মেদ কমাতে করণী

ক্লাস শেষে ফারজানা আজ তাড়াতাড়ি রুমে ফিরে এসেছে। এত দ্রুত সে কখনও ফিরে আসে না। কিন্তু ইদানীং বন্ধুরা তার স্বাস্থ্য নিয়ে টিপ্পনী কাটছে। এ জন্য বেশ কিছুদিন ধরেই মনোকষ্টে ভুগছে সে। এই অতিরিক্ত মেদ কমাতে সে কম চেষ্টা করেনি। কিন্তু কোনো লাভই হয়নি। তবে ঢাবি চতুর্থ বর্ষের ছাত্রী ইসরাত জাহান তৃষা ছয় মাসের চেষ্টায় নিজের ওজন নিয়ন্ত্রণে আনতে পেরেছেন বলে জানালেন। প্রয়োজন শুধু একটু বুঝেশুনে দৈনন্দিন খাবারের তালিকা


নির্বাচন করা ও কিছু কৌশল মেনে চলা। অতিরিক্ত মেদ কেবল রোগবালাইয়ের জন্ম দেয় না, পাশাপাশি স্বাভাবিকভাবে জীবনযাপনেও বাধা সৃষ্টি করে। এ কারণে তৈরি হয়েছে নানা যন্ত্রপাতি ও পদ্ধতি। তবে এই কৃত্রিম পদ্ধতি বেশ ব্যয়বহুল। রয়েছে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার ভয়ও। একটু মেনে_ বেছে চললে স্বাভাবিক নিয়মেই ঝরিয়ে ফেলতে পারেন বাড়তি মেদ। তেলসমৃদ্ধ খাবার কম খাওয়ার পাশাপাশি নিয়মিত কিছু নিয়ম মেনে চললে খুব সহজেই মেদ কমানো সম্ভব।
প্রথমেই নিজের প্রকৃত অবস্থাটা বুঝতে হবে। মানবদেহে সঞ্চিত মেদ খাবার থেকেই আসে। গবেষণায় দেখা গেছে, এক পাউন্ড মেদ জমা করতে প্রায় ৩ হাজার ৫০০ ক্যালরি শক্তির প্রয়োজন। বিআরএম পরীক্ষা করে খুব সহজেই নিজের অবস্থা বোঝা সম্ভব। কতটুকু মেদ আপনাকে কমাতে হবে, তার প্রক্রিয়াটা কী রকম হবে তা এই পরীক্ষা থেকেই জেনে নেওয়া সম্ভব।
প্রথম এক-দুই সপ্তাহ এ প্রক্রিয়ার গতি নিয়ে চিন্তিত হওয়ার কোনো প্রয়োজন নেই। এরপর তা স্বাভাবিকভাবেই চলতে থাকবে। একজন প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষের জন্য তা কখনোই ১ হাজার ৫০০ ক্যালরির নিচে এবং মহিলার জন্য ১ হাজার ২০০ ক্যালরির নিচে নামা ঠিক নয়। আবার মেদ যদি দ্রুত কমতে থাকে তাহলে অবশ্যই তা ধীর করে দিতে হবে। কারণ শরীরের উচ্চতা এবং স্বাভাবিক ওজনের জন্যও নির্দিষ্ট ক্যালরির প্রয়োজন।
এ সময় খাবারের দিকে বিশেষ নজর দিতে হবে। খাবারের মেন্যুতে কিছুতেই চর্বি জাতীয় কার্বোহাইড্রেট রাখা যাবে না। বরং আঁশযুক্ত সবজি, ফলমূল, মাছ রাখলে স্বাস্থ্যের জন্য উপকার হবে। সফট ড্রিংক এবং অন্যান্য পানীয়তে প্রচুর কার্বোহাইড্রেট বিদ্যমান। তাই এসব পানীয়ের পরিবর্তে সাদা পানি পান করাই উত্তম। প্রয়োজনে ভারি খাবার খাওয়ার আগে শুরুতেই কিছুটা পানি পান করে নেওয়া যেতে পারে, যেন তা ক্ষুধা কিছুমাত্রায় দূর করে এবং স্বল্প পরিমাণে খেতে সাহায্য করে।
মেদ কমানোর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এবং কার্যকর পন্থা হলো নিয়মিত ব্যায়াম। প্রতিদিন খেলাধুলা না করলেও একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত হাঁটাচলা, প্রতিদিন বিকেলে কম করে হলেও এক ঘণ্টা খেলাধুলার চেষ্টা করতে হবে। সম্ভব হলে নিয়মিত ব্যায়ামাগার বা জিমে যাওয়া এবং নির্দেশকের নির্দেশনা অনুসরণের সর্বোচ্চ চেষ্টা করতে হবে।
অনেকে এর সঙ্গে সাঁতারকেও প্রাধান্য দিয়ে থাকেন। দেখা গেছে, পানি বাতাস অপেক্ষা ৮০০ গুণ ঘন হওয়ায় সাঁতার কাটতে অধিক ক্যালরি ক্ষয় হয়। এর মাত্রা স্বাভাবিকভাবে প্রতি ঘণ্টায় ৫০০ ক্যালরি, যা ক্ষেত্র বিশেষে ৭০০ ক্যালরিও ছুঁয়ে যেতে পারে। ড. ইউসুফ চৌধুরী খান সময় স্বল্পতার ক্ষেত্রে সাঁতারকেই মেদ কমানোর জন্য উত্তম বলে মনে করেন। তিনি জানান, সাঁতারের মাধ্যমে মেদ কমানোই সবচেয়ে ভালো। এতে আহত হওয়া কিংবা বেশি ক্লান্ত হওয়ার আশঙ্কা নেই।
মেডিটেশনও মেদ কমাতে সাহায্য করে। মেডিটেশন মানুষের মনে শান্তি নিয়ে আসতে সাহায্য করে এবং তাকে নিজের কাজের প্রতি একাগ্র রাখতে সহায়তা করে। আর এ কথা বাঞ্ছনীয় যে, মেদ কমানোর ক্ষেত্রে নিজের চেষ্টার সঙ্গে সঙ্গে একাগ্রতা থাকাও একান্ত জরুরি। নতুবা সব কষ্ট মাঠেই মারা যাবে।

লেখা : কামরুল হাসান য়

No comments

Powered by Blogger.