লুট বা কেড়ে খাওয়ার অর্থনীতি by এরশাদ মজুমদার

কেড়ে বা লুট করে খাওয়া সৃষ্টি জগতের অতি প্রাচীন একটি নিয়ম। এই নিয়মনীতি বা ন্যায়-অন্যায় ভাবনা এসেছে অনেক পরে।
কৃষিব্যবস্থা বা পরিবারব্যবস্থা চালু হওয়ার আগে থেকে মানুষ শিকার করে জীবিকা নির্বাহ করত। শক্তিশালী মানুষ যেমন দুর্বল মানুষ বা গোত্র-গোষ্ঠীকে পরাজিত করে সব কিছু ছিনিয়ে নিত, তেমনি সবল শক্তিশালী পশু দুর্বল পশুকে পরাজিত করে তাকে ভণ করত এবং এখনো করে থাকে। পশুরা আগের মতোই রয়ে গেছে। কিন্তু মানুষ আগের অবস্থানে নেই। খুব বেশি পেছনের দিকে না গিয়ে বলছি, মানুষ গত পাঁচ হাজার বছরে অনেক উন্নতি লাভ করেছে জ্ঞান-বিজ্ঞানের পথে। তার আচার-আচরণে অনেক পরিবর্তন হয়েছে। ‘গণতন্ত্র’ নামে নতুন ব্যবস্থাপনা চালু করেছে রাজা-বাদশাহর শাসনব্যবস্থাকে পেছনে ফেলে। সব কিছুই মানুষ করেছিল নিয়মনীতি, ন্যায়-অন্যায় বোঝার জন্য। মানুষ নিজেদের জন্যই নিজেরা আইন তৈরি করেছে। নিজেরা নিজেদের শাসন করার জন্য পদ্ধতি তৈরি করেছে। বলা হয়, রাজার যুগ থেকে এখন প্রজা বা জনগণের যুগ এসেছে। রাজারা নেই, এখন প্রজারাই রাজা বা শাসক। এসব ধারণা থেকেই রাষ্ট্রব্যবস্থা এসেছে; গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র, জনগণতন্ত্র ও ইসলামি রাষ্ট্রব্যবস্থা এসেছে। কিন্তু কেড়ে খাওয়ার অর্থনীতিটা নানারূপে, নানা ঢঙে চালু বা জারি রয়ে গেছে। কারণ, মানবসভ্যতা কেড়ে খাওয়াকে বাদ দিতে পারেনি। যে কেড়ে খেতে পারে না সে দুর্বল; সম্মানিত বা অভিজাত নয়। বিশ্বব্যাপী অভিজাতদের দিকে তাকিয়ে দেখুন। এক সময় তারা ডাকাত বা লুণ্ঠনকারী ছিলেন। ব্রিটেনের রাজাদের ইতিহাস দেখুন। সম্পদ লুট করে তারা এখন অভিজাত ও সম্মানিত। আমেরিকার দিকে তাকান। এই তো সে দিনের কথা। তিন শ’ বছরের বেশি নয়। শুরুতে ব্রিটেন সেখানে চোর-ডাকাতদের নির্বাসিত করেছে। সে দেশের আদিবাসীদের হত্যা করেছে। আফ্রিকা থেকে কালো মানুষদের শিকল বেঁধে এনে বিভিন্ন দেশে বিক্রি করেছে। এভাবেই পশ্চিমাদের কেড়ে খাওয়ার অর্থনীতি বিকশিত হয়েছে। এখন শুনি, তারাই নাকি পৃথিবীকে সভ্যতা, মানবতা, গণতন্ত্র ও আইনের শাসন শিা দেবে। পাকিস্তানের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও অবজারভার পত্রিকার প্রতিষ্ঠাতা হামিদুল হক চৌধুরী তার আত্মজীবনী বা স্মৃতিকথায় লিখেছেন, তার বাপ-দাদারা সাধারণ মানুষ ছিলেন। সুদের ব্যবসায় করে অর্থবিত্ত করেছেন তারা। এক সময়ে ইংরেজদের ‘সূর্যাস্ত আইনে’ জমিদারি বা তালুকদারি কিনে সমাজে সম্মানিত হয়েছেন। বাংলাদেশে এ রকম আরো পরিবার আছে যারা যেনতেনভাবে অর্থবিত্ত করে অভিজাত হয়েছেন। লুট বা কেড়ে খাওয়ার অর্থনীতি আরো প্রকট হয়ে দেখা দিয়েছে। এখন তো দশ বছর মাস্তান থেকে এরপর নমিনেশন নিয়ে এমপি-মন্ত্রী হয়ে সম্মানিত হয়ে যান। সারাজীবন ‘সাবেক মন্ত্রী’ পদবি ব্যবহার করেন। হাজী মুহম্মদ মুহসিনের মতো একজন ব্যবসায়ীও আমরা বর্তমান জমানায় দেখতে পাই না। হাজী মুহসিন চার কোটি টাকার সম্পদ দান করে গিয়েছিলেন জনকল্যাণ ও শিা প্রসারের জন্য; যা আজো চালু আছে। আমাদের ব্যবসায়ীরা বিশ বছরে হাজার কোটি টাকার মালিক হয়েছেন রাষ্ট্র অথবা সাধারণ মানুষকে লুট করে।

