সাধারণ মানুষের কথা- ‘অহন ব্যাডারে খুইজ্জা পাইলে হয়’ by আশীষ-উর-রহমান

‘রায় তো দিল। অহন ব্যাডারে খুইজ্জা পাইলে হয়। দেখা যাইব হেই ব্যাডায় পলায়া থাইক্যই মইরা যাইব। ফাঁসিই যদি না হয়, তয় এত্ত বিচার-আচার বেহুদা খাটুনিই সার।’
এমনই মন্তব্য করলেন নয়াপল্টনের সিটি হার্ট সুপার মার্কেটের লিটন ফেব্রিক্সের বিক্রয় প্রতিনিধি ফারুক হোসেন। তাঁর ধারণা, আবুল কালাম আযাদকে খুঁজেই পাওয়া যাবে না। অন্য দেশে গিয়ে ঘাপটি মেরে থাকবে। ফারুকের সহজ যুক্তি ‘যেই ব্যাডা পলাইয়া রইছে, হ্যার বিচার করণের আগে যাগো ধরতে পারছে, হ্যাগো বিচার করণ আছিল।’
স্বাধীনতার পর রাজনৈতিক অঙ্গনে নানা পালাবদলের প্রক্রিয়ায় একাত্তরের পরাজিত শক্তি সমাজে পুনঃ প্রতিষ্ঠিত হলেও যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবি থেকে এ দেশের গণমানুষ কখনো সরে আসেনি। জনগণের বিপুল প্রত্যাশা ছিল, কোনো না কোনো দিন এই ঘৃণ্য অপরাধের বিচার এ দেশের মাটিতে হবেই।
গতকাল সেই প্রত্যাশা পূরণের পথে প্রথম একজন যুদ্ধাপরাধী জামায়াতে ইসলামীর সাবেক রুকন আবুল কালাম আযাদ ওরফে বাচ্চু রাজাকারের বিচারের রায় ঘোষিত হওয়ার পর সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষ এই সাজা যুদ্ধাপরাধীদের প্রাপ্য ছিল বলেই মন্তব্য করেছেন।
স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সিদ্ধেশ্বরী ক্যাম্পাসে কথা হলো ফিল্ম অ্যান্ড মিডিয়া বিভাগের শিক্ষার্থী গোলাম মর্তুজা ও সৌরভ সাহার সঙ্গে। তাঁদের মন্তব্য, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার না করায় দেশের জন্য যাঁরা জীবন উত্সর্গ করেছেন, ত্যাগ স্বীকার করেছেন, তাঁদের কাছে জাতি অপরাধী হয়ে আছে। এই রায়ের মধ্য দিয়ে সেই দায় কিছুটা হলেও শোধ হলো। একই সঙ্গে তাঁরা বলেছেন, দেশের গণতান্ত্রিক বিকাশের জন্যও এই বিচার হওয়া প্রয়োজন।
বিচারকাজ যেন স্বচ্ছতার সঙ্গে সম্পন্ন হয়, সেই বিষয়টির প্রতি গুরুত্ব দিলেন শান্তিনগর মোড়ের ওষুধ ব্যবসায়ী ফারজানা ড্রাগসের নজরুল ইসলাম। বললেন ‘দেশ স্বাধীন না হলে আজ হয়তো এমন স্বাধীনভাবে ব্যবসা করতে পারতাম না। সেই স্বাধীনতাযুদ্ধে যারা শত্রুর সঙ্গে হাত মিলিয়েছে, তাদের কঠিন শাস্তিই হওয়া উচিত। তবে যে যেমন অপরাধের সঙ্গেই জড়িত থাকুক না কেন, বিচারটি স্বচ্ছ হতে হবে।’
সরকার আরও দায়িত্বশীল হলে বিচারটি আরও আগেই সম্পন্ন হতে পারত বলে মন্তব্য নয়াপল্টনের ‘স্ট্যান্ডার্ড মটরস’-এর মোটর গাড়ির ব্যবসায়ী আবুল হোসেনের। তাঁর সাফ কথা, ‘আমরা ব্যবসায়ী মানুষ। এই বিচার নিয়ে যে উত্তেজনা-অস্থিরতা সৃষ্টি হয়েছে, তাতে আমাদের ব্যবসার ক্ষতি হচ্ছে। দ্রুত এসব মামলা-মোকদ্দমা শেষ করে যারা অপরাধী তাদের সাজা দিয়ে ঝামেলা মিটিয়ে ফেলা হোক।’
গাজীপুরের কাপাসিয়ার টিটো রহমান বহু বছর থেকে নিউজিল্যান্ডপ্রবাসী। পেশায় চিকিত্সক। তিনি ওই দেশের নাগরিকত্বও পেয়েছেন। সম্প্রতি দেশে এসেছেন। বিদেশে থাকলেও দেশের প্রতি টান কমেনি মোটেই। কথা হলো কাকরাইল মসজিদের সামনে, নামাজ আদায় করে বের হচ্ছিলেন সন্ধ্যায়। বললেন, ‘যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হবে, রায় হয়েছে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু দেশে আরও যে মানুষ প্রতিনিয়ত খুন হচ্ছে, তাদের হত্যার বিচার যথাযথভাবে হওয়া প্রয়োজন। এবার এসে দেখছি, বাচ্চারা ধর্ষিত হচ্ছে, খুন হচ্ছে, এটা বন্ধ করতেও কিন্তু দ্রুত বিচার ও কঠিন সাজার প্রয়োজন।’
আমিন মোহাম্মাদ ফাউন্ডেশনের সেলস বিভাগের কর্মকর্তা আবু সালেহ মুহম্মদ মুসা ও শামিম রেজার সঙ্গে কথা হলো বিজয়নগরে অফিস শেষে বাড়ি ফেরার সময়। তাঁরা প্রথম যা বললেন তা হলো, ‘এই একটি রায় দিয়েই যেন বিচারকাজ থেমে না যায়।’ তাঁদের মন্তব্য, বহু প্রতীক্ষার পর এই বিচার শুরু হয়েছে, একজনের সাজা হলো। এখন অন্যদেরও আনতে হবে বিচার ও সাজার আওতায়। এমনই মন্তব্য সমাজের বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষের।

No comments

Powered by Blogger.