ছেলেধরা বলতে কিছু নেই, শুধুই গুজব- আরও দুজনকে পিটিয়ে হত্যা

গাজীপুর সদর উপজেলার কোনাবাড়ী এলাকায় গতকাল সোমবার ‘ছেলেধরা’ সন্দেহে অজ্ঞাতনামা দুই ব্যক্তিকে পিটিয়ে হত্যা করেছে জনতা। এমনকি তারা একজনের শরীরে আগুন ধরিয়ে দেয়। প্রশাসন বলছে, ছেলেধরা বলতে কিছু নেই, পুরোটাই গুজব।
প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছেন, গণপিটুনিতে নিহত দুজনেরই আচরণ ছিল মানসিক রোগীর মতো। এর আগে শনিবার কালিয়াকৈরে আরেক বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী নারীকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। কালিয়াকৈর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) হাবিবুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, কয়েক দিন ধরে এলাকায় ছেলেধরা ও গলাকাটা আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে, যার পুরোটাই গুজব।
গাজীপুরের বিভিন্ন এলাকায় কয়েক দিন ধরে ছেলেধরা আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ছে। এ কারণে শিশুরা একা ঘর থেকে বের হচ্ছে না। বিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতির হার কমে গেছে। এ পরিস্থিতিতে এলাকাবাসীকে আতঙ্কিত না হতে পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে মাইকিং করা হয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশ জানায়, গাজীপুর সদর উপজেলার বাইমাইল এলাকার আবদুল খালেক ভান্ডারীর বাড়িতে গত রোববার দিবাগত রাতে একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। সেখানে কিছু ব্যক্তি নাচ-গান করে। তাদের কয়েকজনের আচরণ ছিল মানসিক রোগীর মতো। গতকাল সকাল ছয়টার দিকে এলাকাবাসী সেখান থেকে ছেলেধরা সন্দেহে তাদের একজনকে (৪০) আটক করে মারধর করে। পরে তারা ওই ব্যক্তিকে টেনেহিঁচড়ে একটি পোশাক কারখানার সামনে নিয়ে যায়। এ সময় কারখানার শ্রমিকেরা ছোরা দিয়ে তাঁর গলায় আঘাত করেন। খবর পেয়ে কোনাবাড়ী ফাঁড়ির পুলিশ ওই ব্যক্তিকে উদ্ধার করে গাজীপুর সদর হাসপাতালে নিয়ে যায়। পরে তাঁকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় দুপুরে তিনি মারা যান।
বাইমাইল এলাকার বাসিন্দা বাহাজ উদ্দিন বলেন, ‘রাতে আমি ওই অনুষ্ঠানে ছিলাম। ওই লোকটার আচরণ ছিল মানসিক রোগীর মতো। দিনে জানতে পারি, লোকজন ছেলেধরা সন্দেহে পিটিয়ে ও গলা কেটে তাঁকে হত্যা করেছে।’
কোনাবাড়ী ৮ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর নাছির উদ্দিন বলেন, লোকটির ব্যাপারে এলাকায় খোঁজ নেওয়া হয়েছে। তাঁর বিরুদ্ধে কেউ কোনো অভিযোগ করেনি।
ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের গাজীপুর সদর উপজেলার কোনাবাড়ী এলাকায় পিটিয়ে এক নারীকে (৩৬) হত্যা করেছে জনতা। নিহত ওই নারীর আচরণও ছিল মানসিক রোগীর মতো।
প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশ সূত্র জানায়, গতকাল সকাল ছয়টার দিকে কোনাবাড়ী এলাকায় রাস্তার পাশে বোঁচকা নিয়ে বসে ছিলেন এক নারী (৩৬)। এ সময় ছেলেধরা সন্দেহে কিছু ব্যক্তি তাঁকে গণপিটুনি দেয়। এতে তিনি ঘটনাস্থলেই নিহত হন। উত্তেজিত জনতা ওই নারীর শরীরে আগুন ধরিয়ে দেয়। আশপাশে আনসার বাহিনীর পাঁচ-ছয়জন সদস্য উপস্থিত থাকলেও তাঁরা ওই নারীকে উদ্ধারে এগিয়ে আসেননি। খবর পেয়ে কোনাবাড়ী ফাঁড়ির পুলিশ আগুন নিভিয়ে লাশটি উদ্ধার করে গাজীপুর সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠায়।
আনসার বাহিনীর সিপাহি মিজানুর রহমান বলেন, ‘শত শত লোক ওই নারীকে পিটিয়ে হত্যা করে শরীরে আগুন ধরিয়ে দেয়। আমরা লোকজনকে সরানোর চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছি।’
স্থানীয় গাড়িচালক আজিজুর রহমান বলেন, ওই নারীকে ছেলেধরা বলে মনে হয়নি। তাঁর পোশাক-আশাক ও আচরণ ছিল পাগলের মতো। এলাকাবাসীর মুঠোফোন থেকে পাওয়া ভিডিওচিত্রে দেখা যায়, কিছু ব্যক্তি ওই নারীকে এলোপাতাড়ি মারধর করছে। এক ব্যক্তি ওই নারীর কাপড়ে আগুন ধরিয়ে দিচ্ছে। শত শত লোক এ দৃশ্য দেখলেও কেউ প্রতিবাদ করছে না।
কোনাবাড়ী পুলিশ ফাঁড়ির উপপরিদর্শক (এসআই) গোলাম মোস্তফা ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, এ ব্যাপারে পুলিশ জয়দেবপুর থানায় পৃথক দুটি হত্যা মামলা করেছে।
এর আগে শনিবার গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার সিনাবহ এলাকায় মর্জিনা আক্তার নামের এক বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী নারীকে পিটিয়ে হত্যা করেছে এলাকাবাসী।

No comments

Powered by Blogger.