আমরা পশ্চিমাদের অর্থনীতি, গণতন্ত্র ও মানবতা চর্চার চেষ্টা করছি। এ ব্যাপারে এশিয়ার অন্যতম শ্রেষ্ঠ নেতা মাহাথির মোহাম্মদ বারবার বলেছেন, পশ্চিমের গণতন্ত্র আর সংস্কৃতির সাথে এশিয়ার কোনো মিল নেই। সুতরাং তাদের অনুসরণ করে এশীয়দের কোনো লাভ হবে না। মাহাথিরের নেতৃত্বেই মালয়েশিয়ার রাজনীতি, গণতন্ত্র ও অর্থনীতি সংহত হয়েছে। আজ মালয়েশিয়া একটি উন্নত দেশ। পশ্চিমাদের মুখের ওপর কথা বলতে পারে। পশ্চিমাদের চোখ রাঙানিকে তোয়াক্কা করে না। এশিয়ার প্রায় সব দেশই ছিল গরিব। সেই গরিবি থেকে বেরিয়ে এসেছে চীন, জাপান, সিঙ্গাপুর, কোরিয়া, ভিয়েতনাম ও মালয়েশিয়া। উত্তর কোরিয়া আজ একটি শক্তিধর দেশ। মধ্যপ্রাচ্য ও মধ্য এশিয়ার দেশগুলোর ভাগ্যের পরিবর্তন হয়েছে তেলের কারণে। তেলের অর্থনীতিকে তারা সংহত করতে পেরেছে। ১৯৫০ সালেও চীন একটি মহাগরিব দেশ ছিল। সেই অবস্থা থেকে মাত্র ৬০ বছরে চীন শক্তিধর দেশে পরিণত হয়েছে। আমেরিকা মারণ কামড় দিয়ে চেষ্টা করেছে চীনকে দমিয়ে রাখতে। জাপান আমেরিকার তাঁবেদারি করে একটি মাড়োয়ারি দেশে পরিণত হয়েছে। জাপানের টাকা আছে, অন্য দেশকে দাদন দেয়। কিন্তু জাপানের কোনো রাজনৈতিক সম্মান নেই। জাপানের চেয়ে মালয়েশিয়ার সম্মান জগতে অনেক বেশি।

