মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার-ফাঁসির আদেশে কলঙ্কমোচন শুরু

মুক্তিযুদ্ধের সময় সংঘটিত গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে সাবেক জামায়াত নেতা বাচ্চু রাজাকার হিসেবে পরিচিত আবুল কালাম আযাদকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে। গতকাল সোমবার বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ এই রায় ঘোষণা করেন।
মুক্তিযুদ্ধকালীন গুরুতর অপরাধের বিচারে এটিই প্রথম রায়। এর মধ্য দিয়ে ওই সব অপরাধের বিচার না হওয়ার দীর্ঘদিনের গ্লানি থেকে মুক্তির পালা শুরু হলো।
দুই নম্বর ট্রাইব্যুনাল কক্ষে স্থান সংকুলানের অভাবে গতকাল এক নম্বর ট্রাইব্যুনালের বিচার কক্ষে রায় ঘোষণা করা হয়। রায়ে বাচ্চু রাজাকারকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তবে তিনি গ্রেপ্তার হওয়ার পর কিংবা ট্রাইব্যুনাল অথবা অন্য কোনো আদালতে আত্মসমর্পণের পর এই রায় কার্যকর হবে বলেও উল্লেখ করা হয়।
রায়ে বলা হয়, আবুল কালাম আযাদের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের আটটি অভিযোগ গঠন করা হয়। এগুলোর মধ্যে সাতটি অভিযোগ সাক্ষীরা সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছেন। একটি অভিযোগ প্রমাণিত হয়নি। এ কারণে সাতটি অভিযোগে তিনি শাস্তি পাওয়ার যোগ্য। তবে চারটি অভিযোগে তাঁকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়ায় তিনটি অভিযোগে তাঁকে সাজা দেওয়ার প্রয়োজন নেই বলে রায়ে উল্লেখ করা হয়।
রায়ে আরো বলা হয়, আবুল কালাম আযাদ ওরফে বাচ্চু রাজাকার ফরিদপুর শহর ও এর আশপাশের এলাকায় হত্যা, গণহত্যা, লুটপাট, ধর্ষণ ও অগি্ন সংযোগের সঙ্গে জড়িত ছিলেন বলে সাক্ষ্যপ্রমাণে পাওয়া যায়। তিনি সেখানে রাজাকার বাহিনীর নেতৃত্ব দিয়েছেন। পরে আলবদর বাহিনীরও নেতৃত্ব দেন। তিনি এসব অপরাধ কর্মকাণ্ডে সরাসরি অংশ নেন।
রায়ের পর বাচ্চু রাজাকারের বিরুদ্ধে সাজা পরোয়ানা জারির নির্দেশ দেওয়া হয়েছে পুলিশ প্রশাসনকে।
রাষ্ট্রপক্ষ থেকে বলা হয়েছে, পর্যায়ক্রমে মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্তদের বিচার সম্পন্ন করা হবে। আপাতত আরো দুটি মামলা রায়ের অপেক্ষায় রয়েছে। জামায়াত নেতা আবদুল কাদের মোল্লার বিচারের রায় যেকোনো দিন ঘোষণার জন্য অপেক্ষমাণ রাখা হয়েছে। দলটির আরেক নেতা দেলাওয়ার হুসাইন সাঈদীর বিরুদ্ধে মামলার যুক্তিতর্ক শুনানি চলছে। শিগগিরই এ মামলার রায় ঘোষণার তারিখ নির্ধারণ করা হতে পারে।
শহীদ জননী জাহানারা ইমামের নেতৃত্বে ২০ বছর আগে এক গণ-আন্দোলন গড়ে উঠেছিল একাত্তরের ঘাতক-দালাল তথা মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচারের দাবিতে। গতকাল একজন ঘাতকের ফাঁসির রায় ঘোষণার মধ্য দিয়ে সেই আন্দোলন স্বার্থক হলো বলে মনে করেন বিশিষ্ট ব্যক্তিরা।
