দু'বছরের মধ্যে জাতীয় গ্রিডে আসছে সাত হাজার মে.ও. বিদ্যুত- সিদ্ধিরগঞ্জ বিদ্যুত কেন্দ্রের প্রথম ইউনিট উদ্বোধনকালে প্রধানমন্ত্রী

 প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, দীর্ঘ দিনের অচল অবস্থা কাটিয়ে আবারও বিদ্যুত খাতে ঘুরে দাঁড়াচ্ছে। রবিবার সিদ্ধিরগঞ্জ বিদ্যুতত কেন্দ্রের ১২০ মেগাওয়াটের প্রথম ইউনিটের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের সময় শেখ হাসিনা বলেন,
দুর্নীতির রাহুগ্রাসের মাধ্যমে বিগত বিএনপি-জামায়াত জোট এবং দুর্নীতি নামক জুজুর ভয় দেখিয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকার দেশে বিনিয়োগ মন্দা সৃষ্টি করেছিল। বর্তমান সরকারের ইতিবাচক পদৰেপে উদ্যোক্তারা বাংলাদেশে বিনিয়োগের ব্যপক আগ্রহ প্রকাশ করেছে। এসব বিনিয়োগ কাজে লাগিয়ে আগামী ২ বছরের মধ্যে জাতীয় গ্রিডে নতুন সাত হাজার মেগাওয়াট বিদু্যত যোগ করা হবে।
রবিবার প্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধিরগঞ্জ যাওয়ার খবরে বিপুলসংখ্যক দলীয় নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষ প্রধানমন্ত্রীকে এক নজর দেখার জন্য রাসত্মার দু'পাশে সমবেত হন। এ সময় প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানানোর জন্য তাদের হাতে নানা রঙের ফুল, বেলুন ও ফেস্টুন ছিল। প্রধানমন্ত্রীকে নারায়ণগঞ্জবাসীর পৰ থেকে স্বাগত জানিয়ে দলীয় নেতাকর্মীরা ১১টি তোরণ নির্মাণ করে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকার গঠনের মাত্র এক বছরের মধ্যে নতুন বিদ্যুত কেন্দ্র উদ্বোধন করতে পারা সরকারের একটি বড় সাফল্য। এটি একটি মাইল ফলক হয়ে থাকবে। প্রধানমন্ত্রী বিগত আওয়ামী লীগ শাসনামলের কথা উল্লেখ করে বলেন, আমরা ১৯৯৬ সালে এক হাজার ৬০০ মেগাওয়াট বিদ্যুত উৎপাদন নিয়ে যাত্রা শুরু করেছিলাম। মাত্র পাঁচ বছরের মধ্যে উৎপাদন বেড়ে দাঁড়িয়েছিল ৪ হাজার ৩০০ মেগাওয়াটে। তিনি বর্তমান সরকারের শুরুর দিকের কথা উলেস্নখ করে বলেন, আমরা দায়িত্ব নেওয়ার সময় বিদ্যুত উৎপাদনের পরিমাণ ছিল ৩ হাজার ২৬৭ মেগাওয়াট, যা বর্তমানে বেড়ে ৪ হাজার ২৯৬ মেগাওয়াটে দাঁড়িয়েছে।
বিগত বিএনপি জামায়াত জোট সরকারের কথা উলেস্নখ করে বলেন, ওই সরকার বিদ্যুতখাত থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা লুটপাট করেছে। পাঁচ বছরে জনগণকে এক মেগাওয়াটও বিদু্যত দিতে পারেনি। বিদু্যতের ক্রমবর্ধমান চাহিদা সৃষ্টি হলেও জোট সরকারের দুর্নীতি আর হাজার হাজার কোটি টাকা লুটপাটের কারণে সঙ্কট মোকাবেলা করা সম্ভব হচ্ছে না।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ২ বছরে দুর্নীতি বিরোধী অভিযানের কথা উলেস্নখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দুর্নীতি বিরোধী অভিযান রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হওয়ায় ব্যবসায়ী এবং বিদেশী বিনিয়োগকারীদের মধ্যে ভীতি সঞ্চার হয়েছিল। এ পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসতে আমাদের যথেষ্ট বেগ পেতে হচ্ছে। তিনি বলেন, আমি সকলকে বলেছি দেশের মানুষের জন্য কাজ করে যদি মামলা খেতে হয়, জেলে যেতে হয়, তাহলেও আমরা দেশের মানুষের জন্য কাজ করে যাব।
তিনি বলেন, বর্তমান সরকার দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের স্বার্থে জ্বালানিখাতকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে স্বল্প, মধ্য এবং দীর্ঘ মেয়াদী পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে। ২০১১ সালের মধ্যে ৮২০ মেগাওয়াট পিকিং পাওয়ার পস্নান্ট, ২০১৩ সালের মধ্যে কয়লাভিত্তিক ২ হাজার ৬০০ মেগাওয়াটসহ নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহারের মাধ্যমে মোট ৭ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুত উৎপাদন করার লৰ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। ভাড়াভিত্তিক