রঙের ছড়াছড়ি প্রেমের কুহুতান- ভালবাসা কারে কয়

সাগরের সমিাহীনতার মতো আমার উদারতা/গভীর আসার প্রেম/যতই তোমাকে দেই ততই পেয়ে যাই আমি/ দুটোই অসীম।" শেক্সপিয়রের রোমিও জুলিয়েটের এ বাণী প্রেমপাগল যুগলদের মনে ধ্বনিত প্রতিধ্বনিত হয়েছে রবিবার ভালবাসার এই প্রতীকী দিনে।
শুধু তরম্নণ-তরম্নণী নয় নব বিবাহিত এমনকি বয়স্ক দম্পত্তিরাও মৃদু হেসে পরস্পরকে শুভেচ্ছা জানিয়ে বরণ করে নিয়েছেন দিনটিকে। ভালবাসার এ দিনে অনেকেই সেজেছিল ভালবাসার রঙে। অনেকেরই দিনটি শুরু হয় টেলিফোন কল এসএমএস ও ই মেইলের শুভেচ্ছা বিনিময়ের মাধ্যমে। যারা নিজেদেরকে একটু আতেল ভাবেন এবং বলেন প্রতিটি দিনই ভালবাসার দিন, তারাও এ দিনটিকে যে একটু বিশেষভাবে হৃদয় দিয়ে স্পর্শ করেননি তা হলফ করে বলতে পারবেন না। কারণ 'এমন দিনে তারে বলা যায়...।'
ভালবাসার রং মানেই কি লাল গোলাপ? কিন্তু ভালবাসার এ দিনে এত রঙের ছোঁয়া লাগল কেমনে ? তরুণীরা লাল, নীল, গোলাপী নানা উজ্জ্বল রঙে নিজেকে সাজিয়ে বের হয়েছিলেন ঘর থেকে। সঙ্গে ছিল শতভাগ বাঙ্গালীয়ানা সঙ্গীকে মোহাবিষ্ট করার জন্য উৎসব রঙা শাড়ির সঙ্গে কপালে টিপ, কপোলে বাঙালী সংস্কৃতির মোটিফ হাতে চুড়ি, আর খোঁপায় ফুল গুজতে ভুল করেনি। অনেকেই। যুগলবন্দী হয়ে আসা প্রেমিকরা, প্রেমিকার প্রশংসার দৃষ্টি পেতে পড়েছিলেন পাঞ্জাবি। দল বেঁধে যারা ঘুরতে বের হয় তাদের সাজসজ্জায়ও আবেদন কম ছিল না।
শনিবার রাত থেকেই ফুলের দোকানে ছোঁয়া লাগে ভালবাসার দিনের। ফুলের মধ্যে সবচেয়ে বেশি চাহিদা ছিল গোলাপের তাও আবার লাল গোলাপের। সাধারণ দিনে একটি গোলাপ বিক্রি হয় সবের্াচ্চ ৫ টাকায়। এদিন তা চার থেকে আট গুণ দামে, কোথাও আরও বেশি দামে বিক্রি হয়েছে গোলাপ। প্রতি পিস ২০ টাকার নিচে কোন দোকানিই বিক্রি করেনি গোলাপ, একটি গোলাপ সর্বোচ্চ বিক্রি হয়েছে ৫০ টাকাও। গোলাপের দাম আকাশচুম্বী হওয়ায়, অনেক বেকার প্রেমিক রজনীগন্ধা বা গস্নাডিওলার স্টিক দিয়ে হৃদয়ের কথা প্রকাশ করে প্রেমিকের কাছে। তবে এই স্টিকের দামও এদিন দুই থেকে তিনগুণ বিক্রি হয়েছে। সঙ্গীকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানাতে এদিন নারীদের চেয়ে পুরম্নষরাই ছিলেন অগ্রগামী। অনেকে আবার ভালবাসার শুভেচ্ছা বাণী সংবলিত কার্ড, চকলেট ও নানা উপঢৌকন সামগ্রী প্রদান করেছেন, তার ভালবাসার মানুষকে। কেউ কেউ আবার নগরীর নামীদামী রেস্টুরেন্টে চলে গেছেন প্রেমিক বা প্রেমিকাকে নিজের পছন্দের খাবার খাওয়ানোর জন্য।
বসনত্মের মাতাল সমীরণে আপস্নুত এই নগরীতে দিবসটি পালনে সকালে টিএসসির স্বোপার্জিত স্বাধীনতা চত্বরে এক মিলনমেলার আয়োজন করেছিল বিশ্ব ভারবাসা দিবস উদযাপন পরিষদ। স্বনামখ্যাত জুটিদের ভালবাসার স্মৃতিচারণ প্রাণবন্তু আড্ডা, আর একে অন্যকে গোলাপ বিনিময় করে বরণ করে নেয়া হয় এখানে। টিএসসির এই ভালবাসার ছোঁয়া মুহূর্তেই ছড়িয়ে পড়ে পুরো ক্যাম্পাসে। চারম্নকলার বকুল তলা বইমেলা, সোহরাওয়াদর্ী উদ্যান, রমনা পার্ক সবখানেই ছিল ভালবাসার রঙের ছড়াছড়ি। পরিষদের এই আয়োজনের উদ্বোধন করেন মানবাধিকার ব্যক্তিত্ব এ এইচ নোমান। প্রধান অতিথি ছিলেন ডিইউজের সভাপতি শাহ আলমগীর। পরিষদ এবারও ভালবাসার এক বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা বের করে টিএসসি থেকে।
ভালবাসার এই দিনটিকে স্মরণীয় করে রাখতে সকাল থেকেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠন রম্যবিতর্ক, কবিতা আবৃত্তি ও গানের আসরের আয়োজন করেছিল। দুপুরে বসুন্ধরা সিটি শপিং সেন্টারের পাশে লাভ স্টেশন কনসার্টের আয়োজন করা হয়েছিল। এতে গান করেন বালাম, জুলি, হৃদয় খান, ন্যান্সী, ভিজে রাহাত এবং ব্যান্ড রিদম অব লাইফ ও ইনসাইড ইউ্ বিকাল তিনটায় সাভারের আশুলিয়া ফ্যান্টাসি কিংডমে আয়োজন করা হয় লাভ কনসার্টের। এতে জেমস, মিলা ও ব্যান্ড শূন্য অংশ নেয়। বিকেল ৫টায় বসুন্ধরা সিটির লেভেল ৮-এ মিউজিক ক্যাফেতে গান পরিবেশন করে ব্যান্ড দলছুট। আর ধানম-ির ম্যারিয়ট কনভেনশন সেন্টারে গান করেন এলিটা ও ব্যান্ড রেডিও একটিভ। এছাড়া সব টিভি চ্যানেল ভালবাসা দিবস উপলৰে পরিবেশন করে বিশেষ অনুষ্ঠান।

No comments

Powered by Blogger.