জামায়াত শিবিরের অপকর্মের দায় নেবে না বিএনপি by সোহেল রহমান

 নিজেদের বাঁচাতে কৌশলী অবস্থান নিয়েছে জামায়াত-শিবির। শক্তি বাড়াতে কাছে টানতে চাইছে বিএনপিকে। শিবিরকমর্ী আটকের ঘটনাকে ভিন্নরূপ দিয়ে সরকারবিরোধী আন্দোলন গড়ে তোলার জন্য বিএনপির ওপর চাপ দিচ্ছে দলটি।
তবে জামায়াত-শিবিরের অপকর্ম নিজেদের কাঁধে দিতে নারাজ বিএনপির শীর্ষ নেতৃবৃন্দ। তাঁদের অভিমত, এ মুহূর্তে জামায়াতের মতলবী ফাঁদে পা দিলে বিএনপি তিগ্রসত্ম হবে। নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর থেকে বিএনপি ও জামায়াতের মধ্যে দূরত্ব তৈরি হলেও জামায়াত নেতারা নিজেদের প্রয়োজনে এখন বিএনপিকে নিয়ে জোটবদ্ধ আন্দোলন চায়। দলবল ভারি করতে শনিবার রাতে দলটির আমির মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার কাছে ছুটে যান। প্রায় একই সময়ে ছাত্রশিবির ও ছাত্রদলের শীর্ষনেতাদের বৈঠক হয়। একইভাবে শিবির নেতারাও সারাদেশের শিা প্রতিষ্ঠানে একযোগে কর্মসূচী দিতে ছাত্রদলের সহযোগিতা চান।
নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর থেকে রাজনীতিতে অনেকটা ঘাপটি মেরে বসে ছিল জামায়াত। বিএনপির সঙ্গে জোট বেঁধে নির্বাচন করলেও নির্বাচনপরবতর্ী সময়ে বিএনপির পাশে দাঁড়ায়নি জামায়াত নেতৃবৃন্দ। বিশেষ করে বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়াকে ক্যান্টনমেন্টের বাড়ি ছেড়ে দিতে সরকারী উকিল নোটিস, নির্বাচনের পর সারাদেশে বিএনপি নেতাকমর্ীদের ওপর নির্যাতন, বিভিন্ন মামলায় দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে জড়ানোর চেষ্টার প্রতিবাদসহ বিএনপির স্বার্থসংশিস্নষ্ট কোন বিষয়ে বিএনপির সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেনি জামায়াত। বিএনপির প থেকে জোটগতভাবে কর্মসূচী দেয়ার অনুরোধ জানানো হলেও তাতে কোন ধরনের আগ্রহ দেখায়নি জামায়াত। এমনকি জামায়াতের প থেকে কোন ধরনের প্রতিবাদ জানিয়ে একটি বিবৃতিও দেয়া হয়নি। জামায়াতের এ নীরবতায় সে সময় বিএনপির শীর্ষ নেতৃবৃন্দ দলটির ওপর অনেকটা ুব্ধ হয়েছেন। ফলে গত কয়েকদিনে সারাদেশে কয়েক শ' শিবিরকমর্ী গ্রেফতার হলেও বিএনপির প থেকে কোন আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানানো হয়নি।
তবে এখন হঠাৎ করেই অবস্থান পরিবর্তন করেছে জামায়াতের নেতারা। শিবিরবিরোধী অভিযান শুরম্ন হওয়ার পর জোটগত শক্তি বাড়ানোর চেষ্টায় নেমেছে জামায়াত। এর অংশ হিসেবে শনিবার রাতে জামায়াতপ্রধান মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী অনেকটা গোপনে বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করেছেন। রম্নদ্ধদ্বার এ বৈঠক সম্পর্কে একাধিক সূত্র জানায়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগকর্মী ফারম্নক হোসেন নিহত হওয়ার জের ধরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী শিবিরবিরোধী অভিযান শুরম্ন হওয়ার পর জামায়াত তাদের চারদলীয় জোটের প্রধান শরিক দল বিএনপির দ্বারস্থ হয়। এ সময় নিজামী জামায়াত-শিবিরের ওপর সরকারের এ্যাকশনের চিত্র তুলে ধরে সরাসরি বিএনপির সহযোগিতা চান। এ সময় তিনি জোটগতভাবে সরকারবিরোধী আন্দোলন গড়ে তোলার জন্য বেগম জিয়াকে অনুরোধ করেন। নিজামী খালেদা জিয়াকে বোঝানোর চেষ্টা করেন, সরকার কেবলমাত্র জামায়াত বা শিবিরের বিরম্নদ্ধে অভিযান পরিচালনা করছে না, এটি বিএনপিসহ চারদলীয় জোটের বিরম্নদ্ধেও সরাসরি আঘাত। এ জোটগতভাবে কোন কর্মসূচী দেয়া না হলে এরপর সরকার বিএনপি নেতাকর্মীদেরও একই কায়দায় গ্রেফতার করবে। এ সময় তিনি জানান, সরকার ভারতের সঙ্গে অসম চুক্তি এবং ভারতবিরোধী আন্দোলনকে দানা বাঁধতে না দেয়ার কৌশল হিসেবে শিবিরকমর্ীদের আটক করছে। এ ঘটনাকে আনচ্যালেঞ্জে ছেড়ে দেয়া হলে পরবতর্ীতে বিএনপির ওপরও একই আঘাত নেমে আসবে। ফলে জোটগতভাবে কর্মসূচী দিয়ে চারদলীয় জোটের ঐক্যবদ্ধ অবস্থান তুলে ধরা ছাড়া আর কোন পথ খোলা নেই। নিজামী এ ব্যাপারে দলীয়ভাবে বিএনপির অবস্থানও জানতে চান।
এ সময় বেগম জিয়া জোটগতভাবে আন্দোলন কিংবা কর্মসূচী দেয়ার ব্যাপারে নিজামীকে কোন আশ্বাস দেননি। তিনি জানিয়েছেন, দলীয় ফোরামে আলোচনার মাধ্যমে পরবতর্ী করণীয় নিধর্ারণের কথা জানান। বিএনপির একাধিক সূত্র জানিয়েছে, সম্প্রতি শিবিরবিরোধী অভিযানের পুরো বিষয়টি বিএনপির প থেকে গভীরভাবে পর্যবেণ করা হচ্ছে। অতীতে জামায়াতের মতলবী ভূমিকার কারণে বিএনপির প্রথম সারির নেতাদের অনেকেই জামায়াতের জন্য এ মুহূর্তেই সরকারবিরোধী আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়ার পপাতী নয়। বরং পরিস্থিতি পর্যবেণ করে দলীয়ভাবে প্রতিক্রিয়া জানানোর জন্য তাঁরা চেয়াপার্সনকে অনুরোধ করেছেন। তাঁরা জামায়াতের অপকর্মের দায়ভার কোনভাবেই নিজেদের ঘাড়ে নিতে চান না। তাঁদের যুক্তি, বিপদে পড়েই এখন জামায়াত বিএনপির দ্বারস্থ হয়েছে। বিএনপির ঘাড়ে বন্দুক রেখে স্বার্থ হাসিল করতে চাইছে। জামায়াতে কথায় এখনই সরকারবিরোধী আন্দোলনে যোগ দিলে বিএনপি দলীয়ভাবে তিগ্রসত্ম হবে।
সূত্র জানায়, শনিবার রাতে খালেদা-নিজামী বৈঠকের পর রবিবার রাজধানীর একটি হোটেলে ছাত্রদলের শীর্ষ নেতৃবৃন্দের সঙ্গে বৈঠক করে শিবিরের শীর্ষ নেতৃবৃন্দ। বৈঠকে শিবির সভাপতি রেজাউল করিম শিবিরের আন্দোলনে ছাত্রদলের সমর্থন চান। বিশেষ করে শিা প্রতিষ্ঠানগুলোতে ছাত্রদলকে পাশে থাকার প্রসত্মাব করে শিবির। তবে বিএনপির পথ অনুসরণ করেই ছাত্রদল এ ব্যাপারে সরাসরি কোন আশ্বাস দেয়নি বলে জানা গেছে। ছাত্রদল শিবির নেতৃবৃন্দকে জানিয়ে দিয়েছে এ ধরনের সিদ্ধানত্ম নিতে হলে আগে বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে আলোচনা করতে হবে।

No comments

Powered by Blogger.