১৯৪৭ সালে আমরা স্বাধীন হয়েছিলাম মুসলমান বলে। নিজেদের অধিকার নিয়ে মুসলমানেরা অখণ্ড ভারতে থাকতে চেয়েছিল; কিন্তু কংগ্রেস ও হিন্দু নেতারা রাজি হননি। তারা চেয়েছিলেন মুসলমানেরা অখণ্ড ভারতে হিন্দুদের অধীনেই থাকুক। মুসলমান নেতারা এতে রাজি হননি। ফলে ’৪৭ সালে ভারত ভাগ হয়ে যায়। পূর্ব বাংলা বা পূর্ব পাকিস্তান পরিণত হয় পাকিস্তানের অংশে। বাঙালি হিন্দু-মুসলমান নেতারা চেয়েছিলেন অখণ্ড বঙ্গদেশ বা বাংলাদেশ। গান্ধীজী এতে রাজি হননি। যে কলকাতা পূর্ব বাংলার সম্পদ লুটে বা কেড়ে নিয়ে নিজে হৃষ্টপুষ্ট হয়েছে, সেই কলকাতাকে গান্ধীজী জোর করে ভারতে রেখে দিয়েছেন। আজকের যে বাংলাদেশ তা ইংরেজ আমলের ১৯০ বছর যৌথভাবে হিন্দু জমিদার ও ইংরেজদের হাতে শোষিত হয়েছে। এর পরে শোষিত হয়েছে ২৩ বছর পাকিস্তানের হাতে। কেড়ে খাওয়া আর শোষণের অর্থনীতি একই সুতায় গ্রোথিত। কেউ কেড়ে খায় আইন করে আর কেউ কেড়ে খায় জোর করে। রাষ্ট্র শোষণ করে জনগণের ইচ্ছার বিরুদ্ধে আইন করে। যে রাষ্ট্রে দুর্নীতি বেশি থাকে সেখানে লুণ্ঠন বা কেড়ে খাওয়া সবচেয়ে বেশি। বিগত ৪০ বছরে বাংলাদেশে অশ্লীল ধনী তৈরি হয়েছে কয়েক শ’। দু-চার কোটি টাকার মালিক হয়েছেন কয়েক হাজার লোক। সবাই ধনী হয়েছেন রাষ্ট্রকে লুট করে। এই লুটেরা অর্থনীতির সহযোগী থাকেন রাষ্ট্রমতায় অধিষ্ঠিত রাজনীতিকেরা। আর সহযোগী হিসেবে কাজ করে যান সব শ্রেণীর আমলা। এর সাথে যোগ দেন নানা জাতের বুদ্ধিজীবী। এখন বুদ্ধিজীবীরা নানা দলে ও গ্রুপে বিভক্ত। দেশপ্রেমের সংজ্ঞাও একেক গ্রুপের কাছে একেক রকম। কেড়ে খাওয়ার জন্য ‘মুক্তিযুদ্ধ’ ইস্যু এখন খুবই বড় ধরনের বাণিজ্য। সেদিন এক অনুষ্ঠানে এক প্রতিমন্ত্রীর সাথে দেখা হয়েছিল। তিনি খুবই বিনীত মানুষ। বক্তৃতার একপর্যায়ে তিনি বললেন, তিনি একজন মুক্তিযোদ্ধা। যুদ্ধের সময় তার বয়স তেমন ছিল না। তবুও তিনি যুদ্ধে অংশ নিয়েছেন, মুক্তিযুদ্ধ এখন রাজনীতির প্রধান উপকরণ। মুক্তিযুদ্ধকে নিয়ে মেলা হয়, ব্যবসায় হয়। যে কখনো মুক্তিযুদ্ধ দেখেনি বা মুক্তিযুদ্ধ করেনি সে-ও এখন মুক্তিযুদ্ধের বড় সওদাগর। এই ইস্যুর নাম ভাঙানোর উদ্দেশ্য বা আদর্শ একটিÑ অপরের সম্পদ বা ইজ্জত লুট করে নেয়া।

