জনমুখী প্রশাসন বনাম দলমুখী প্রশাসন- বহমান এ নষ্ট সময়ে by গোলাপ মুনীর

একটি দেশে কোন ধরনের সরকার সবার কাম্য? জনমুখী সরকার না দলমুখী সরকার, এর বিতর্কহীন উত্তর জনমুখী সরকার। কিন্তু বাস্তবে বিশ্বের খুব দেশেই এই জনমুখী তথা জনকল্যাণকামী সরকারের অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায়।
বরং এর বিপরীতে বেশির ভাগ দেশের সরকারই দলমুখী। অর্থাৎ এসব সরকার দলীয় লোকজন ও দলের সমর্থক মোসাহেবদের লালনপালনেই সর্বাধিক আগ্রহী। সেই সাথে এ ধরনের সরকার সব সময় ব্যস্তসমস্ত বিরোধী প্রতিপক্ষ দমনে। এই বিরোধী মতাবলম্বীরা সরকারের ভেতরে কিংবা বাইরে যেখানেই থাকুক, এ ধরনের সরকারের দমন-পীড়নের শিকারে পরিণত হয় বিরোধীদলীয় নেতাকর্মী ও সমর্থক এবং ভিন্ন মতাবলম্বী সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী। এ ক্ষেত্রে সরকারি দলের নেতাকর্মীরা যেমন লুটপাটের অবাধ সুযোগ পান, তেমনি সরকার সমর্থক সরকারি কর্মচারী-কর্মকর্তারা লাভ করেন নানা অবৈধ সুযোগ, পদ-পদোন্নতি। অন্যরা হন ন্যায্য পাওনা থেকে বঞ্চিত। তা-ই যদি সত্যি হয়, বলতেই হবে আমাদের দেশে এই সময়ে জনমুখী সরকার নয়, বরং দলমুখী একটি সরকার বিদ্যমান। এর বিপরীত কিছু প্রমাণ করার কোনো সুযোগ এ সরকারের হাতে নেই। কারণ বিগত চার বছর এ সরকারের দলবাজির নানা ক্রিয়া-প্রক্রিয়া দেশবাসী দেখেছে। এর তীব্রতা ও তাপ-উত্তাপ কত দূর বিস্তৃত হয়েছে, তা-ও দেখতে পেয়েছে। এ সরকারের আমলে দলবাজি, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, দখলবাজি ও এমনি ধরনের ক্রিয়া-প্রক্রিয়া দেখে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা বিচারপতি হাবিবুর রহমান দুঃখ করে বলেছেন, দেশটা এখন চলে গেছে বাজিকরদের হাতে।

জনমুখী প্রশাসনের বদলে দলমুখী প্রশাসন গড়ে তোলার কর্মকাণ্ড অব্যাহত রেখে এ সরকার দেশ-জাতির অভাবনীয় ক্ষতি করে চলেছে দুইভাবে। প্রথমত, এর ফলে জাতীয় ঐক্য গড়ে উঠছে না, বিভাজন আরো বাড়ছে। সেই সাথে জাতি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে অর্থনৈতিকভাবে। এ ধরনের হাজারো উদাহরণের মধ্য থেকে বর্তমানে একটি মাত্র উদাহরণ টানাই এ সত্যের প্রতিফলনের জন্য যথেষ্ট হবে মনে হয়। সরকারদলীয় দৃষ্টিকোণ থেকে শত শত কর্মকর্তাকে ওএসডি করে রাখা হয়েছে। তারা কাজ না করেও বেতন নিচ্ছেন। তাদের পেছনে সরকারের বছরে ব্যয় হচ্ছে ১০০ কোটি টাকা। ওএসডি করে রাখা কর্মকর্তারা কাজ না করেও বেতনভাতার পূর্ণ সুযোগ পেয়ে থাকেন। এমনকি তারা অফিসের গাড়ি ব্যবহারের সুযোগও পান। একটি দৈনিক পত্রিকা জানিয়েছে, ২০০৮ সালের ১ জানুয়ারি থেকে গত বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বিভিন্ন সময়ে করা ওএসডির সংখ্যা এক হাজার ৯৮৯ জন। এর মধ্যে ১৩ জন সচিব, ১৬৬ জন অতিরিক্ত সচিব, ৪৯০ জন যুগ্মসচিব, ৭৯০ জন উপসচিব, ৪৯০ জন জ্যেষ্ঠ সহকারী সচিব ও ৭০ জন সহকারী সচিব। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে অ্যাটর্নি জেনারেলের দফতরে পাঠানো প্রতিবেদনে এসব তথ্য উল্লেখ করা হয়েছে। বর্তমানে দেশে ৪৬০ জন কর্মকর্তা ওএসডি হিসেবে রয়েছেন। তাদের মধ্যে একজন সচিব, ৪১ জন অতিরিক্ত সচিব, ১৫৫ জন যুগ্মসচিব, ১২৪ জন উপসচিব, ৩৬ জন জ্যেষ্ঠ বা সহকারী সচিব এবং বিভিন্ন পদমর্যাদার ১০০ জন কর্মকর্তা শিক্ষাছুটিতে রয়েছেন। এর বেশির ভাগকেই এক বছরেরও বেশি সময় ধরে ওএসডি করে রাখা হয়েছে।

