মানব পাচারের সর্বোচ্চ সাজা মৃত্যুদণ্ড

মানব পাচারের সর্বোচ্চ সাজা মৃত্যুদণ্ড ও পাঁচ লাখ টাকা জরিমানা। এসব বিধান রেখে মানব পাচার প্রতিরোধ ও দমন আইন-২০১১-এর খসড়া অনুমোদন করেছে মন্ত্রিসভা। গতকাল সোমবার সচিবালয়ে মন্ত্রিসভা বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। একই বৈঠকে আগামী বছরের প্রথম অধিবেশনের জন্য তৈরি করা রাষ্ট্রপতির ভাষণের খসড়াও অনুমোদন করা হয়েছে। বৈঠক শেষে প্রধানমন্ত্রীর প্রেসসচিব আবুল কালাম আজাদ সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানান।


স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, এর আগে গত ১১ জুলাই মন্ত্রিসভা মানব পাচার প্রতিরোধ ও দমন আইনটির নীতিগত অনুমোদন দেয়। মানব পাচারের ঘটনা দীর্ঘদিন ধরে ঘটলেও এত দিন এসব রোধে কার্যকর কোনো আইন ছিল না। অথচ এ দেশ থেকে মানব পাচারের ঘটনা ঘটেছে হরহামেশাই। বাংলাদেশ থেকে মহিলা ও শিশু পাচার হয়। মহিলাদের বিদেশে পাচার করে নানা অনৈতিক কাজে বাধ্য করা হয়। প্রস্তাবিত আইনে মানব পাচার করলে তাকে মৃত্যুদণ্ড, যাবজ্জীবন কারাদণ্ড অথবা পাঁচ লাখ টাকা জরিমানাসহ বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেওয়া যাবে। আর কোনো ব্যক্তি মানব পাচারে উৎসাহ বা নিজের সম্পত্তি ব্যবহার করার সুযোগ দিলে তাকেও এ আইনের আওতায় এনে বিচার করা যাবে। এ ছাড়া কোনো নবজাতক চুরি করে বিদেশে পাচার, প্রতারণা বা জবরদস্তির মাধ্যমে বিদেশে পাচার করে মহিলাদের পতিতাবৃত্তিতে বাধ্য করা হলে তাও মানব পাচার আইনের আওতায় আনা যাবে। মন্ত্রিসভায় খসড়াটি চূড়ান্ত অনুমোদন হওয়ায় এটি এখন সংসদে উপস্থাপন করা হবে। সেখানে অনুমোদন পেলেই তা আইন হিসেবে কার্যকর হবে।
মানব পাচার প্রতিরোধ ও দমন আইন-২০১১-এর খসড়া অনুমোদন প্রসঙ্গে আবুল কালাম আজাদ বলেন, অন্যান্য অপরাধের মতো দেশে-বিদেশে মানব পাচারের ঘটনাও ঘটছে। মানব পাচার দমনের উদ্যোগ আছে, তবে এর জন্য আইনের প্রয়োজন। এ কারণেই নতুন আইন করা হলো।
প্রেসসচিব বলেন, সংবিধান অনুযায়ী জাতীয় সংসদে বছরের প্রথম অধিবেশনে রাষ্ট্রপতির ভাষণ দেওয়ার বিধান রয়েছে। রাষ্ট্রপতির এ ভাষণ হয়ে থাকে সরকারের কর্মকাণ্ডের ভিত্তিতে। তিনি জানান, বৈঠকে আলোচনার ভিত্তিতে রাষ্ট্রপতির ভাষণের খসড়া অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
মন্ত্রিসভার এ বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্ট আইন-২০১১-এর খসড়ার চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়। স্কুল-কলেজের ছাত্রছাত্রীদের বৃত্তি দেওয়ার উদ্দেশ্যে এ ট্রাস্ট গঠনের উদ্যোগ নেওয়া হয়। এ জন্য পরিকল্পনামন্ত্রীকে প্রধান করে ১৪ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছিল। কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে এ আইন করা হয়েছে। বৈঠকে বাংলাদেশের নাগরিকত্ব আইন-২০১১-এর খসড়ার নীতিগত অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। মন্ত্রিসভা 'খসড়া শিপ ব্রেকিং অ্যান্ড শিপ রিসাইক্লিং বিধিমালা' প্রণয়নেরও নীতিগত অনুমোদন দেয়। এ ছাড়া বৈঠকে মুক্তিযুদ্ধে অবিস্মরণীয় অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ বিশ্বের বরেণ্য রাষ্ট্রনায়ক, বিভিন্ন দেশের রাজনীতিবিদ, দার্শনিক, শিল্পী, সাহিত্যিক, বুদ্ধিজীবী, বিশিষ্ট নাগরিক ও সংগঠনকে সম্মাননা দেওয়ার জন্য ১২৪ জনের তালিকা অনুমোদন করা হয়েছে বলে আবুল কালাম আজাদ জানান।
এ প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ক্যাপ্টেন (অব.) এ বি তাজুল ইসলামের কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, আগামী বছর ১০ জানুয়ারি থেকে ২৬ মার্চের মধ্যে বিদেশিদের এ সম্মাননা দেওয়া হবে। তারিখ এখনো নির্ধারণ করা হয়নি। পরে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করে তারিখ নির্ধারণ করা হবে। সম্মাননার ভেন্যু নির্ধারণ করা হতে পারে জাতীয় সংসদের দক্ষিণ ও উত্তর প্লাজা অথবা বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলনকেন্দ্র। তিনি বলেন, যাঁরা আমাদের মুক্তিযুদ্ধে অবদান রেখে বিজয়কে প্রভাবিত ও ত্বরান্বিত করেছেন তাঁদের মধ্যে থেকে একটি তালিকা তৈরি করা হয়েছে। তিনি জানান, আরো অনেককেই সম্মাননা দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। এ সম্মান প্রতিবছরই দেওয়া হবে।
জানা গেছে, বৈঠকে সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত তাঁকে মন্ত্রী করার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানান। আওয়ামী লীগের এ প্রবীণ নেতা ও অভিজ্ঞ পার্লামেন্টারিয়ান তাঁর দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে প্রথমবারের মতো মন্ত্রিত্ব পাওয়ায় অনেকটা আবেগাপ্লুত কণ্ঠে প্রধানমন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।

No comments

Powered by Blogger.