নিহত ব্যক্তিদের স্বজনরা-সরকারের মেয়াদে ফাঁসি দেখতে চান

একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময় বাচ্চু রাজাকার হিসেবে পরিচিত জামায়াতের সাবেক সদস্য (রুকন) আবুল কালাম আযাদের হাতে নিহতদের স্বজনরা বলেছেন, পলাতক এ খুনিকে ধরে এনে ফাঁসি দিলে তাঁরা শান্তি পাবেন।
রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করে তাঁরা এ সরকারের মেয়াদে ফাঁসির আদেশ কার্যকরের দাবি জানিয়েছেন।
গতকাল সোমবার রায় ঘোষণার পর বাচ্চু রাজাকারের জেলা ফরিদপুর শহর, নগরকান্দা ও সালথা উপজেলা সদরে আনন্দ মিছিল করেছে আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন সংগঠন। এ আনন্দে শামিল হয়েছেন একাত্তরে আযাদের হাতে নির্যাতিত পরিবারের সদস্যরাও। নগরকান্দা উপজেলার যদুনন্দী ইউনিয়নের বড়খাড়াদিয়া গ্রামের বাসিন্দা আযাদ এলাকায় বাচ্চু রাজাকার নামে কুখ্যাত।
একাত্তরে ফরিদপুর শহরে জামায়াতে ইসলামী ও এর সহযোগী সংগঠন ইসলামী ছাত্র সংঘ এবং মাদ্রাসার ছাত্রদের নিয়ে আলবদর বাহিনী গঠিত হয় আযাদের নেতৃত্বে। ফরিদপুর সদর, নগরকান্দা, সালথা ও বোয়ালমারী থানা এলাকাসহ বিভিন্ন স্থানে পাকিস্তানিদের সহযোগী এ বাহিনী হত্যা, ধর্ষণ, লুটপাটসহ ব্যাপক তাণ্ডব চালায়।
যে কয়টি অপরাধে বাচ্চু রাজাকারের ফাঁসির আদেশ হয়েছে, এর মধ্যে আছে সালথা উপজেলার ফুলবাড়িয়া গ্রামের চিত্তরঞ্জন দাস হত্যাকাণ্ড। রায়ের প্রতিক্রিয়ায় চিত্তরঞ্জন দাসের স্ত্রী ও মামলার বাদী জোছনা রানী দাস কালের কণ্ঠকে বলেন, 'আমার স্বামীর হত্যাকারীর ফাঁসি হলে আমি শান্তি পাব। অকালে স্বামী ও তিন শিশুসন্তানকে হারিয়ে আমি যে যন্ত্রণা পেয়েছি, এর কিছুটা লাঘব হবে ওই হত্যাকারীর ফাঁসি হলে।'
রায় ঘোষণার খবর শুনে আনন্দে কেঁদে ফেলেন চিত্তরঞ্জন দাসের ছেলে গোপাল চন্দ্র বিশ্বাস। তিনি বলেন, 'বাচ্চু রাজাকার নিজ হাতে গুলি করে আমার বাবাকে হত্যা করেছে। আমি এতিম হয়ে জন্ম নিয়েছি। আমার বড় তিন ভাই ভারতের কল্যাণী ক্যাম্পে অপুষ্টির শিকার হয়ে মারা গেছে। মা আমাকে বুকের ধন হিসেবে আগলে রেখেছে।'
'চার দশক পর বাবার হত্যার বিচার পেয়ে আমি আনন্দিত। রায় কার্যকর হওয়ার পর আমাদের যন্ত্রণা-কষ্টের অবসান হবে। সরকারের কাছে আমার দাবি, পলাতক বাচ্চু রাজাকারকে ধরে এনে অবিলম্বে ফাঁসি দেওয়া হোক। এতে আমার বাবার আত্মা শান্তি পাবে', বলেন গোপাল চন্দ্র।
১৯৭১ সালের ৩ জুন আবুল কালাম আযাদের নেতৃত্বে ১০-১২ আলবদর সদস্য ফুলবাড়িয়ার হিন্দুপাড়ায় ঢুকে তাণ্ডব চালায় এবং গুলি করে চিত্তরঞ্জনকে হত্যা করে।
আযাদের হাতে নিহত সালথা উপজেলার পুরুরা গ্রামের মাধব চন্দ বিশ্বাসের ছেলে ও মামলার বাদী ভক্ত রঞ্জন বিশ্বাস বলেন, 'বাচ্চু রাজাকার আমার নিরীহ বাবাকে গুলি করে হত্যা করেছে। আমাদের সংসার শেষ করেছে। এবার আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর আমি বাবার হত্যার বিচার চেয়েছি। বিচারের রায় পেয়ে আমরা সন্তুষ্ট। আমাদের প্রত্যাশা অনুযায়ী রায় পেয়েছি। এখন সরকারের কাছে অবিলম্বে রায় বাস্তবায়নের দাবি জানাচ্ছি।'
১৯৭১ সালের ১৬ মে আযাদের নেতৃত্বে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর দোসররা পুরুরা গ্রামে হানা দেয় এবং মাধবকে গুলি করে হত্যা করে।

No comments

Powered by Blogger.