অপেক্ষা শেষ হতে বেশিক্ষণ লাগেনি-বাংলাদেশ ১৩৫ ও ২৭৫ -পাকিস্তান ১ম ইনিংস ৫৯৪/৫ ডিক্লেয়ার্ড -ফল : পাকিস্তান ইনিংস ও ১৮৪ রানে জয়ী by মাসুদ পারভেজ

প্রশ্নের উত্তরটাই আগে জানিয়ে দেওয়া যাক। যাবতীয় আকর্ষণ-বিকর্ষণ ভুলিয়ে চট্টগ্রাম টেস্টের চতুর্থ দিন শুরুর সময় এ কৌতূহলই যে শুধু অবশিষ্ট রাখতে পেরেছিল বাংলাদেশ! শুরুর পর তারা টিকল প্রায় তিন ঘণ্টা। আরো নির্দিষ্ট করে বললে ঠিক ২ ঘণ্টা ৫২ মিনিট। ব্যস, তাতেই পুরনো আর চেনা চিত্রনাট্য অনুযায়ী মঞ্চস্থ হলো টেস্ট ক্রিকেটে ৩৫তম ইনিংস হারের লজ্জা।


মঞ্চায়নের দায়িত্বে থাকা ব্যাটসম্যানরা যেখানে এর আগে সাজানো বাগানই মাড়িয়েছেন বহুবার, সেখানে তাঁদের কাছে লণ্ডভণ্ড বাগানে ফুল ফোটানোর আশায় ঝুঁকি থাকেই। কাজেই কেউ তেমন আশায় বুক বেঁধে থাকলে সেটি নিজ দায়িত্বে বেঁধেছেন! আর দিনের শুরু থেকেই যেভাবে অল্পের জন্য বারবার প্রাণে বেঁচে যাচ্ছিলেন এ টেস্টে বাংলাদেশের সেরা ব্যাটসম্যান নাজিমউদ্দিন, তাতে প্রাণনাশটাও কেবলই সময়ের ব্যাপার হয়ে উঠেছিল।
তার ওপর দিনের প্রথম ঘণ্টায়ই সাকিব আল হাসানের বিদায়ে বাংলাদেশের জন্য আরেকটি সাড়ে তিন দিনের টেস্ট অবধারিতই হয়ে গিয়েছিল। সেই সঙ্গে পাকিস্তানের বোলার বিশেষ করে স্পিনারদের দুর্বোধ্য ঘূর্ণিও তো বিপাকে ফেলেছে স্বাগতিক দলের কাউকে কাউকে। কেবলই হারের ব্যবধান যথাসাধ্য কমাতে নামা সহ-অধিনায়ক মাহমুদ উল্লাহর কথাই ধরুন। অফস্পিনার সাঈদ আজমলকে সামনে পা বাড়িয়ে ডিফেন্স করতে গিয়ে দেখলেন দুসরায় বল তাঁর অফস্টাম্প ছুঁয়ে গেছে।
এর আগে সকালে বাঁহাতি স্পিনার আবদুর রেহমানের 'ফিফটি' দিয়েই পাকিস্তানের জয়ের দিকে দ্রুত পদক্ষেপে এগিয়ে যাওয়ার শুরু। তবে এ 'ফিফটি' বোলিংয়ের। তাঁর বল অফের দিকে সরে এসে ব্যাকফুটে খেলতে গিয়ে বিপদ ডেকে আনলেন মাত্রই নবম টেস্ট ফিফটিতে পেঁৗছানো সাকিব (৫১)। ব্যাটে-বলে না হওয়ায় লাগল পায়ে এবং সমবেত আবেদনে আঙুল তুলে দিতেও দ্বিধা করলেন না আম্পায়ার এবং মাত্র ১১ টেস্টে বাংলাদেশ দলের সাবেক অধিনায়ক হয়ে গেলেন রেহমানের ৫০তম টেস্ট শিকার। পাকিস্তানের হয়ে দ্রুততম এ অর্জন, তবে যৌথভাবে। আজমলও যে সমানসংখ্যক টেস্টেই এ মাইলফলকে পেঁৗছেছিলেন।
সাকিবের সাজঘরে যাওয়ার আগে থেকেই নাজিমেরও নাভিশ্বাস উঠিয়ে ছাড়ছিলেন পাকিস্তানের বোলাররা। ম্যাচের শেষে অভিষেকেই সেঞ্চুরি মিস করার জন্য তিনি একটুও আফসোস করলেন না বোধ হয় এ জন্যই যে, ভাগ্য সহায় না হলে অনেক আগেই আউট হয়ে যেতে পারতেন! আগের দিন অন্য ব্যাটসম্যানদের সামনে ধৈর্যের উদাহরণ হয়ে ওঠা এ ওপেনার এদিন ১৪৮ বলে প্রথম টেস্ট ফিফটি করার পর থেকেই ধুঁকতে থাকলেন। একাধিকবার বল তাঁর ব্যাটের কানা নিয়ে গেল। রেহমানের বলে একবার প্লেড অন হতে হতেও হননি। ৫১ রানে আজমলের বলে উইকেটরক্ষক আদনান আকমল ক্যাচ ধরতে পারলেন না। তাঁর গায়ে লেগে যাওয়া বল প্রথম স্লিপে ক্যাচ বানাতে পারেননি ম্যান অব দ্য ম্যাচ ইউনিস খানও। একই বোলারের বলে আদনান ৫৭ রানে আরেকবার জীবন দিয়েছেন নাজিমকে।
হিমশিম খেতে থাকা নাজিম একপর্যায়ে আক্রমণাত্মক হতে শুরু করলেন। সাকিবের মতোই রেহমানকে ব্যাকফুটে খেলতে গিয়ে লেগবিফোরের ফাঁদে পড়া অধিনায়ক মুশফিকুর রহিমের (৪৯) চোখে যা খুবই সঠিক! পাকিস্তানিরা বেশির ভাগ সময়ই আক্রমণাত্মক ফিল্ডিং সাজিয়ে এসেছে এবং এ অবস্থায় খুব বেশিক্ষণ নাকি রক্ষণ করে টেকাও যায় না! কাজেই তখন আক্রমণে গেলে রান পাওয়া যায়! ক্লোজ ইন ফিল্ডার থাকলে আক্রমণ করে খেলাকে যাঁরা সর্বোত্তম বলে ভাবেন, সেই টেস্ট দলের ব্যাটসম্যানদের সামর্থ্য নিয়ে প্রশ্ন ওঠাও বিচিত্র নয়। টিকতে না পেরে আক্রমণে গিয়ে রেহমানকে এঙ্ট্রা কাভার ও আজমলকে মিড উইকেটের ওপর দিয়ে দুটো ছক্কা হাঁকালেন নাজিম। কিন্তু এভাবে খেললেই তো ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি থাকে। রেহমানকে উইকেট ছেড়ে আবার সীমানার বাইরে আছড়ে ফেলতে গিয়ে তাই গড়বড়ও হলো। তাতেই মিড অনে আজমলের ক্যাচ হয়ে ৭৮ রানে থামলেন এ টেস্টে অন্যদের ব্যর্থতায় প্রায় একাকী ঔজ্জ্বল্য ছড়াতে থাকা নাজিম।
দ্বিতীয় ইনিংসে তবু সঙ্গী হিসেবে পেয়েছিলেন সাকিবকে। প্রথম সেশনে দুজনের বিদায়ে জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে অনুচ্চারে টেস্ট শেষের কাউন্টডাউনই উচ্চকিত হয়েছে আরো!

No comments

Powered by Blogger.