যানজট ও চট্টগ্রাম by মে. জে. (অব:) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম বীর প্রতীক

প্রায় তিন সপ্তাহ পর নয়া দিগন্তের পাঠকের মুখোমুখি হচ্ছি। বাংলা বর্ষপঞ্জিতে পৌষ ও মাঘ মাস শীতকাল। শীতের প্রথম অর্ধেক দেশবাসীর মনে যতটুকু না দাগ কেটেছে, তার থেকে বেশি শরীরের ওপর দাগ কেটেছে।
বাংলাদেশের উত্তরাংশে গত ৪৫ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। মাঘ মাসের শীত পৌষ মাস থেকে বেশি হওয়ার কথা। প্রবাদবাক্য ছিলÑ ‘মাঘের শীতে বাঘও কাঁদে’। শীতের তীব্রতা একটু কমলেও শৈত্যপ্রবাহ আরো একটি বা দুইটি আসবে বলে আগাম সতর্কবাণী উচ্চারণ করে রেখেছে আবহাওয়া দফতর। শৈত্যপ্রবাহের সাথে যুক্ত হয়েছিল কুয়াশার সমস্যা। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বাংলাদেশে কুয়াশা পড়ার ব্যাপ্তি বৃদ্ধি পেয়েছে। কুয়াশার কারণে সকালবেলা বিমানবন্দর থেকে বিমানগুলো ছেড়ে যেতে প্রচুর বিলম্ব হচ্ছে। কুয়াশার জন্য নদীগুলোতে ফেরি চলাচল দারুণভাবে বিঘিœত হচ্ছে। কুয়াশার কারণে মহাসড়কে গাড়িগুলোকে অনেক কম গতিতে চলতে হচ্ছে, ফলে যানজট সৃষ্টি হচ্ছে। আজকে থেকে পেছনের ১৫-২০ দিনের মধ্যে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক এবং ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে সাম্প্রতিককালের মধ্যে উল্লেখযোগ্যভাবে দীর্ঘ যানজট একাধিকবার সৃষ্টি হয়েছে। এই মহাসড়কগুলোতে সৃষ্ট যানজট নিয়ে ইতঃপূর্বেও লিখেছি, আজো কলামের দ্বিতীয় অংশে অল্প কথা উপস্থাপন করছি।

নির্মাণকাজে ব্যবহৃত একটি রড ও ইস্পাত উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের প থেকে ঢাকা ও চট্টগ্রাম মহানগরের বিভিন্ন জায়গায় এবং মহাসড়কগুলোর বিভিন্ন স্থানে বিজ্ঞাপনের বিলবোর্ড দেখা যায় যেখানে লেখা আছেÑ ‘শেকড় থেকে শিখরে’। বিজ্ঞাপনের ভাষার অর্থ হচ্ছে, একটি দালান নির্মাণের সময় একদম নিচের স্তর তথা বেইজ-ঢালাই থেকে শুরু করে যত তলা দালানই হোক না কেন, উচ্চতম তলা পর্যন্ত ব্যবহৃত সব লোহার রড ওই কোম্পানি থেকে উৎপাদিত। অনুরূপভাবে আমিও বলতে চাই, আমি গ্রামের ছেলে ছিলাম এবং বর্তমানে ঢাকা মহানগরে আবাসস্থল থাকলেও আমার শেকড় কিন্তু গ্রামে। চট্টগ্রাম জেলার হাটহাজারী থানার উত্তর বুড়িশ্চর গ্রামে ১৯৪৯ সালের অক্টোবর মাসে আমার জন্ম। উত্তর বুড়িশ্চর গ্রামের রশিদিয়া ফ্রি প্রাইমারি স্কুলে আমার লেখাপড়া শুরু। ১৯৫৭ সালের জানুয়ারি থেকে চট্টগ্রাম বন্দরের কাছে অবস্থিত বন্দর উত্তর আবাসিক এলাকায় দশ নম্বর সড়কের ২৮৬/এ নম্বর বাসায় বাবা-মায়ের সাথে আবাস শুরু। স্থানীয় বন্দরের প্রাইমারি ও হাইস্কুলে পড়ি জুন ১৯৬২ সাল পর্যন্ত। অতঃপর ক্যাডেট কলেজ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। ১৯৭০ সালের জানুয়ারি থেকে সেনাবাহিনী। অতঃপর মুক্তিযুদ্ধ এবং স্বাধীন বাংলাদেশ। অতঃপর বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে চাকরি এবং ১৯৯৬ সালের জুন মাসে অবসর। ২০০৭ সালের ডিসেম্বর থেকে রাজনীতি। সারা জীবনই গ্রামে গিয়েছি বেড়াতে বা কোনো পার্বণে। আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে যাওয়া-আসা সব সময়ই ছিল। রাজনীতিতে যুক্ত হওয়ার পর থেকে চট্টগ্রাম ও হাটহাজারীতে যাওয়া বৃদ্ধি পেয়েছে।

