প্রতিক্রিয়া : বিএনপি-বিচারে সমর্থন আছে, এজেন্ডা বাস্তবায়নে নয়

বিচারকে পূর্ণ সমর্থন জানিয়ে দলীয় এজেন্ডার বাইরে স্বচ্ছতা বজায় রেখে সব যুদ্ধাপরাধীর বিচার দাবি করেছে বিএনপি। দলের পক্ষে স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সমন্বয়ক তরিকুল ইসলাম বলেন, আজ যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চলছে। স্বাধীনতার পক্ষের ও মুক্তিযুদ্ধের দল বিএনপি এই বিচারকে পূর্ণভাবে সমর্থন করে।
একই সঙ্গে এই বিচার স্বচ্ছ, নিরপেক্ষ ও আন্তর্জাতিক মানের হোক- এটাও প্রত্যাশা করে। গতকাল সোমবার বিকেলে কাকরাইলের ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দলের উদ্যোগে সাবেক রাষ্ট্রপতি প্রয়াত জিয়াউর রহমানের ৭৭তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় তরিকুল ইসলাম এসব কথা বলেন। সে সময় তিনি আরো বলেন, আজকে যারা ৪০ বছর পর ওই যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করছেন, সেই বিচার যেন দলীয় এজেন্ডা বাস্তবায়নে কিংবা প্রশ্নবিদ্ধ না হয়। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগকে ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, '৪০ বছর আগের এই পাপ যদি আজ মোচন করতেই হয়, তাহলে আসুন আপনাদের ঘরের ভেতরের পাপ ও বাইরে পাপ সবই মোচন করি।'
স্বাধীনতা যুদ্ধের পর তৎকালীন আওয়ামী লীগের শাসনামলে সিরাজ শিকদারসহ ৪০ হাজার প্রগতিশীল নেতা-কর্মীর হত্যাকাণ্ডকে মানবতাবিরোধী উল্লেখ করে তারও বিচার দাবি করেন তরিকুল। তিনি বলেন, তাদের পরিবার-পরিজনরা আজও ওই সব হত্যার বিচার চায়।
গতকাল বাচ্চু রাজাকারের ফাঁসির আদেশের পর বিএনপির শীর্ষস্থানীয় একাধিক নেতার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে অনেকেই মন্তব্য করেন, রায়ের বিষয়ে বিস্তারিত না জেনে কিছু বলা ঠিক হবে না। তবে ব্যক্তিগতভাবে অনেকে প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন। এর মধ্যে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জেনারেল (অব.) মাহবুবুর রহমান বলেন, 'যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চলমান প্রক্রিয়া। একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্তদের বিচারের পক্ষে বিএনপির অবস্থান। তবে এই বিচার হোক স্বচ্ছ, নিরপেক্ষ ও আন্তর্জাতিক মানের। আমরা সব সময় মানবতাবিরোধীদের বিপক্ষে। এই বিচারকে আমি পূর্ণভাবে সমর্থন করি।' দলীয় এজেন্ডার বাইরে থেকে সব যুদ্ধাপরাধীর বিচার দাবি করেন তিনি।
বিএনপি নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোটের শরিক এলডিপির সভাপতি কর্নেল (অব.) অলি আহমদ বীরবিক্রম কালের কণ্ঠকে বলেন, যুদ্ধাপরাধী যে দলেই থাকুক, তাদের কঠোর বিচার হওয়া উচিত। সরকারি দলের আশ্রয়ে থাকা যুদ্ধাপরাধীদেরও বিচার দাবি করে তিনি বলেন, একজনের বিচার করলেই হবে না। সব অপরাধীর বিচার করতে হবে। বিরোধী দলে থাকলে বিচার হবে আর সরকারি দলে থাকলে হবে না, তা হলে এটি সঠিক বিচার হলো না।
স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আ স ম হান্নান শাহ বলেন, 'আমি ঢাকার বাইরে আছি, আদালতের রায়ে কী আছে, তা জানি না। বিষয়টি অত্যন্ত সেনসেটিভ। তাই রায়ের বিষয়ে বিস্তারিত না জেনে কিছু বলাটা শুভ নয়। রায় পড়ার পর প্রতিক্রিয়া দেওয়া হবে বলে তিনি জানান।
দপ্তরের দায়িত্বে থাকা বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ গতকাল নয়া পল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে ট্রাইব্যুনালের প্রথম রায়ের বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, 'যুদ্ধাপরাধের বিচারের বিষয়ে আমাদের অবস্থান পরিষ্কার। আমরা আগেও বলেছি, এখনো বলছি- এই বিচার হতে হবে আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন। সত্যিকার অর্থে যারা যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধ করেছে তাদের বিচার হতে হবে।' বাচ্চু রাজাকারের ফাঁসির আদেশের বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'এ বিষয়ে আমি কিছু বলব না। দলের সিনিয়র নেতারা এ বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানাবেন।'

No comments

Powered by Blogger.