সরকারকে বেতনভাতা বাবদ একজন সচিবের পেছনে মাসে দেড় লাখ টাকা, অতিরিক্ত সচিবের জন্য সোয়া লাখ টাকা, যুগ্মসচিবের জন্য এক লাখ, উপসচিবের জন্য ৫০ হাজার টাকা, জ্যেষ্ঠ সহকারী সচিব ও সহকারী সচিবের জন্য ২৫ হাজার টাকা খরচ করতে হয়। এ হিসাবে বর্তমানে সরকারকে ওএসডি কর্মকর্তাদের পেছনে মাসে ১০০ কোটি টাকা খরচ করতে হয়। এ জন্য তাদের অফিসে যেতে হয় না, কোনো কাজ করতে হয় না। সরকারি কর্মকর্তাদের ওএসডি করা হয় প্রধানত দু’টি কারণে। তাদের পদোন্নতি দেয়া হলেও রাজনৈতিক কারণে কোনো পদ দেয়া হয় না।

এখানেই শেষ নয়। বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ৫০৩ জন কর্মকর্তাকে পদোন্নতি দেয়া হয়েছে উপসচিব, যুগ্মসচিব ও অতিরিক্ত সচিব পদে এ সময়ে এক হাজার কর্মকর্তার জ্যেষ্ঠতা লঙ্ঘন করে। তারা এখন তাদের জুনিয়র কর্মকর্তাদের ‘স্যার’ বলে সম্বোধন করতে বিব্রত বোধ করেন। কারণ এক সময় এসব পদোন্নতিবঞ্চিতকে তারা স্যার বলে সম্বোধন করতেন। রাজনৈতিক কারণে তারা আজ ন্যায্য পদোন্নতি থেকে বঞ্চিত। এর ফলে পদোন্নতিবঞ্চিতদের মধ্যে স্বাভাবিকভাবেই এক ধরনের ক্ষোভের জন্ম নিয়েছে। তা ছাড়া এরই মধ্যে গভর্নমেন্ট এমপ্লয়িজ রুলের খসড়া বিলে বিধান করা হয়েছে আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে সরাসরি কর্মকর্তা নিয়োগের। গত বছর নভেম্বরে গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে জানা যায়, সরকারি কর্মকর্তারা এর বিরোধিতা করেন। কিন্তু নীতিনির্ধারক মহল এ বিধান চালুর পক্ষে। এ ক্ষেত্রে সরকারি কর্মকর্তাদের বিরোধিতা যথার্থ অর্থেই যৌক্তিক। তাদের বক্তব্য হচ্ছে, তখন প্রশাসনিক কর্মকর্তা আউটসোর্সিং করার সময় দলীয় লোকদের মধ্য থেকেই কার্যত নিয়োগ দেয়া হবে। এতে প্রশাসন যেমনি দলীয়করণ দোষে দুষ্ট হবে, তেমনি প্রশাসন দিন দিন মেধাশূন্য হয়ে পড়বে। আর এসব কারণে সুশাসন পুরোপুরি ভেস্তে যাবে। দলীয়করণের আওতায় নিয়োগ কী ধরনের বিপদ যে ডেকে আনে, তা আমরা অতিসম্প্রতি লক্ষ করছি সরকারি খাতের ব্যাংকগুলোর পরিচালনা পর্ষদে রাজনৈতিক বিবেচনায় পরিচালক নিয়োগের ঘটনা থেকে। এর ফলে সরকারি খাতের ব্যাংকগুলোতে চলছে এক ধরনের লুটপাট।