চলমান শীতকালে হাটহাজারী থানার বিভিন্ন পাকা বা আধাপাকা বা কাঁচা গ্রাম্য সড়ক দিয়ে এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় যাওয়ার সময় যখন ফসলি জমি দেখি বা শূন্য-শুকনো বিল দেখি, তখন আমার বাল্যকালের স্মৃতি মনে ভেসে আসে। এই শীতকালেই অনেক জায়গায় একাধিক অনুষ্ঠানে গেলাম। দাওয়াতকারীরা বিভিন্ন সামাজিক সংস্থা। যুবকদের সাথে, কিশোরদের সাথে, শিশুদের সাথে মেলামেশার অবারিত সুযোগ। মহান আল্লাহ তায়ালার দয়ায় আমার চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের মধ্যেই মানুষের সাথে মেলামেশার প্রবণতা উল্লেখযোগ্যভাবে বিদ্যমান। মেলামেশার মাধ্যমে মানুষ বিদ্যমান রাজনৈতিক পরিবেশ থেকে কী আশা করে, তাদের নিজস্ব চিন্তাচেতনা কী ইত্যাদি জানতে পারি। শুধু গত ১৫-২০ দিনেই গড়দুয়ারা সোস্যাল ওয়েলফেয়ার কাব, ছিপাতলী সততা স্টার কাব, মির্জাপুর শতদল সঙ্ঘ ইত্যাদির সৌজন্যে খুব ব্যস্ত সময় কাটিয়েছি। উত্তর বুড়িশ্চর গ্রামে ইসমাইল-আমেনা-ইসাহাক ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে পরিচালিত পঞ্চম ও অষ্টম শ্রেণীর ফ্রি কোচিং সেন্টারের পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠানেও গিয়েছিলাম। এই গ্রামটিতে প্রচুর প্রবাসী বাঙালিদের পরিবার আছে, যারা আর্থিকভাবে সচ্ছল; কিন্তু তাদের সন্তানদের লেখাপড়ার দিকে তাগাদা দেয়ার মতো পরিবেশ নেই। এই গ্রামটিতে অনেক গরিব পরিবারও আছে, যাদের সন্তানেরা মেধাবী হলেও লেখাপড়ার জন্য পৃষ্ঠপোষকতা কম পায়। এই উভয় প্রকৃতির শিশু-কিশোরদের শিামুখী ও তাদের মেধাকে আরো শাণিত করার জন্য তিন বছর ধরে এই ফ্রি কোচিং সেন্টারটি কার্যক্রম পরিচালনা করে যাচ্ছে। তিন বছর আগে যেখানে ৮০ ভাগ শিশু-কিশোর ফেল করত, তিন বছর পর সেখানে শত ভাগ শিশু পাস করছে। এ রকম আরো অনেক সংগঠনের সাথে পরিচিত হচ্ছি। মুক্তিযুদ্ধ করে যেই দেশ স্বাধীন করেছিলাম সেই দেশের নবীনতম প্রজন্মের সাথে ইন্টারঅ্যাকশন বা মতবিনিময়ের সুযোগ পাচ্ছি। মাঝে মধ্যে যদিও দেশের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎকে কুয়াশাচ্ছন্ন মনে হয়, তবুও নবীনতম প্রজন্মের সাথে মেলামেশার পর আবার উদ্যম খুঁজে পাই। তারা ব্যতিক্রমী নেতা চায়। তারা আমাকে প্রশ্ন করে আমি তাদের মনের চাহিদা মেটাতে পারব কি না। রাজনৈতিক কুয়াশার আলাপ এখানে শেষ করে, প্রকৃতির কুয়াশা নিয়ে আলাপ করি।