রায় উপলক্ষে পুরাতন হাইকোর্ট ভবনে স্থাপিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল এলাকায় গতকাল সকাল থেকেই ভিড় জমাতে শুরু করেন আইনজীবী, সাংস্কৃতিককর্মী, বুদ্ধিজীবী, সংবাদকর্মীসহ সাধারণ মানুষ। সকাল থেকে পুলিশ নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে রাখে গোটা এলাকা। সকাল ১০টার আগ পর্যন্ত ট্রাইব্যুনালে সংবাদকর্মীদের প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি। পরে ট্রাইব্যুনালের রেজিস্ট্রারের অনুমোদনপ্রাপ্ত সংবাদকর্মীরা ট্রাইব্যুনাল কক্ষে প্রবেশ করেন। কিছুক্ষণ পর ট্রাইব্যুনালের সামনে হাজির হন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম।
সকাল ১০টা ৪৭ মিনিটে দুই নম্বর ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বে তিন বিচারক এজলাসে উঠেন। অন্য দুই সদস্য হলেন বিচারপতি মো. মজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারক মো. শাহিনুর ইসলাম। এজলাসে উঠেই এ মামলার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে বিচারপতি ওবায়দুল হাসান রায় ঘোষণা শুরু করেন। তিনি বলেন, আজ রায় ঘোষণা হওয়ার পর রাষ্ট্রপক্ষ রায়ের অনুলিপি পাবে। তবে আসামি পলাতক থাকায় তিনি কোনো অনুলিপি পাবেন না। এ রায়টি মোট ১১২ পৃষ্ঠার, এতে ৩২৪টি অনুচ্ছেদ রয়েছে। তাই রায়ের সারসংক্ষেপ তিনি প্রকাশ্য ট্রাইব্যুনালে ঘোষণা করবেন। এক নম্বর ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি এ টি এম ফজলে কবীরের ভূমিকার প্রশংসা করে বিচারপতি ওবায়দুল হাসান বলেন, তিনি (বিচারপতি এ টি এম ফজলে কবীর) ট্রাইব্যুনাল-২-এর চেয়ারমান থাকাকালে আবুল কালাম আযাদের বিচার শুরু হয়। এ বিচারে তাঁর শ্রম ও অবদান রয়েছে।
এরপর ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান এক ঘণ্টা দুই মিনিট ধরে রায়ের উল্লেখযোগ্য অংশ পড়ে শোনান। সকাল ১১টা ৪৯ মিনিটে রায় ঘোষণা শেষ হয়। এরপর রায়ের অনুলিপি চিফ প্রসিকিউটর গোলাম আরিফ টিপু ও অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলমকে দেওয়া হয়।
এ বিচারের ক্ষেত্রে কোনো আসামি রায় ঘোষণার ৩০ দিনের মধ্যে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে আপিল করার সুযোগ পাবেন। তবে বাচ্চু রাজাকার পলাতক থাকায় এ সময়ের মধ্যে গ্রেপ্তার না হলে কিংবা আত্মসমর্পন না করলে আপিলের সুযোগ পাবেন না।
যেসব অভিযোগ প্রমাণিত : রায়ে আবুল কালাম আযাদের বিরুদ্ধে প্রত্যক্ষদর্শী ও শোনা সাক্ষীদের সাক্ষ্যগুলো পর্যালোচনা করে তিনটি হত্যা এবং একটি গণহত্যার অভিযোগে তাঁকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। রায়ে বলা হয়, আযাদ সরাসরি এসব ঘটনার সঙ্গে জড়িত ছিলেন। তিনি নিজে হত্যা, গণহত্যাসহ অন্যান্য ঘটনা ঘটাতে অংশ নেন। তিনি ও তাঁর সহযোগীরা এসব ঘটনা ঘটান। এতে আরো বলা হয়, বাচ্চু রাজাকার এলাকায় একটি নিজস্ব বাহিনী গড়ে তোলেন। ওই বাহিনীর নেতৃত্ব দেন তিনি। তিনি পাকিস্তানি সেনাদেরও বিভিন্ন অপরাধ করতে সহযোগিতা করেন।
