নতুন প্রত্যাশা নিয়ে আজ শুরু হচ্ছে উন্নয়ন ফোরামের বৈঠক by কাওসার রহমান

নতুন সরকারের নতুন প্রত্যাশা নিয়ে আজ সোমবার ঢাকায় শুরু হচ্ছে দু'দিনের বাংলাদেশ উন্নয়ন ফোরামের বৈঠক। এবারের বৈঠকে বাংলাদেশ উন্নয়ন সহযোগীদের কাছে সরাসরি কোন অর্থ সহায়তা না চাইলে উন্নয়ন কর্মসূচী বাস্তবায়নের জন্য বার্ষিক ২০০ থেকে ২৫০ কোটি ডলারের বৈদেশিক সাহায্যের চাহিদা তুলে ধরা হবে।
এছাড়া দীর্ঘমেয়াদী উন্নয়ন তথা সরকারের ভিশন ২০২১ বাসত্মবায়নের জন্য দাতাদের কাছে কৌশলগত সহায়তা চাইবে। পাশাপাশি নতুন সরকার হলেও অর্থ ব্যয়ে স্বচ্ছতা ও সুশাসন প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে উন্নয়ন সহযোগীরা চাপ সৃষ্টি করবে। কোন কোন দাতা দেশ আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ও বিচার বিভাগীয় হত্যাক-ের ব্যাপারে মুখর হতে পারে। প্রশ্ন তুলতে পারে অর্থ ব্যয়ের সমতা নিয়ে। বৈঠকে দাতারা সরকারের উন্নয়ন কর্মাকা-ের চুলচেরা বিশেস্নষণ করে সহায়তার অঙ্গীকার করবে বলে আশা করা হচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শেরে বাংলানগরে বঙ্গবন্ধু আনত্মর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে বাংলাদেশের সাহায্য দাতা গোষ্ঠীর এ বৈঠকের উদ্বোধন করবেন। এবারের সম্মেলনে বাড়তি চমক হিসাবে থাকছে উন্নয়ন মেলা। এ মেলায় ৪০টি স্টলে এনজিওরা তাদের 'দিন বদলের' কর্মকা- তুলে ধরবে। প্রধানমন্ত্রী এ মেলাও উদ্বোধন করবেন।
বৈঠকে বাংলাদেশ একটি অবস্থানপত্র উপস্থাপন করবে। ওই অবস্থানপত্রে বাংলাদেশের সামাষ্টিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি তুলে ধরে বলা হবে, বৈশ্বিক মন্দা সত্ত্বেও বাংলাদেশের অর্থনীতি সুদৃঢ় ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়ে আছে। চলতি ২০০৯-১০ অর্থবছরে ছয় শতাংশ এবং আগামী ২০১০-১১ অর্থবছরে ছয় দশমিক সাত শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জিত হবে। এ প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে গিয়ে আগামী দুই বছরে বাংলাদেশের মোট সম্পদের প্রয়োজন হবে ৪১৬ কোটি ডলার। স্থানীয় সম্পদের যোগান দেয়ার পরও বছরে ২০০ থেকে ২৫০ কোটি ডলারের ঘাটতি থেকে যাবে।
এছাড়া বৈঠকে সরকার প্রণীতি 'রূপকল্প ২০১০-২০২১' দাতাদের সামনে তুলে ধরা হবে। বলা হবে, আগামী ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে একটি ডিজিটাল বাংলাদেশে পরিণত করার ল্যে এই রূপকল্প প্রণয়ন করা হয়েছে। সরকারের পরিকল্পনা হচ্ছে এই রূপকল্প বাসত্মবায়নের মাধ্যমে ২০২১ সাল নাগাদ বাংলাদেশকে একটি মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত করা। দেশের মাথাপিছু আয় এক হাজার ৮শ' ডলারে উন্নীত করা, মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি ১০ শতাংশের ওপরে নিয়ে যাওয়া, চরম দারিদ্র্যের হার ১৫ শতাংশের নিচে নামিয়ে আনা, বেকারত্বের হার ১০ শতাংশে হ্রাস এবং মাথাপিছু ৬০০ কিলোওয়াট বিদু্যত উৎপাদন করে বাংলাদেশকে একটি ডিজিটাল বাংলাদেশে পরিণত করা। বৈঠকে এ রূপকল্প বাসত্মবায়নে সরকার দাতাদের বিশেষ সহায়তা চাইবে। বাংলাদেশের উন্নয়ন অগ্রযাত্রায় দাতাদের শামিল হওয়ার আহ্বান জানানো হবে।