কুয়াশার সাথে যানজটের সমস্যা নিয়েও কথা বলছি। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে বিভিন্ন কোম্পানির ভালো বাসগুলোতে যাত্রী হিসেবে দিনে এবং রাতে আমি অসংখ্যবার যাওয়া-আসা করেছি। ততোধিকবার নিজের গাড়িতে করে যাওয়া-আসা করেছি। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে যানজটগুলো যেসব কারণে হয় তার মধ্যে কয়েকটি আমার পর্যবেণের আলোকে তুলে ধরছি। প্রথম কারণ, মহাসড়কটির ওপরে প্রচুরসংখ্যক হাটবাজার আছে। হাটবাজার ছাড়াও ব্যবসায় কেন্দ্র আছে। অন্যান্য জায়গায় রাস্তাগুলো যতটুকু চওড়া, হাটবাজার বা ব্যবসায় কেন্দ্রগুলোতেও মহাসড়কের চওড়া ততটুকুই, দু-একটি জায়গায় ব্যতিক্রম হিসেবে প্রশস্ততা অল্প বৃদ্ধি আছে। ওই হাটবাজারগুলো বা ব্যবসায় কেন্দ্রগুলোতে সব সময়ই মানুষজন থাকে, ট্রাক বা ভ্যানগাড়ি থেকে মাল উঠানো-নামানো হয় এবং বাসে প্যাসেঞ্জার ওঠানামার জন্য দীর্ঘ সময় লাগে অথবা প্যাসেঞ্জার তোলার জন্য খালি গাড়ি অনেকণ দাঁড়িয়ে থাকে। অতএব রাস্তার দুইপাশে প্রায় সময়ই বাস বা ট্রাক বা ভ্যানগাড়ি দাঁড়ানো অবস্থায় পাওয়া যায়। এরা জায়গা দখল করে রাখে, ফলে মহাসড়কে চলাচলকারী গাড়ির জন্য রাস্তাটি সরু হয়ে যায়। ফলে উভয় দিক থেকে গাড়ি দ্রুত এলেও হাটবাজার বা ব্যবসায় কেন্দ্রগুলো অতিক্রম করে যেতে দীর্ঘ সময় লেগে যায়। অতএব যানজট হয়ে পড়ে অবশ্যম্ভাবী। দ্বিতীয় কারণ, কোনো-না-কোনো জায়গায় প্রতিনিয়তই ট্রাকের চাকা পাংচার হয় অথবা ‘একসেল’ ভেঙে যায়। যে জায়গাতে চাকা নষ্ট হয় বা ট্রাক ভেঙে যায় সেই জায়গায় ওই ট্রাকটির কারণে সড়ক চিকন হয়ে যায়। উভয় দিক থেকে গাড়ি দ্রুত এলেও এখানে এসে আটকে যায়। দুই দিকে গাড়ি জমতে থাকে ও জ্যাম সৃষ্টি হয়। তৃতীয় কারণ, প্রতিনিয়তই গাড়িঘোড়ার অ্যাক্সিডেন্ট হচ্ছে। অ্যাক্সিডেন্টের কারণে গাড়ি রাস্তার নিচে পড়ে যায়, মানুষ মারা যায় এবং আহত হয়। দুর্ঘটনাকবলিত গাড়িগুলো যে জায়গায় দণ্ডায়মান থাকে সেই জায়গায় মহাসড়ক সরু হয়ে যায়। দুর্ঘটনাকবলিত গাড়িকে উদ্ধার করার জন্য অনেক সময় উদ্ধারকারী গাড়ি যখন উদ্ধারকাজ শুরু করে তখন রাস্তা আরো সরু হয়ে যায়। ফলে যানজট তীব্রতর হয়। আরো কারণ আছে, তবে আমার এই মুহূর্তের আলোচনায় চতুর্থ কারণই শেষ কারণ। এই কারণটির শিরোনাম হচ্ছে, মহাসড়ক ব্যবহারকারীদের অধৈর্য ও নিয়মভঙ্গের প্রবণতা। একটু ব্যাখ্যা করি। অনেক টাকা খরচ করে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে অনেকটুকু জায়গায় রাস্তার মাঝখানে ডিভাইডার বসানো হয়েছে। ডিভাইডার বসানোর উদ্দেশ্য হচ্ছে, উভয় দিকের যান চলাচলকে যার যার জন্য একমুখী করা। যেন এক দিকে চলাচলে অসুবিধা হলেও অপর দিকের ব্যবহারকারীদের যেন অসুবিধা না হয়। কিন্তু বাস্তবতা হলো, যেকোনো এক দিকে জ্যাম লেগে গেলে ব্যবহারকারীরা গাড়ি নিয়ে রাস্তার অপর সাইড ব্যবহার করা শুরু করে দেয়। যার কারণে অপর সাইডের গাড়িগুলোও আর আসতে পারে না। এমন এমন জায়গায় গাড়ির জ্যাম লাগে যেখানে কোনো গাড়িকে ডানে-বাঁয়ে করা বা আগে-পিছে করা এবং জ্যাম ছুটানো অসম্ভব হয়ে পড়ে। আমি ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ককে উদাহরণ হিসেবে আলোচনা করছি। কারণ, এই সড়কে জনগণের দুর্ভোগ প্রায়ই সংবাদ শিরোনাম হচ্ছে।