সে যা-ই হোক, রাজনৈতিক বিবেচনায় এভাবে বছরের পর বছর ধরে সরকারি কর্মকর্তাদের কর্মহীন করে ওএসডি করে রাখা ও তাদের মাসে মাসে বেতনভাতা জোগানো কখনোই দেশের জন্য কল্যাণবহ হতে পারে না। জনপ্রশাসনে ওএসডি করা প্রসঙ্গে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা আকবর আলি খানের মতেÑ ওএসডি করার কুফল দু’টি। এক, যাদের ওএসডি করা হয় তাদের মনোবল ভেঙে যায়। অন্য কর্মকর্তারাও তটস্থ থাকেন, তাদের ক্ষেত্রেও এমন ঘটতে পারে। দুই, ওএসডি থাকার সময় কাজ ছাড়াই তাদের বেতন দেয়া হয়। এতে অর্থের অপচয় হয়।

বিষয়টি দেশপ্রেমিক বিবেকবান মানুষকে ভাবিত করে বৈকি। গত বছরের ৩১ মে ওএসডির বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে এবং এ ক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট নীতিমালা প্রণয়নের নির্দেশনা চেয়ে জনস্বার্থে সাবেক সচিব এম আসাফউদ্দৌলা একটি রিট আবেদন করেন। প্রাথমিক শুনানির পর গত বছরের ৪ জুন হাইকোর্টের একটি দ্বৈত বেঞ্চ রুল জারি করার পাশাপাশি অন্তর্বর্তীকালীন নির্দেশ দেন। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদন মতে, অনেক কর্মকর্তাকে তিন থেকে পাঁচ বছর ধরে ওএসডি রাখা হয়েছে। তাদের পেছনে বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয় থেকে বোঝা যায়, কী জনশক্তি ও রাষ্ট্রীয় অর্থ এ খাতে অপচয় হচ্ছে।

১৯৯১ সালের ৩ অক্টোবর তৎকালীন সংস্থাপন মন্ত্রণালয়ের জারি করা এক প্রজ্ঞাপনে কী কী কারণে ওএসডি রাখা যায়, সে বিষয়ে এবং সময়সীমা সম্পর্কে বলা হয়েছে। সে অনুযায়ী অনির্দিষ্টকালের জন্য ওএসডি রাখা বেআইনি। তার পরও বর্তমান সরকার এখন পর্যন্ত অনেক কর্মকর্তাকে রাজনৈতিক বিবেচনায় কোনো কারণ না দেখিয়েই ওএসডি করে রেখেছে। সংবিধানের ২০(২) অনুচ্ছেদ অনুসারে অনুপার্জিত আয় কোনো ব্যক্তি ব্যবহার করতে পারবে না। অথচ যাদের ওএসডি করে রাখা হয়েছে, তারা কোনো দায়িত্ব পালন না করেই সরকারি বেতন ভোগ করছেন। হাইকোর্টের রুলে নির্ধারিত কারণ ও সময়ের বাইরে কোনো দায়িত্ব ছাড়া জনপ্রশাসনের কর্মকর্তাদের ওএসডি করে রাখা ও জনগণের করের টাকায় বেতন দেয়া কেন অসাংবিধানিক ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়েছে। এ ছাড়া ওএসডি করার ব্যাপারে কেন কোনো সুনির্দিষ্ট নীতিমালা করা হবে না, তা-ও রুলে জানতে চাওয়া হয়েছে।