বিদু্যত কেন্দ্রের চুক্তি স্বাৰরের কথা উলেস্নখ করে বলেন, স্বল্প মেয়াদে বিদু্যত সঙ্কট নিরসনের জন্য সরকার এ উদ্যোগ নিয়েছে। তিনি বলেন, বর্তমানে দেশের ৪৭ ভাগ জনগোষ্ঠী বিদ্যুত সুবিধা পাচ্ছে। ২০২১ সালের মধ্যে দেশের শতভাগ মানুষকে বিদু্যত সুবিধা দেয়ার লৰ্য নিয়ে আমরা কাজ করছি। নতুন বিদু্যত কেন্দ্র নির্মাণের জন্য বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে সরকার লন্ডন, নিউইয়র্ক এবং সিঙ্গাপুরে রোডশো করেছে। এতে বিদেশী কোম্পানি এবং প্রবাসী বাংলাদেশীরা বিনিয়োগের ব্যাপক আগ্রহ দেখিয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিগত বিএনপি-জামায়াত জোট দেশে গ্যাস নিয়ে অপপ্রচার করেছে। এতে দেশে গ্যাসের অপচয় বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রধানমন্ত্রী গ্যাস এবং বিদু্যত ব্যবহারের ৰেত্রে সকলকে সাশ্রয়ী হওয়ার আহ্বান জানান। কেবলমাত্র তেল এবং গ্যাসের উপর নির্ভরতা কমিয়ে নবায়নযোগ্য জ্বালানী ব্যবহারের উপর গুরম্নত্বারোপ করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি সকল ব্যবসায়ী এবং সাধারণ জনগণকে সৌরবিদু্যত ব্যবহারে মনোযোগী হওয়ার আহ্বান জানান।
স্থানীয় সংসদ সদস্য আব্দুলস্নাহ আল কায়সারের দাবির প্রেৰিতে প্রধানমন্ত্রী বলেন, নারায়ণগঞ্জকে ঢাকা মহানগরীর অনত্মর্ভুক্ত করা হবে। ডিএনডি বাঁধের জলাবদ্ধতা দূর করার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তিনি বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে আদমজী জুট মিল বন্ধ করে দেয়া প্রসঙ্গে মনত্মব্য করতে গিয়ে বলেন, আদমজী জুট মিল বন্ধ করে দিয়ে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার তখন ১ কোটি লোকের পেটে লাথি মেরেছে। সরকার আদমজী মিলের ২ নং ইউনিট চালু করার ব্যাপারে উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। ইতোমধ্যে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে উলেস্নখ করে তিনি বলেন, ওই কমিটি এ বিষয়ে রিপোর্ট পেশ করার পর কার্যকর পদৰেপ নেয়া হবে। এছাড়া সোনারগাঁওয়ে একটি স্টেডিয়াম নির্মাণ করাসহ গাজীপুর থেকে ঢাকা হয়ে নারায়ণগঞ্জ পর্যনত্ম একটি এলিভেটেড এ্ক্সপ্রেস ওয়ে নির্মাণসহ রেল ও নৌপথ উন্নয়নের মাধ্যমে নারায়ণগঞ্জের অতীত ঐতিহ্য ফিরিয়ে দেয়া হবে।
এখানে প্রধানমন্ত্রীর জ্বালানি বিষয়ক উপদেষ্টা তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী, বিদু্যত প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ ইনামুল হক, বিদু্যত সচিব আবুল কালাম আজাদ, এডিবির প্রতিনিধি পল জে হেটেন্স ইজিসিবি'র ব্যবস্থাপনা পরিচালক মতৃর্ুজা আলী বক্তব্য রাখেন। অনুষ্ঠানে মন্ত্রী, উপদেষ্টা, হুইপ, সংসদ সদস্য ছাড়াও উর্ধতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
প্রসঙ্গত, ২০০৪-০৫ অর্থবছরে ঢাকার অদূরে সিদ্ধিরগঞ্জে ২৪০ মেগাওয়াটের বিদু্যত কেন্দ্র নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়। এতে মোট প্রকল্প ব্যয় ধরা হয় এক হাজার ১৩৩ কোটি টাকা। প্রকল্পে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক ৭৯১ কোটি টাকা প্রকল্প সাহায্য হিসেবে দিয়েছে। প্রকল্প বাসত্মবায়ন করেছে ইলেক্ট্রিসিটি জেনারেশন কোম্পানি অব বাংলাদেশ (ইজিসিবি) লিঃ। ১২০ মেগাওয়াটের প্রথম ইউনিটটি গত নবেম্বর মাস থেকে উৎপাদন শুরম্ন করেছে। ইজিসিবি সূত্র জানিয়েছে, আগামী মার্চে ১২০ মেগাওয়াটের অপর ইউনিটটি উৎপাদন শুরম্ন করবে। সিদ্ধিরগঞ্জের অদূরে আরও ২টি ১৫০ মেগাওয়াট ৰমতা সম্পন্ন বিদু্যত কেন্দ্র নির্মাণ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। এ ছাড়া একই এলাকায় আরও ৪৫০ মেগাওয়াটের কম্বাইন্ড সাইকেল বিদু্যত কেন্দ্র নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের।

No comments

Powered by Blogger.