জীবনের জন্য গণিত by নিজাম সিদ্দিকী

‘গণিত শেখো, স্বপ্ন দেখো’ স্লোগান নিয়ে গতকাল সোমবার সকালে চট্টগ্রাম নগরের কলেজিয়েট স্কুলের মাঠে বসে একাদশ ডাচ্-বাংলা ব্যাংক-প্রথম আলো গণিত উৎসবের চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পর্বের আসর। উৎসবের আয়োজক বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াড কমিটি।
সহযোগিতায় ছিল প্রথম আলো চট্টগ্রাম বন্ধুসভা। জাতীয় সংগীত পরিবেশনের মধ্য দিয়ে উৎসব শুরু হয়। প্রথমে জাতীয় পতাকা এবং পরে বেলুন উড়িয়ে উৎসবের উদ্বোধন করেন কলেজিয়েট স্কুলের প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ আজিজ উদ্দিন। আন্তর্জাতিক অলিম্পিয়াডের পতাকা তোলেন ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট সৈয়দ মাহমুদ আকতার এবং জাতীয় অলিম্পিয়াড কমিটির পতাকা উড়িয়েছেন প্রথম আলোর আবাসিক সম্পাদক আবুল মোমেন। শীত বিকেলের আলো মিলিয়ে যাওয়ার আগেই বিজয়ীদের মধ্যে পুরস্কার বিতরণের পর্ব শেষ হয়। এর মধ্য দিয়ে ইতি টানা হয় দিনব্যাপী উৎসবের।
উদ্বোধনী পর্বের পরে পরীক্ষায় বসে তৃতীয় শ্রেণী থেকে দ্বাদশ শ্রেণীর শিক্ষার্থীরা। প্রাথমিক, নিম্ন মাধ্যমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক—চার ভাগে তাদের পরীক্ষা নেওয়া হয়। পরীক্ষা শেষে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও গণিত উৎসবের গান গাওয়া হয়। চলতে থাকে প্রশ্নোত্তর। খুদে গণিতবিদেরা তাদের কৌতূহলের ঝাঁপি খুলে প্রশ্ন রাখছিল ক্লান্তিহীনভাবে। শুধু মুখে নয়, হাতে লেখা প্রশ্নও জমা দেয় অনেকে। সহজভাবে তাদের কৌতূহল মেটাতে থাকেন মঞ্চে বসা শিক্ষকেরা। বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের তড়িৎকৌশল বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ফারসীম মান্নান মোহাম্মদী বলেন, ‘গণিত হচ্ছে মজার জিনিস। মস্তিষ্কক তাজা রাখতে তোমরা গণিতের চর্চা করবে।’
মঞ্চে আসেন আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াড বিজয়ী ধনঞ্জয় বিশ্বাস ও মাহি। তাঁদের সঙ্গে যোগ দেন আর্জেন্টিনায় অনুষ্ঠিত ৫৩তম আন্তর্জাতিক অলিম্পিয়াডে অংশগ্রহণকারী মুগ্ধ ও তার ভাই অপর প্রতিযোগী স্নিগ্ধ। প্রতিযোগীদের কাছে নিজেদের অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন তাঁরা। এরপর চ্যানেল আই-২০১০ সেরা কণ্ঠ জয়ী যমজ ভাই মুগ্ধ ও স্নিগ্ধ উৎসব মাতিয়ে তোলে একক ও দ্বৈত গানে। রুবিক্স কিউব প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে মাত্র ৩২ সেকেন্ডে কিউব মিলিয়ে প্রথম স্থান দখল করেন চট্টগ্রাম কলেজের আবিদ আবরার। সমাপনী আয়োজনে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিদ্যা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মশিউর রহমান বলেন, ‘তোমরা ভালো করে অঙ্ক শেখো। কারণ অঙ্ক জীবনের জন্য প্রয়োজন। জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রেই কোনো না কোনোভাবে অঙ্কের উপস্থিতি রয়েছে।’ উৎসবে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন প্রথম আলোর যুগ্ম সম্পাদক বিশ্বজিৎ চৌধুরী, চট্টগ্রাম কলেজিয়েট স্কুলের সহকারী প্রধান শিক্ষক মাসুমা বেগম, বন্ধুসভার সঞ্জয় বিশ্বাস, ফাহিম উদ্দিন প্রমুখ। উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (চুয়েট) গণিত বিভাগের সহকারী অধ্যাপক উজ্জ্বল কুমার দেব ও মো. গোলাম হাফেজ, কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগের প্রভাষক অনীক সাহা এবং আউটসোর্সিংয়ে দেশের সেরা ফ্রিল্যান্সার এনায়েত হোসেন।
গণিত উৎসবে চট্টগ্রাম মহানগরের ১০৪টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ৭০৩ জন শিক্ষার্থী অংশ নেয়। এর মধ্য থেকে চার বিভাগের ৬০ জনকে জাতীয় উৎসবের জন্য নির্বাচিত করা হয়। এদের প্রত্যেককে দেওয়া হয় মেডেল ও সনদ। উৎসবে যুগ্মভাবে চ্যাম্পিয়নদের চ্যাম্পিয়ন হয়েছে নিম্নমাধ্যমিক (জুনিয়র) বিভাগের দুই প্রতিযোগী—চট্টগ্রাম সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ের মশরুর মুনতাসীর ও চট্টগ্রাম কলেজিয়েট স্কুলের জুলকারনাইন ভূঁইয়া। দুজনেই বলেছে, তারা মজা করেই অঙ্ক করে, কোনো ভয় নিয়ে নয়।
আজ উৎসব: সিলেট প্রতিনিধি জানান, সিলেট নগরের নয়াসড়ক এলাকার কিশোরীমোহন বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ে আজ মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত হবে সিলেট আঞ্চলিক গণিত উৎসব। সকাল নয়টায় উৎসবের উদ্বোধন হবে।

No comments

Powered by Blogger.