এই বিপদ থেকে বের হওয়ার জন্য বেশ কিছু পদপে নেয়া প্রয়োজন। জনগণ সাধারণভাবে হাইওয়ে পুলিশের সহায়তা কামনা করে। কিন্তু যেখান থেকে জ্যাম শুরু হয় সেখানে হাইওয়ে পুলিশ পৌঁছতে পারে না, এই সমস্যা সমাধান করা প্রয়োজন। কোনো দুর্ঘটনার কারণে জ্যাম শুরু হলে ওই খবর পুলিশের কাছে পৌঁছতে সময় লাগে। ততণে ট্রাফিক জ্যাম গুরুতর হয়ে যায়। কিভাবে পুলিশের কাছে দ্রুত খবর পৌঁছানো যায় সেটারও রাস্তা বের করা প্রয়োজন। মহাসড়কের যানজটে আটকে পড়া মানুষের মধ্যে পুরুষ, মহিলা, শিশু সবাই থাকে। আলোচনার জন্য একটি উদাহরণ দিই। ৩ জানুয়ারি ২০১৩ বৃহস্পতিবার রাত ১১টা ৩০ মিনিটে ঢাকা থেকে একটি নামীদামি কোম্পানির বাস ছাড়ল চট্টগ্রামের উদ্দেশে। সেই গাড়ি চট্টগ্রাম মহানগরে জিইসির মোড়ের কাছে তথা গরিবুল্লাহ শাহ র:-এর মাজারের কাছে পৌঁছানোর জন্য স্বাভাবিক সময় ছিল শুক্রবার সকাল ৬টা থেকে ৮টার মধ্যে যেকোনো সময়। আসলে পৌঁছল সন্ধ্যা ৭টা ৩০ মিনিটে। ওই গাড়িতে সাত-আটজন মহিলা ছিলেন, চার-পাঁচজন শিশু ছিল। গাড়িটি মেঘনা ব্রিজের পরে (বা দাউদকান্দির পরে) গৌরীপুর এলাকায়ই অনেকণ আটকে ছিল। তারপর কুমিল্লা পার হওয়ার পরও বিভিন্ন জায়গায় আটকে ছিল। আমাদের দেশের বাসগুলোতে কোনো টয়লেট বা বাথরুম সুবিধা নেই। কিঞ্চিত সুপরিকল্পনার কারণে সিএনজি স্টেশনগুলোতে টয়লেট বা বাথরুম সুবিধা আছে। কিন্তু যখন যানজটে গাড়িগুলো দাঁড়িয়ে থাকে তখন সব গাড়ি তো সিএনজি স্টেশনের সামনে থাকে না। তাহলে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বাসে বসে থাকা যাত্রীদের টয়লেট বা বাথরুমের প্রয়োজন হলে কী সমাধান আছে? বাংলাদেশের গ্রামবাংলার অভ্যাস মতে, পুরুষেরা ‘প্রকৃতির ডাকে সাড়া দেয়া’র জন্য প্রকৃতিকে (তথা ঝোপঝাড়, গাছের আড়াল, েেতর আইল, খালের গর্ত, রাস্তার ঢাল ইত্যাদি) বেছে নিতে পারে। কিন্তু মহিলা ও শিশুদের কী হবে? বাস বা প্রাইভেট কার থেকে নেমে মহিলা ও শিশুদের নিকটতম কোনো গ্রামের বাড়িতে যাওয়া ছাড়া আর কোনো উপায় থাকে না; তাও যদি নিকটে কোনো গ্রামের বাড়ি থাকে।