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের পর দুই দিনে ছযটি অধিবেশনে সুনির্দিষ্ট ছয় এজেন্ডা নিয়ে আলোচনা হবে। এজেন্ডাগুলো হলো- উন্নয়ন কৌশল, সুশাসন ও মানব সম্পদ উন্নয়ন, বিদু্যত ও জ্বালানি এবং কৃষি, খাদ্য নিরাপত্তা ও পানি সম্পদ উন্নয়ন, পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন, পরিবহন ও যোগাযোগ এবং ডিজিটাল বাংলাদেশ ও তথ্য প্রযুক্তির উন্নয়ন। এ সকল অধিবেশনে সভাপতিত্ব করবেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মহিত। বৈঠকে বিশ্বব্যাংকের দণি এশীয়া অঞ্চলের ভাইস প্রেসিডেন্ট মিস. ইসাবেল গুরেরা ও এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের দণি এশিয়া অঞ্চলের মহাপরিচালক সুলতান হাফিজ রহমানও যোগ দেবেন। এতে বাংলাদেশে অবস্থানরত বাংলাদেশের ৩২টি উন্নয়ন সহযোগীর প্রতিনিধিরাও অংশ নেবেন। পাশাপাশি এবার প্রথম বিশেষ আমন্ত্রণে বাংলাদেশের নতুন উন্নয়ন সহযোগী চীন, ভারত, সৌদি আরব, কুয়েত, দণি কোরিয়া ও সংযুক্ত আরব আমিরাত যোদ দিচ্ছে। সব মিলিয়ে বৈঠকে দেশী-বিদেশী দুই শতাধিক প্রতিনিধি যোগ দেবেন বলে আশা করা হচ্ছে।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের পর শুরম্ন হবে এজে-াভিত্তিক আলোচনা। দু'দিনে ছয়টি অধিবেশনে এই এজেন্ডাগুলো নিয়ে ব্যাপক আলোচনায় অংশ নেব উন্নয়ন সহযোগীরা। ওই আলোচনায় দাতাদের প্রশ্নের জবাব দিতে সচিবরা ছাড়াও উপস্থিত থাকবেন অর্থমন্ত্রী, কৃষি মন্ত্রী, জ্বালানি উপদেষ্টা, জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী, খাদ্য মন্ত্রী, যোগাযোগ মন্ত্রী, পরিবেশ প্রতিমন্ত্রী এবং বিজ্ঞান প্রতিমন্ত্রী। দাতারা এ সকল অধিবেশনে উন্নয়ন পরিকল্পনা বিশেস্নষণ করে বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ সাহায্য চাহিদা সম্পর্কে ধারণা নেবে এবং এ সকল ল্য বাংলাদেশ কিভাবে অর্জন করবে সে ব্যাপারে সরকারকে দিকনির্দেশনা দেবে।
এজে-াভিত্তিক আলোচনায় প্রধান আলোচ্য বিষয় হবে সুশাসন। দাতারা নতুন সরকারের কাছে সুশাসন চাইবে। উন্নয়ন কর্মকাণ্ডকে দুর্নীতি ও দলীয়করণ মুক্ত রাখতে তারা সরকারকে সর্বেেত্র সুশাসন প্রতিষ্ঠার জন্য চাপ দেবে। দ্বিতীয় প্রধান আলোচ্য বিষয় হবে বিদু্যত ও গ্যাস সঙ্কট। গ্যাস-বিদু্যত সঙ্কটের কারণে দেশের শিল্প উৎপাদন মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। দেশী-বিদেশী বিনিয়োগ স্থবির হয়ে আছে। দাতারা সরকারের কাছে গত এক বছরের গ্যাস বিদু্যত খাতের উন্নয়নের অগ্রগতি জানতে চাইবে। কিভাবে এই জ্বালানি সঙ্কট নিরসন করবে তারও পরিকল্পনা চাইবে। তার ভিত্তিতে তারা এখাতে অর্থায়নের পদপে গ্রহণ করবে।

No comments

Powered by Blogger.