যে চারটি অভিযোগে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে সেগুলো সম্পর্কে রায়ে বলা হয়, একাত্তর সালের ১৪ মে বিকেল ৩টার দিকে বোয়ালমারী থানাধীন কলারন গ্রামে তৎকালীন জমিদার সুধাংশু মোহন রায়কে অপহরণপূর্বক গুলি করে হত্যা ও তাঁর ছেলে মণিময় চন্দ্র রায় ওরফে কেস্টকে অপহরণপূর্বক হত্যার উদ্দেশ্যে গুলি চালিয়ে রক্তাক্ত জখম করার অপরাধ সাক্ষ্য-প্রমাণ দিয়ে প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছে রাষ্ট্রপক্ষ। এতে আরো বলা হয়, মুক্তিযোদ্ধাদের সহায়তা করায় একই বছরের ১৬ মে দুপুর ১টার দিকে সালথা (সাবেক নগরকান্দা) থানার পুরুরা নমপাড়া (পুইড্যা) গ্রামের মাধব চন্দ্র বিশ্বাস ও জ্ঞানেন্দ্র মণ্ডলকে অপহরণের পর নিজ হাতে গুলি চালিয়ে হত্যা করেন আজাদ। এ ঘটনার পর ওই গ্রাম থেকে পাঁচ-ছয় শ হিন্দু ভারতে চলে যেতে বাধ্য হয়।
আরেকটি অভিযোগ সম্পর্কে রায়ে বলা হয়, ১৯৭১ সালের ৩ জুন সকাল ১১টায় নগরকান্দা থানার ফুলবাড়িয়া গ্রামে হামলা চালিয়ে বাদল চন্দ্র দেবনাথ ও চিত্তরঞ্জন দাসকে নিজ হাতে গুলি চালিয়ে হত্যা করেন বাচ্চু রাজাকার। এ ঘটনার পর চিত্তরঞ্জনের স্ত্রী তিনটি নাবালক সন্তানসহ ভারতের কল্যাণী ক্যাম্পে আশ্রয় নেন। সেখানে তাঁর তিন সন্তান অনাহারে ও অপুষ্টিতে মৃত্যুবরণ করে।
অপর যে অভিযোগে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয় সেটি হলো- একাত্তরের ১৭ মে বোয়ালমারী থানাধীন হাশামদিয়া গ্রামের শরৎচন্দ্র পোদ্দার, সুরেশ পোদ্দার, শ্যামাপদ সাহা, যতীন্দ্র মোহন সাহা, নীল রতন সমাদ্দার, সুবল কয়াল ও মলিক চক্রবর্তীসহ ১০ জনকে গুলি চালিয়ে হত্যা করেন বাচ্চু রাজাকার। তাঁদের বাড়িঘরে লুটপাট ও অগি্নসংযোগ করা হয়। হীরালাল সাহা, সুশীল কুমার, সূর্য কুমার, নীল রতন সমাদ্দার ও ডা. ননী গোপাল সাহাদের বাড়িঘরেও লুণ্ঠন ও অগি্নসংযোগ করা হয়। একই দিন ময়েনদিয়া বাজারে নদীর ঘাটে হরিপদ সাহা ও প্রবীর কুমার সাহা ওরফে পুইট্টাকে হত্যা করা হয়। এ ছাড়া অসিত বরণ সাহা, সত্যরঞ্জন সাহা, সুবল সাহা, মাখন লাল সাহা, যতীন্দ্র নাথ সাহা, নারায়ণ চন্দ্র সাহা, কালীপদ সাহা, ডা. মুকুন্দ লাল সাহা ও রাম কানাই বাবুর গুদামঘরসহ ৫০-৬০টি দোকানঘরে লুটপাট ও অগি্নসংযোগ করা হয়।
রায়ে বলা হয়, বাচ্চু রাজাকার একাত্তর সালের জুন মাসের প্রথম সপ্তাহে এবং ২৬ জুলাই ফরিদপুর শহরের চকবাজারে বদ্রি নারায়ণের বাড়ি দখল করে সেখানে টর্চার সেল স্থাপন, রামকৃষ্ণ আগরওয়ালার বাড়ি দখল করে আলবদর বাহিনীর প্রশিক্ষণ ক্যাম্প স্থাপন, হীরালাল মুক্তার ও চারু মজুমদারের বাড়ি দখল, লুটপাট ও তাদের দেশান্তর করতে বাধ্য করেন বলে প্রমাণিত হয়।