যেকোনো বিবেকবান মানুষই বাস্তবতাদৃষ্টে স্বীকার করবেন, জনস্বার্থে কিংবা জনপ্রশাসনের স্বার্থে এই ব্যাপকভাবে ওএসডি করার প্রক্রিয়া চলছে না; বরং তা চলছে সম্পূর্ণ সঙ্কীর্ণ দলীয় স্বার্থতাড়িত অসৎ চিন্তাভাবনা থেকে। এর ফলে আজ জনপ্রশাসন চরমভাবে দ্বিভাজিত। এক পক্ষ সরকারের অবৈধ ও অযৌক্তি সুবিধা পাচ্ছে। অপর পক্ষ সরকারের কাছ থেকে তাদের ন্যায় পদ-পদোন্নতি-নিয়োগ ও যৌক্তিক সুবিধাগুলো পাচ্ছে না। এর ফলে জনপ্রশাসনের দক্ষতা বাড়ছে না। কর্মকর্তাদের মেধা-মনন বিকাশের সুযোগের অবশেষ থাকছে না। এক শ্রেণীর কর্মকর্তা বৈধ-অবৈধ উপায় অবলম্বন করে প্রতিযোগিতায় লিপ্ত সরকারের প্রতি সর্বাধিক মাত্রায় আনুগত্য প্রকাশ করছেন। কারণ বাস্তবে তারা দেখছেন পদ-পদোন্নতি ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা পাওয়ার একমাত্র কার্যকর কৌশল হচ্ছে এটি। দক্ষতা, যোগ্যতা ও মেধাÑ এ ক্ষেত্রে বিবেচ্যের বাইরের বিষয়। সরকারি দলের প্রতি উলঙ্গ-আনুগত্যই মুখ্য হাতিয়ার।

এই উলঙ্গ-আনুগত্যের প্রতি সরকারের অতিমাত্রিক আগ্রহের থাবা অন্যান্য ক্ষেত্রের মতো পুলিশ প্রশাসনেও সর্বব্যাপী হয়ে উঠছে। এর ফলে ‘পুলিশ পদক’ নিয়েও গুরুতর অভিযোগ উঠেছে বলে দৈনিক ইত্তেফাক গত ১৬ জানুয়ারি এক খবরে জানিয়েছে। খবর মতে, পুলিশ প্রশাসনের সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে ডিসি পর্যায়ের এক ‘বিতর্কিত’ কর্মকর্তাকে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ‘পুলিশ পদক’ দেয়ার সুপারিশ করেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। মন্ত্রণালয়ের এ হস্তক্ষেপে রীতিমতো বিস্ময় প্রকাশ করেছেন শীর্ষ পুলিশ কর্মকর্তারা। জানা গেছে, ‘পুলিশ পদক’ দেয়ার জন্য নির্বাচক কমিটি ওই কর্মকর্তার নাম পর্যন্ত সুপারিশ করেনি; কিন্তু ওই কর্মকর্তা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে প্রভাব খাটিয়ে পদক তালিকায় নিজের নাম অন্তর্ভুক্ত করিয়েছেন। এ ঘটনায় পদকের জন্য নির্বাচিতরা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। অনেকে ঘোষণা দিয়েছেন, ওই বিতর্কিত কর্মকর্তাকে পদক দেয়া হলে তারা ‘পুলিশ পদক’ নেবেন না। এ নিয়ে পুলিশের শীর্ষ কর্মকর্তারা হতাশা প্রকাশ করেছেন। কর্মকর্তাদের একজন এ অভিযোগের সত্যতা স্বীকার করে বলেন, এই সুবিধাভোগী পুলিশ কর্মকর্তাদের কারণে সরকারের পাশাপাশি পুলিশ প্রশাসনের ভাবমর্যাদা ুণœ হচ্ছে। এমন কাজ সরকারকেও বেকায়দায় ফেলে দেবে। তিনি জানান, ওই কর্মকর্তারা পুলিশ প্রশাসনে ‘খায়রুন বিবি’ নামে পরিচিত। তাদের সীমাহীন দাপট। এদের মধ্যে কেউ কেউ নীতিনির্ধারক মহলকে প্রভাবিত করে নিজেদের স্বার্থ হাসিল করেছেন। পুলিশ সূত্র মতে, চলতি বছর পুলিশ সপ্তাহে পদক দেয়ার জন্য নির্বাচক কমিটি ৬৬ পুলিশ সদস্যকে নির্বাচিত করে। কিন্তু মন্ত্রণালয় কমিটির সুপারিশ উপেক্ষা করে এ ‘বিতর্কিত’ কর্মকর্তার নাম পদক তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করে।