অতএব জনগণের কল্যাণের জন্য যদি সরকার হয়, জনগণের কল্যাণের জন্য যদি রাজনীতি হয় তাহলে জনগণের সুবিধা-অসুবিধা চিন্তা করে তার জন্য সমাধান বের করা ফরজ কাজ। আমি প্রস্তাব করছি হাইওয়ে পুলিশের সংখ্যা বাড়াতে, হাইওয়ে পুলিশের ক্যাম্প বাড়াতে এবং বিদ্যমান পেট্রলপাম্প বা হাটবাজারে টয়লেট বা বাথরুম সুবিধা সৃষ্টি করতে যেগুলোতে মানুষ যেতে পারবে। দুর্ঘটনায় পতিত হলে বা গাড়ি খারাপ হয়ে গেলে উদ্ধারকর্ম পরিচালনার জন্য দ্রুততম সময়ে যেন উদ্ধারকারী গাড়ি অকুস্থলে পৌঁছতে পারে তার জন্য প্রাইভেট সেক্টরের উদ্যোগে বা সরকারি উদ্যোগে মহাসড়কের গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোতে এইরূপ গাড়ি অবস্থান করার সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে। সবচেয়ে বড় প্রয়োজন, নিকটতম হাইওয়ে পুলিশ যেন গাড়ি খারাপ হওয়ার সংবাদ বা দুর্ঘটনার সংবাদ পায় তার পদ্ধতি বের করা। হাটবাজার বা ব্যবসায় কেন্দ্রগুলোতে গাড়িঘোড়া চলাচলকে উন্মুক্ত রাখতে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ বা উপজেলা পরিষদকে কাজে লাগাতে হবে। স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ বা উপজেলা পরিষদের উদ্যোগে বেতনভুক্ত সেবাকর্মী বা কমিউনিটি পুলিশ নিয়োগ করে রাস্তাকে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। তার জন্য যদি পয়সা খরচ হয় সেই খরচ যানবাহনগুলো থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে তোলা যেতে পারে। এইসব কাজ করতে গেলে একাধিক মন্ত্রণালয়ের মধ্যে সমন্বয়ের প্রয়োজন। সমন্বয় করার জন্য কোনো না কোনো মন্ত্রণালয়কে ‘লিড’ ভূমিকা বা উদ্যোগী ভূমিকা নিতে হবে। আমার মূল্যায়নে এটা যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের সড়ক বিভাগের কাজ। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় অবশ্যই জড়িত থাকবে। সর্বোপরি মনে রাখতে হবে, যে হারে যাত্রীর সংখ্যা বাড়ছে সেই হারে গাড়ির সংখ্যা বাড়ে না। আবার যে হারে গাড়ির সংখ্যা বাড়ে সেই হারে নতুন সড়ক সৃষ্টি হয় না বা পুরনো সড়কগুলোর সংস্কার হয় না। আমরা সব কিছুই করি অসুবিধায় পড়ার পর, দুর্ঘটনায় পড়ার পর, কাদা ছোড়াছুড়ি করার পর, রক্তাক্ত ঘটনা ঘটার পর। এর ব্যতিক্রম প্রয়োজন এবং সেটাকে সম্ভব করার জন্যই ‘পরিবর্তনের জন্য রাজনীতি’Ñ এই মূলমন্ত্র নিয়ে পরিশ্রম করছি।

লেখক : চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি

www.kallyan-ibrahim.com

No comments

Powered by Blogger.