আরেকটি অভিযোগ হলো- ১৯৭১ সালের ৮ জুন দুপুর ১২টায় বোয়ালমারী থানার নতিবদিয়া গ্রামের সুধীর বিশ্বাস ওরফে গোসাইপদ বিশ্বাসের বাড়িতে লুটপাট এবং ওই বাড়ি থেকে দেবী রানী বিশ্বাস ও শোভা রানী বিশ্বাসকে ধরে নিয়ে পালা করে ধর্ষণ।
অপর অভিযোগ- একাত্তরের ১৮ মে সালথা থানার উজিরপুর বাজারপাড়া গ্রামের গুরু দাসের বাড়িতে হামলা চালিয়ে লুটপাট, তাঁর মেয়ে অঞ্জলীকে অপহরণ করে চান কাজী বাড়িতে আটক রেখে নির্যাতন। এ ঘটনার পর অঞ্জলী বিষপানে আত্মহত্যা করেন। এই সাতটি অভিযোগ প্রমাণিত হয়।
একই বছরের ২৫ মার্চ থেকে ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত ফরিদপুর শহরের রঞ্জিতনাথ ওরফে বাবুনাথ, খলিলুর রহমান, আবু ইউসুফ পাখি, আমির হোসেনসহ চার-পাঁচ শ নারী ও পুরুষকে অপহরণপূর্বক নির্যাতন করা এবং বাবুনাথসহ অসংখ্য ব্যক্তিকে হত্যার পর স্টেডিয়ামের পুকুরে মাটিচাপা দেওয়া ও নদীতে ফেলে দেওয়ার অভিযোগ প্রমাণিত হয়নি বলে রায়ে বলা হয়।
প্রেক্ষাপট : রায়ে মুক্তিযুদ্ধসহ কিছু ঐতিহাসিক ঘটনা সংক্ষেপে তুলে ধরা হয়। এসবের মধ্যে আছে মুক্তিযুদ্ধের প্রেক্ষাপট এবং মুক্তিযুদ্ধকালীন রাজাকার-আলবদরদের ভূমিকা।
রায়ে বলা হয়, আজ আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত অপরাধের বিচারের রায় ঘোষিত হচ্ছে। যদিও এটা অভ্যন্তরীণ আইনে অভ্যন্তরীণ আদালতে হচ্ছে। রায়ে জামায়াতে ইসলামীর সে সময়কার ভূমিকার কথাও সংক্ষেপে তুলে ধরা হয়েছে।
আইনি ব্যাখ্যা : রায়ে ১৯৫ জন পাকিস্তানি যুদ্ধাপরাধীর প্রসঙ্গে বলা হয়, মূল যুদ্ধাপরাধী হিসেবে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ১৯৫ জন সদস্য ছিল। ত্রিপক্ষীয় চুক্তির পর তাদের নির্বাহী আদেশে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। তাদের ছেড়ে দেওয়া হলেও তাদের সহযোগীদের বিচারে আইনগত কোনো বাধা নেই। এই সহযোগীদের বিচারের জন্য ১৯৭৩ সালে আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনালস) আইন করা হয়। রায়ের বলা হয়, সংবিধানের ৪৭(৩) অনুচ্ছেদ এ বিচারের কথা বলা আছে। এ জন্য জাতীয় সংসদে ট্রাইব্যুনাল আইন পাস করা হয়। তাই রোমবিধি এখানে কোনো বাধা নয়।
রায়ে আবুল কালাম আজাদের পালিয়ে যাওয়া, তাঁর পক্ষে রাষ্ট্র কর্তৃক আইনজীবী নিয়োগ সম্পর্কে বলা হয়, আইনের বিধান সাপেক্ষে এসব ব্যবস্থা যথাযথভাবে নেওয়া হয়।