সবচেয়ে দুঃখজনক ব্যাপার হলো বিরোধী দলের চিফ হুইপ জয়নুল আবদিন ফারুককে পেটানোর বহুল আলোচিত পুলিশ কর্মকর্তা বর্তমানে লালবাগ থানার উপপুলিশ কমিশনার হারুন-অর-রশিদ প্রেসিডেন্ট পুলিশ পদক (পিপিএম) পেতে যাচ্ছেন। তিনি নাকি সেবার জন্য সেই পুরস্কারটি পেতে যাচ্ছেন। পুলিশের এ সম্মানজনক পদক তালিকায় অনেকের নামভুক্ত না হলেও এই বিতর্কিত পুলিশ কর্মকর্তা এ পদক পেতে যাচ্ছেন সম্পূর্ণ রাজনৈতিক বিবেচনায়। এ নিয়ে পুলিশ কর্মকর্তাদের মধ্যে ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে।

বর্তমান সরকার পুলিশ প্রশাসনকে সর্বোচ্চ মাত্রায় দলীয়করণ করে বিরোধী দলের নেতাকর্মী দমনে তাদের ব্যবহার করছে অনেকটা খোলামেলাভাবেই। পুলিশ কর্মকর্তাদের কেউ কেউ আজকাল গণমাধ্যমে যে বক্তব্য রাখছেন, তাতে মনে হয় সরকারদলীয় কোনো রাজনৈতিক নেতাই যেন বক্তব্য রাখছেন। পুলিশ প্রশাসনকে সরকার রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার করছে শুধু তাই নয়, আজকাল সরকারি দলের অঙ্গসংগঠনের লোকজন পুলিশের কাছ থেকে অস্ত্র কেড়ে নিয়ে এ অস্ত্র দিয়ে প্রতিপক্ষের ওপর গুলি চালাচ্ছে। এ ধরনের ঘটনা আসলে পুলিশ বাহিনীর দক্ষতা অর্জনের পথে বড় ধরনের বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। পুলিশ প্রশাসনের ওপর রাজনৈতিক চাপও ক্রমেই বাড়ছে। এর ফলে জনমুখী তথা জনকল্যাণমুখী পুলিশবাহিনী গড়ে তোলা সম্ভব হচ্ছে না।

রাজনৈতিক বিবেচনাকে প্রাধান্য দিয়ে দলবাজিকে মুখ্য বিবেচ্য করে সরকার এক আত্মঘাতী খেলায় মেতে উঠেছে। আজ অনেক মেধাবী তরুণ-তরুণীর বিসিএস পরীক্ষার পাস-ফেল নির্ণয় হচ্ছে দলবিশেষের প্রতি আনুগত্য ও অনানুগত্য বিবেচনায়। ছোটখাটো নিয়োগেও একই বিবেচনা প্রাধান্য পাচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগ হচ্ছে পুরোপুরি দলীয় আনুগত্যের ওপর নির্ভর করে। এভাবে সারা দেশে আমাদের জনপ্রশাসন ও শিক্ষাঙ্গন হয়ে উঠছে দলমুখী। আর সেই সূত্রে আমরা হয়ে পড়ছি মেধা ও দক্ষতাহীন এক জাতি। এর অবসান কোন পথে, সে প্রশ্নের উত্তর খোঁজার চরম সময় এখন।
       


No comments

Powered by Blogger.