উইলিয়াম হান্টারের বই পড়লেই জানা যাবে ইংরেজরা কিভাবে সুজলা সুফলা বাংলাদেশকে লুণ্ঠন করেছিল। ১৯০ বছরে ইংরেজরা এ দেশের লাখ লাখ স্বাধীনতাকামী মানুষকে হত্যা করেছে। বাংলার সম্পদ ধ্বংস করেছে। পাকিস্তান যা লুট করেছিল তার হাজার গুণ বেশি লুট করেছে ইংরেজরা। ইংরেজদের সহযোগী রাজনীতিক ও বুদ্ধিজীবীরাই নবাব সিরাজউদ্দৌলার চরিত্রে কলঙ্ক লেপন করেছিল। ইংরেজদের বিরুদ্ধে প্রথম ১০০ বছর প্রতিরোধ যুদ্ধ করেছিলেন মুসলমানেরা। সেই ইতিহাস আমাদের জানা নেই বা জানার আগ্রহ নেই রাজনৈতিক কারণে। কবিগুরু ইংরেজদের খয়ের খাঁ ছিলেন, তাই তিনি সম্মানিত ও অভিজাত। মজলুম কবি নজরুলের পূর্বপুরুষ ইংরেজদের হাতে নির্যাতিত হয়েছেন, তাই তারা সম্মানিত নন। ুদিরাম বড়লাটকে মারার চেষ্টা করেছিলেন, কিন্তু মারতে পারেননি; তাই তিনি মহাসম্মানিত। শের আলী খান বড়লাটকে হত্যা করেও অজানা রয়ে গেছেন। ৯০ শতাংশ মুসলমানের দেশ বাংলাদেশে ইসলাম ও মুসলমান অসম্মানিত। কারণ যারা মতায় থাকেন তারা নিজেদের স্বার্থেই ইতিহাস ভুলে থাকেন। সাধারণ মানুষকে লুট করে খাওয়ার এটাও এক ধরনের প্রক্রিয়া। সরাসরি মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছেন এ দেশের কৃষক শ্রমিক ও ছাত্রসমাজ। কিন্তু স্বাধীন বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রটি পরিচালিত হয়েছে ও হচ্ছে সাবেক শোষকদের প্রতিনিধিদের দ্বারা।

পাকিস্তানের শোষণ থেকে আমরা মুক্তি লাভ করেছি জনগণের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য। তখন, মানে ১৯৭০-৭১ সালে আমাদের লোকসংখ্যা ছিল সাড়ে সাত কোটি। এখন ১৫-১৬ কোটি বলে অনুমান করা হচ্ছে। পাঁচ বা ছয় শতাংশ হারে জাতীয় উৎপাদন বৃদ্ধি পাচ্ছে। যাদের আয় ছিল দৈনিক দুই টাকা তারা এখন দুই শ’ টাকা পাচ্ছে। অপর দিকে রাজনীতিক, ব্যবসায়ী ও আমলাদের ভাগ্যের পরিবর্তন হাজার গুণ বেশি। এখন দেশে যতগুলো ব্যবসায় গ্রুপ আছে ’৭০-৭১ সালে তারা কেউ ছিল না। এখন এসব গ্রুপ রাষ্ট্র ও সরকার নিয়ন্ত্রণ করে। ভুয়া ঋণপত্র বা এলসির মাধ্যমে বিদেশে পাচার হয়েছে হাজার হাজার কোটি টাকা। ৪০ বছর ধরেই এই জাল ব্যবসায় চলে আসছে এবং এখনো চলছে। উদাহরণ হলোÑ হলমার্ক, ডেসটিনি, যুবক ও এ ধরনের আরো অনেক সংগঠন। ডেসটিনির চেয়ারম্যান ছিলেন বিশিষ্ট মুক্তিযোদ্ধা ও সাবেক সেনাপ্রধান। দেশে হাজার হাজার এনজিও আছে। তারা বিদেশ থেকে টাকা আনে গরিবের কথা বলে। গরিবের ভাগ্যের কতটুকু পরিবর্তন হয়েছে তা আমরা ভালো করে জানি। কিন্তু এনজিও নেতা ও তাদের পরিবার রাজপরিবারে পরিণত হয়েছে। তারা বিদেশ থেকে স্যার উপাধি নিয়ে আসেন। যেমনÑ ইংরেজরা এ দেশে শত শত নবাব মহারাজা বানিয়েছে। এসব হচ্ছে লুট বা কেড়ে খাওয়ার অর্থনীতির কালচার। রাজনীতিক নেতারা এখন এদের সহযোগী ভাই-বেরাদারে পরিণত হয়েছে। নেতাদের ছেলেমেয়েরা এসব এনজিওতে চাকরি করে। বিশেষ করে বাম নেতাদের ছেলেমেয়েরা তো এনজিওদের বিরাট সম্পদ। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির মতো এনজিওগুলো বাংলাদেশকে দখল করে নিয়েছে। মানবসেবার নামে ২০ বছরে নানা ধরনের ব্যবসায় জড়িত হয়ে গেছে।

