বিক্রি করছেন। যাঁরা কিছুটা দেরিতে চারা বা বীজ রোপণ করেছেন, তাঁরা পরিচর্যা করছেন নতুন ফলনের আশায়।
স্থানীয় কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, ওই এলাকার জন্য বিখ্যাত এই খাসখালীকূলের শাকসবজির আলাদা স্বাদও আছে। অন্য এলাকার চেয়ে খাসখালীর সবজিই বেশি কেনে মানুষ।
কৃষকরা জানান, খাসখালীকূলে লালশাক, মুলাশাক, ফুলকপি, বাঁধাকপি, পেলন, কলই, মরিচ, ধনেপাতা, মুলা, বেগুন, আলু, মিষ্টিকদু, শিম, শালগম, লাউ, কলাসহ সব ধরনের মৌসুমি শাকসবজির চাষ হয়। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা (উদ্ভিদ সহকারী) কাজী আতিকুর রহমান বলেন, 'এবার খাসখালীকূলে গত বছরের চেয়েও বেশি চাষাবাদ এবং ভালো ফলন হয়েছে।'
কৃষি অফিসের তথ্যমতে, এখানে প্রায় ১০০ হেক্টর (৬২৫ কানি) জমিতে সবজি চাষ হয়েছে। তবে স্থানীয় অনেক কৃষক এ ব্যাপারে ভিন্ন মত পোষণ করেছেন। তাঁরা জানান, খাসখালী খালের রায় মুকুট দীঘি থেকে লেলেঙ্গারা পর্যন্ত (খালের দুই কূলের চার কিলোমিটার এলাকা) কমপক্ষে এক হাজার কানিতে এবার সবজির চাষ হয়েছে।
কৃষক মাহমুদুল্লাহ বলেন, 'আমি তিন কানি জমিতে নানা জাতের সবজির চাষ করেছি। ফলন পেতে আরো দুই সপ্তাহ লাগবে।'
শীরফপাড়ার কৃষক সেকান্দর বলেন, 'খাসখালীকূলের জমি আমাদের একমাত্র ভাতঘর, তাই প্রতিবছর চার-পাঁচ কানিতে সবজির চাষ করি।'
একই এলাকার কৃষক মোসলেম উদ্দিন বলেন, 'খাসখালীকূলে সবজির চাষাবাদে মূল প্রতিবন্ধকতা পানি। খালের ওপর এলাকাগুলোতে বড় বড় বাঁধ দিয়ে পানিপ্রবাহ বন্ধ করে দেওয়ায় আমরা নিচু এলাকার মানুষ পানি পাচ্ছি না। এ কারণে ফলনে ক্ষতি হতে পারে।'
কৃষক একরাম দুই কানি ও এসকান্দর এক কানি জমিতে বাঁধাকপি, ফুলকপি ও আলু চাষ করেছেন। তাঁদের এখন পানির জন্য চিন্তা। সময়মতো সেচ দিতে না পারলে ভালো ফলন পাওয়া যাবে না_এই ভেবে তাঁরা ব্যাকুল।
আজিজুল হক ছয় কানি ও আবুল কালাম এক কানি জমিতে বিভিন্ন জাতের সবজি চাষ করেছেন। তাঁরা বলেন, 'সবজি চাষে পানি সমস্যার পাশাপাশি কৃষি উপকরণ যেমন সার, কীটনাশকের দাম আগের চেয়ে বাড়তি থাকায় ভালো ফলন হলেও লাভ ভালো হচ্ছে না। চাষে যে খরচ পড়ছে, তাতে এই মৌসুমে সবজি বিক্রি করতে গিয়ে নায্যমূল্য পাচ্ছি না।'
স্থানীয় কৃষকরা অভিযোগ করেন, রাউজানে কোনো হিমাগার না থাকায় শস্য-ঐতিহ্যে ভরপুর এলাকা শরীফপাড়া, হাজীপাড়াসহ উপজেলার অন্যান্য এলাকার কৃষিজীবীরা উৎপাদিত ফসল সংরক্ষণ করতে পারছেন না।

No comments

Powered by Blogger.