কল্যাণ ট্রাস্টের কল্যাণে...

স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালে মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্ট গঠিত হয়েছিল মুক্তিযোদ্ধাদের কল্যাণের জন্য। মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্টের অনেক প্রতিষ্ঠান ছিল। কিন্তু দীর্ঘদিনের অবহেলায় মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্ট এখন মুক্তিযোদ্ধাদের কল্যাণ করতে পারছে না। ট্রাস্ট নিজেই আজ দুস্থ। ট্রাস্টের প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ।
জমি বেহাত হয়ে যেতে বসেছে। হাসপাতাল বন্ধ, চিকিৎসার কোনো সুযোগ নেই। ঋণের বোঝা ট্রাস্টের ঘাড়ে। বিগত সরকারগুলোর অবহেলায় মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্ট একটি অকার্যকর প্রতিষ্ঠানে পরিণত হতে চলেছে। অথচ একদিন কল্যাণ ট্রাস্টের প্রতিষ্ঠানগুলো ছিল লাভজনক। এখনো ট্রাস্টকে লাভজনক করা সম্ভব। এর জন্য প্রয়োজন কিছু সিদ্ধান্ত। কিন্তু প্রায় এক যুগ এ প্রতিষ্ঠানটির ট্রাস্টি বোর্ডের সভা না হওয়ায় কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া যায়নি। ১৯৭২ সালে পিও ৯৪/৭২ নম্বর আদেশ দ্বারা গঠিত হয় মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্ট। ওই আদেশে কল্যাণ ট্রাস্টের জমি ও প্রতিষ্ঠানের সব ধরনের ব্যবহার ও ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব অর্পিত হয় বোর্ড অব ট্রাস্টির ওপর। বঙ্গবন্ধুর শাসনামলে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে স্থাপিত হয় তাবানী বেভারেজ কম্পানি লিমিটেড, মিমি চকোলেট, পারুমা ইস্টার্ন লিমিটেড, হরদেও গ্লাস ফ্যাক্টরি, পূর্ণিমা ফিলিং স্টেশন, ইস্টার্ন কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ, বাক্সলি পেইন্ট, সিরকো সোপ, মেটাল প্যাকেজ, চট্টগ্রামের আলমাস দিনার সিনেমা হল, ইসিআই-এ গ্লু, ঢাকার গুলিস্তান কমপ্লেক্স ভবন, মুন সিনেমা হলসহ আরো কয়েকটি প্রতিষ্ঠান। এ তিনটি প্রতিষ্ঠানও আশির দশক থেকে ২০০৭ সাল পর্যন্ত লোকসানি প্রতিষ্ঠান থাকলেও এ সরকারের আমলে লাভ করতে শুরু করেছে। পড়ে আছে তেজগাঁও শিল্প এলাকার ২৫৭ নম্বর প্লট, গাজীপুরের দুটি প্লট, চট্টগ্রাম আগ্রাবাদের ৩৬ ও ৩৭ নম্বর প্লট, নারায়ণগঞ্জের ডালপট্টি, এমজেসিপি ও রাঙ্গুনিয়ার ১৫ একর জমিসহ বেশ কিছু স্থাপনা।
মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্টের ট্রাস্টি বোর্ডের একটি সভা দীর্ঘ ১১ বছর পর অনুষ্ঠিত হয়েছে। প্রকাশিত খবর থেকে জানা যায়, প্রধানমন্ত্রী মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্টের ব্যাপারে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। বৈঠকের আগে প্রধানমন্ত্রীর কাছে একটি প্রতিবেদন দেওয়া হয়। ওই প্রতিবেদনে বেশ কিছু প্রস্তাব করা হয়।
ট্রাস্টি বোর্ডের বৈঠকে মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্টকে স্বনির্ভর করার নানা পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। পরিকল্পনা অনুযায়ী এ ট্রাস্টের কাছে পাওনা স্বাধীনতা-পূর্ব ঋণ সুদ-আসলে অর্থ মন্ত্রণালয় সম্পূর্ণ মওকুফ করে দিয়েছে। স্বাধীনতা-উত্তর ঋণের সুদ পর্যায়ক্রমে পরিশোধের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বৈঠকে ঠিক হয় ট্রাস্টের যেসব জায়গা অব্যবহ�ত রয়েছে, সেসব জায়গায় বহুতল ভবন নির্মাণ করা হবে। যেসব কারখানার যন্ত্রাংশ নষ্ট হয়েছে, সেগুলো বিক্রি করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। চট্টগ্রামের বাঁশখালী পেইন্টস ও এমজেসিপির জায়গায় ওয়্যারহাউস এবং নারায়ণগঞ্জের ডালপট্টিতেও আলাদা বিপণিবিতান নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্ট গঠন করা হয়েছিল মুক্তিযোদ্ধাদের কল্যাণের জন্য। সেই ট্রাস্টই আজ কল্যাণ চায়। মুক্তিযোদ্ধাদের স্বার্থেই এ ট্রাস্ট বাঁচাতে হবে। ট্রাস্টকে নতুন করে ঢেলে সাজাতে হবে। সঠিক সিদ্ধান্ত ও পরিকল্পনার মাধ্যমে মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্টকে একটি লাভজনক প্রতিষ্ঠানে পরিণত করা সম্ভব। কাজেই সঠিক কর্মপরিকল্পনা নিতে হবে। বাঁচিয়ে রাখতে হবে মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্টকে।

No comments

Powered by Blogger.