জনাকীর্ণ ট্রাইব্যুনাল কক্ষ, পিনপতন স্তব্ধতা : গতকাল রায় ঘোষণা উপলক্ষে সকালেই হাজির হন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম, অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল এম কে রহমান, মুরাদ রেজা ও মমতাজ উদ্দিন ফকির, কয়েকজন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সম্পাদক মমতাজ উদ্দিন মেহেদী, চিফ প্রসিকিউটর গোলাম আরিফ টিপু, সৈয়দ হায়দার আলী, রানা দাস গুপ্ত, জেয়াদ আল মালমু, সাইফুল ইসলাম, সাহিদুর রহমান, নুরজাহান মুক্তাসহ প্রসিকিউটররা। শতাধিক সাংবাদিক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক মুনতাসির মামুন, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের নাসিরউদ্দিন ইউসুফ বাচ্চু, ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থার সমন্বয়ক হান্নান খান, জ্যেষ্ঠ সদস্য সানাউল হক, তদন্ত কর্মকর্তা নুর হোসেনসহ তদন্ত সংস্থার একাধিক সদস্য উপস্থিত ছিলেন। এ ছাড়া বিচারের মুখোমুখি অপর জামায়াত নেতাদের আইনজীবী মিজানুল ইসলাম, তাজুল ইসলাম, ব্যারিস্টার মুন্সী আহসান কবিরসহ বেশ কয়েকজন আইনজীবী উপস্থিত হন।
গতকাল বিচার কক্ষে তিল ধারণের জায়গা ছিল না। রায় ঘোষণা শুরু হলে সেখানে পিনপতন নীরবতা নেমে আসে। রায়ের প্রতিটি শব্দ শোনার জন্য উদ্গ্রীব ছিলেন সবাই।
অ্যাটর্নি জেনারেলের প্রতিক্রিয়া : গতকাল রায়ের পর ট্রাইব্যুনালের সামনে দাঁড়িয়ে রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেন, একাত্তরের ঘাতক, রাজাকার আবুল কালাম আযাদের বিরুদ্ধে আজ ট্রাইব্যুনাল ফাঁসির রায় ঘোষণা করেছে। তিনি বলেন, 'এ রায়ের মাধ্যমে একাত্তরের চেতনার বিজয় হয়েছে। স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব ও মানবতা সমুন্নত রাখার আন্দোলনের বিজয় হয়েছে। আজকের এই দিনটির জন্যই একাত্তর সাল থেকে আমরা আন্দোলন করে আসছি।'
প্রসিকিউটর সাহিদুর রহমানের বক্তব্য : বাচ্চু রাজাকারের বিচারকালে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ছিলেন প্রসিকিউটর সাহিদুর রহমান। রায়ের পর সাহিদুর রহমান বলেন, 'স্বাধীনতাযুদ্ধের সময় ফরিদপুরের বোয়ালমারী, নগরকান্দা থানার বিভিন্ন গ্রামে হিন্দু সম্প্রদায়কে টার্গেট করে হত্যাকাণ্ড চালানো হয়। এর কোথাও পাকিস্তান বাহিনীর সহযোগিতায় আবার কখনো অপরাপর রাজাকারকে সঙ্গে নিয়ে বাচ্চু রাজাকার হত্যাকাণ্ড ঘটনায়। গণহত্যা চালায়। ধর্ষণ করে। বাড়িঘর জ্বালিয়ে দেয়। আজ সেসব মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের রায় ঘোষিত হলো। এ রায়ে গোটা জাতির সঙ্গে আমিও আনন্দিত। জাতির প্রত্যাশা পূরণ হয়েছে।'
বাচ্চু রাজাকারের আইনজীবীর প্রতিক্রিয়া : বাচ্চু রাজাকার পলাতক থাকায় তাঁর পক্ষে রাষ্ট্রীয় খরচে আইনজীবী হিসেবে (স্টেট ডিফেন্স) অ্যাডভোকেট শুকুর আলী খানকে নিয়োগ দেওয়া হয়। গতকাল রায়ের পর তিনি বলেন, 'এ মামলার বিচারকালে আবুল কালাম আযাদের পরিবারের কেউ আমাকে সহযোগিতা করেনি। সহযোগিতা পেলে এ রায় অন্য রকম হতে পারত।'

No comments

Powered by Blogger.