২০১২ সালে বিশ্বের এক শ’ ধনীর আয়ের পরিমাণ ছিল ২৪ হাজার কোটি ডলার, যা দিয়ে বিশ্বের চরম দারিদ্র্যের ইতিহাস চারবার অতিক্রম করা যায় বলে অভিমত দিয়েছেন গবেষকেরা। গত ২০ বছরে বিশ্বের ১ শতাংশ লোকের আয় বেড়েছে ৬০ শতাংশ। আকাশছোঁয়া আয় বা লাভের সীমা নির্ধারণ না করলে আমাদের এই পৃথিবী কখনোই দারিদ্র্যমুক্ত হবে না। অতিরিক্ত বা সীমাহীন সম্পদ আয়ের ইচ্ছা বা নেশাই বিশ্বকে দুর্নীতির ভারে জর্জরিত করেছে। পদ্মা সেতুর দুর্নীতির কথা একবার ভাবুন। মতাসীন দলের নেতাদের অধিক সম্পদের লোভই আলোচ্য দুর্নীতি জন্ম দিয়েছে। সারা বিশ্বে বাংলাদেশকে একটি দুর্নীতিবাজ হিসেবে কলঙ্কিত করেছে। একশ্রেণীর মতাবান লুট করে খাওয়ার নেশায় দেশকে দুর্নীতির চাদরে ঢেকে দিয়েছে। জানি না, প্রাসঙ্গিক কি না; তবুও বলছি, ইসলামি রাষ্ট্রের প্রথম খলিফা হজরত আবু বকর রা: দুনিয়া থেকে বিদায় নেয়ার আগেই নিজ সম্পদের হিসাব দিয়েছিলেন। দায়িত্ব নেয়ার দিন থেকে বিদায়ের দিন পর্যন্ত সম্পদের হিসাব দিয়ে বাড়তি সম্পদ বায়তুল মাল বা সরকারি কোষাগারে জমা দিয়েছিলেন। একই পথ অনুসরণ করেছিলেন দ্বিতীয় খলিফা হজরত উমর রা:। এটাই হওয়া উচিত আমাদের রাজনীতিকদের চরিত্র। ইসলামি রাষ্ট্রে ব্যক্তিগত সম্পদের একটা সীমা আছে। যার যেমন ইচ্ছা তেমন সম্পদ আয়ের কোনো সুযোগ নেই। ইসলামি অর্থনীতি একটি কল্যাণমুখী অর্থনীতি। মানুষের কল্যাণই এখানে প্রধানতম ল্য। চলমান বিশ্বে এখন কোনো ইসলামি রাষ্ট্র নেই। ইরান একটি পূর্ণাঙ্গ ইসলামি রাষ্ট্র হওয়ার চেষ্টা করে এখন নানা বিপদে। বিশ্বে এখন ১৫০ কোটি মুসলমান। ৫৫টির মতো মুসলিম দেশ আছে। সব মুসলমান এবং মুসলিম দেশের সম্পদ এক করলে মুসলমানদের আর দারিদ্র্য থাকে না। খোদ সৌদি আরবই পুরোপুরি ইসলামি রাষ্ট্র নয়। আমেরিকা সৌদি সরকারের একজন বড় বন্ধু। আমাদের বাংলাদেশ একটি মুসলিমপ্রধান দেশ। ৯০ শতাংশ নাগরিক মুসলমান। কিন্তু রাষ্ট্রব্যবস্থা মুসলমানের নয় বা ইসলামি নয়। এখানে কোনো কিছুই ইসলামি নয়। রাষ্ট্র নিজেই সুদ ও মদের ব্যবসায় করে। রাষ্ট্রের বিচারব্যবস্থা ইসলামবিরোধী। প্রাসঙ্গিক কারণেই এসব কথা বলছি।

