দেশের অর্থনীতি আজ ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে-বাটেক্সপোর সমাপনী অনুষ্ঠানে খালেদা জিয়া

দেশের অর্থনৈতিক সার্বভৌমত্ব বিপন্ন হতে চলেছে বলে মন্তব্য করেছেন বিরোধীদলীয় নেতা ও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। তিনি বলেছেন, নানামুখী সংকটের চক্রে বাঁধা পড়েছে দেশ। শিল্পের মালিকানা চলে যাচ্ছে ভিনদেশিদের হাতে। সরকার অর্থনীতিকে 'ফোকলা' করে ফেলেছে। খালেদা জিয়া বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতিকে 'অশনিসংকেত' আখ্যা দিয়ে এ বিষয়ে দেশের শিল্প-কারখানা মালিকদের সতর্ক থাকার আহ্বান জানান।


একই সঙ্গে মুক্তিযুদ্ধের আবেগ ও স্মৃতিকে রাজনৈতিক বাণিজ্যে পরিণত না করার আহ্বান জানিয়ে একটি শোষণ-বঞ্চনাহীন, সুখী-সমৃদ্ধ এবং আত্মনির্ভরশীল মর্যাদাবান জাতি গঠনের ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন তিনি।
তৈরি পোশাক খাতের সবচেয়ে বড় প্রদর্শনী বাংলাদেশ অ্যাপারেল অ্যান্ড টেক্সটাইল
এক্সপোজিশনের (বাটেক্সপো-২০১১) সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় গতকাল সোমবার এসব কথা বলেন তিনি। রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আয়োজিত তিন দিনের প্রদর্শনীর সমাপনী অনুষ্ঠানে খালেদা জিয়া বলেন, সরকার ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে দেশের অর্থনীতিকে ফোকলা করে ফেলেছে। বিনিয়োগ নেই। শ্রমিক বেকার। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমছে। দেশের অর্থনীতি আজ ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। তারপরও সরকার প্রতিবেশীদের সুযোগ-সুবিধা করে দেওয়ার কাজে ব্যস্ত। এসব কারণে জাতির ইতিহাসে এক ক্রান্তিকাল উপনীত হয়েছে।
বিশ্বব্যাপী দেশের তৈরি পোশাকের গুণগত মান প্রদর্শন ও ক্রেতা আকর্ষণে এ প্রদর্শনীর আয়োজন করেছে পোশাক প্রস্তুত ও রফতানিকারক ব্যবসায়ীদের সংগঠন বিজিএমইএ। সংগঠনের সভাপতি সফিউল ইসলাম মহিউদ্দীনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় অন্যান্যের মধ্যে বক্তৃতা করেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, সাবেক কৃষিমন্ত্রী এম কে আনোয়ার, সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ড. ওসমান ফারুক, বিজিএমইএ ১ম ও ২য় সহ-সভাপতি নাসির উদ্দীন চৌধুরী, সিদ্দিকুর রহমান প্রমুখ।
অনুষ্ঠানে ব্যবসায়ীদের পক্ষে বিজিএমইএ সভাপতি তার বক্তৃতায় বিরোধীদলীয় নেতাকে সংসদে গিয়ে শিল্পের পক্ষে কথা বলার অনুরোধ জানান। এছাড়া শিল্পের উৎপাদন ব্যাহত করে এমন কোনো কঠোর কর্মসূচি না দেওয়ার জন্য বিরোধীদলীয় নেতার প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
খালেদা জিয়া বলেন, আমরা উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ্য করছি পোশাক কারখানায় প্রায়ই অস্থিরতা ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির প্রয়াস চলে। গ্যাস ও বিদ্যুৎ সংকটে এমনিতেই এ শিল্প সংকটের মধ্যে রয়েছে। এর মধ্যে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হলে এ খাতকে আর ধরে রাখা যাবে না। জাতীয় অর্থনৈতিক স্বার্থে এ শিল্পে সৌহার্দ্য ও উৎপাদনমুখী কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করার দায়িত্ব সরকারকেই নিতে হবে।
তিনি পোশাক শ্রমিকদের জন্য রেশন কার্যক্রম বন্ধ থাকার বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে অবিলম্বে বছরব্যাপী রেশন চালু করার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান। চালের সঙ্গে আটা, লবণ এবং তেলের মতো দরকারি নিত্যপণ্য অন্তর্ভুক্ত করার দাবি জানান তিনি। খালেদা জিয়া বলেন, শ্রমিকরা উৎপাদনমুখী শিল্পের মূল চালিকাশক্তি। শ্রমিক ভালো থাকলে কারখানা ভালো থাকবে। এ কারণে শ্রমিকদের জন্য আরও কল্যাণমুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করার জন্য তিনি কারখানা মালিকদের প্রতি আহ্বান জানান।
তৈরি পোশাক খাতের নিরবচ্ছিন্ন উৎপাদনের স্বার্থে চট্টগ্রাম বন্দরের চার্জ কমানো, ব্যাংক চার্জ, সুদের হার, গ্যাস ও বিদ্যুৎ সমস্যার সমাধান করা, শিল্পের স্বার্থে চলতি মূলধনপ্রবাহ অব্যাহত রাখা, বিদেশি ক্রেতাদের চাহিদা অনুযায়ী কমপ্লায়েন্ট কারখানার স্বার্থে গার্মেন্ট পল্লী গড়ে তোলা এবং রফতানি উন্নয়ন তহবিল বৃদ্ধিসহ ১১ দফা দাবি তুলে ধরেন বিএনপি চেয়ারপারসন। এছাড়া ক্যাপটিভ পাওয়ার প্ল্যান্ট স্থাপন, যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার পেতে লবিং শুরু করা এবং বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশি মিশনগুলোকে আরও সক্রিয় করাসহ এ খাতে নীতি-সহায়তা দিতেও সরকারের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
সরকারে থাকার সময় দেশের তৈরি পোশাক খাতের উন্নয়নে তার সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগের কথা উল্লেখ করে খালেদা জিয়া বলেন, আমলাতান্ত্রিক জটিলতা এড়াতে ইউটিলাইজেশন ডিক্লারেশন (ইউডি) এবং ইউটিলাইজেশন পারমিশনের (ইউপি) দায়িত্ব বিজিএমইএ হস্তান্তর, বাজেটে এ খাতের জন্য বিশেষ বরাদ্দসহ এ খাতের উন্নয়নে নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা তুলে ধরেন।
উন্মুক্ত বিশ্ববাজারের অবাধ প্রতিযোগিতার কথা বিবেচনা করে পোশাক শিল্পের জন্য অনুকূল নীতি-সহায়তা নিয়ে সরকারকে এগিয়ে আসার আহ্বানও জানান বিরোধীদলীয় নেতা। পাশাপাশি মালিকদের উদ্দেশে বলেন, 'আমাদের পক্ষ থেকে তৈরি পোশাক শিল্পের জন্য সর্বপ্রকার সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে।'
সরকারের নীতির সমালোচনা করে সাবেক প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকার নিজেকে শিল্পবান্ধব দাবি করলেও বাস্তবে সরকারের কর্মকা ে তা প্রতিফলিত হচ্ছে না।

No comments

Powered by Blogger.