আমেরিকা এখন চলমান বিশ্বের নেতা। আপনি বা আপনার দেশ তাকে নেতা মানতে বাধ্য। না মানলে আমেরিকান সরকার আপনার এবং আপনার দেশের বিরুদ্ধে অবরোধ গড়ে তুলবে। আপনাদের শিশুসন্তানদের না খাইয়ে মারবে। আমেরিকা এবং তার দোসরেরা কী, তা জানতে হলে আপনি পড়ুন জন পার্কিন্সের বই ‘এক অর্থনৈতিক ঘাতকের স্বীকারোক্তি’। পার্কিন্স লিখেছেন, ‘অর্থনৈতিক ঘাতকেরা মোটা অঙ্কের বেতনপ্রাপ্ত পেশাদার। এদের কাজ হচ্ছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশকে ধাপ্পা দিয়ে ল-কোটি ডলার চুরি করা। এ কাজে এই ঘাতকদের মূল অস্ত্র হচ্ছে ভুল তথ্যে ভরা অর্থনৈতিক প্রতিবেদন, পাতানো নির্বাচন, ঘুষ, চাপ প্রয়োগ, যৌনতা ও শেষ নাগাদ হত্যা।’ উল্লিখিত বইয়ের লেখক নিজেই একজন নামজাদা ঘাতক ছিলেন। তার কাজ ছিল দরিদ্র দেশগুলোকে বিপুল অঙ্কের ঋণ গ্রহণে প্রলুব্ধ করা। একবার ঋণের জালে আটকে ফেলে ‘বন্দী’ দেশের কাছ থেকে আমেরিকার স্বার্থ আদায় করে নেয়া। আমেরিকার স্বার্থ মানেই, প্রাকৃতিক সম্পদ নিয়ন্ত্রণ করা, সামরিক সম্পর্ক গড়ে তোলায় বাধ্য করা এবং শেষ অবধি আমেরিকার দাসে পরিণত করা। কোনো দেশের নেতা আমেরিকার কথা, শুনলে তাকে হত্যা করাই হলো আমেরিকার আদর্শ। অথবা ভুয়া নির্বাচনের মাধ্যমে অবাধ্য নেতাকে সরিয়ে দেয়া। সম্প্রতি একজন বিখ্যাত অভিনেতা বলেছেন, আমেরিকা বিশ্বের সবচেয়ে বড় দুর্নীতিবাজ দেশ। আরেকজন নেতা বলেছেন, বিশ্বের বড় খুন-গুমগুলো আমেরিকাই করে থাকে। আমেরিকা সারা বিশ্বের ধনসম্পদ লুট করে খায় বলেই সবচেয়ে বেশি শক্তিশালী ও সম্মানিত। আমাদের সোনার বাংলার নেতা, ব্যবসায়ী, আমলা এবং এদের সহযোগীরাই এ দেশে সম্মানিত। কারণ, তারা সবাই জোট বেঁধে দেশকে খায়, দেশের মানুষকে লুটেপুটে খায়। লেখাটি শেষ করার সময় মনে পড়ছে লেখক এস মুজিবুল্লাহর কথা। তিনিই ১৯৭৪ সালে লিখেছিলেন, ‘দে মা তবিলদারি, লুটেপুটে খাই’। মনে পড়ছে প্রখ্যাত অর্থনীতিবিদ ও শিক ড. মজহারুল হকের কথা। তিনি ’৭৪ সালে অর্থনৈতিক সমিতির সভায় বলেছিলেন, ‘লুটপাট করা রাষ্ট্রের আদর্শে পরিণত হয়েছে।’ বাংলাদেশ অর্থনৈতিক সমিতি এখন একটি সরকারি সমিতিতে পরিণত হয়েছে। আর অর্থনীতিবিদেরা পরিণত হয়েছেন এনজিও কর্মচারীতে।

লেখক : কবি ও কলামিস্ট

ershadmz40@yahoo.com

No comments

Powered by Blogger.