অনিশ্চয়তা বাড়বে, বাস্তবায়ন হবে বিলম্বিত-পিপিপিতে পদ্মা সেতু!

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শনিবার গণভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে বহুল আলোচিত পদ্মা সেতু নির্মাণ প্রসঙ্গে নতুন কথা বলেছেন। এত দিন জানা ছিল, এই সেতু নির্মাণে অর্থায়নের একটি বড় অংশ আসবে বিশ্বব্যাংক থেকে। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী এখন বলছেন, সেতুটি নির্মাণ করা হবে সরকারি-বেসরকারি অংশীদারির (পিপিপি) ভিত্তিতে। সে জন্য ১০-২০ বছরও যদি সময় লাগে, কোনো অসুবিধা নেই। প্রধানমন্ত্রীর দৃঢ় ঘোষণা: পদ্মা সেতু হবেই।


অবশ্যই পদ্মা সেতু নির্মাণ করা দরকার এবং তা ১০-২০ বছর ধরে নয়, যত তাড়াতাড়ি পারা যায়। কেননা, এই সেতু দেশের দক্ষিণাঞ্চলের সঙ্গে রাজধানী ঢাকা ও ঢাকার মধ্য দিয়ে সারা দেশের সঙ্গে সংযোগ সৃষ্টি করবে; বিপুলসংখ্যক মানুষ অনেক বছর ধরে এই সেতুর প্রতীক্ষায় রয়েছে। কতগুলো বাস্তব কারণে সেতুটি নিয়ে কিছু অনিশ্চয়তা সৃষ্টি হয়েছে। প্রথমত, বিশ্বজুড়ে যে অর্থনৈতিক মন্দা চলছে, তার পরিপ্রেক্ষিতে বিশেষজ্ঞদের এই আশঙ্কা বাস্তবিক যে পদ্মা সেতুতে বেসরকারি খাতের বিনিয়োগ আকর্ষণ করা কঠিন হবে। আর যে কারণে পদ্মা সেতুর অর্থায়নে বিশ্বব্যাংকের আপত্তি উঠেছে, তা বাংলাদেশের ভাবমূর্তির জন্য ক্ষতিকর হয়েছে। তা ছাড়া সরকারি-বেসরকারি অংশীদারির (পিপিপি) ভিত্তিতে বড় কোনো প্রকল্প বাস্তবায়নের নজির নেই। পদ্মা সেতুর মতো একটি সুবৃহৎ প্রকল্প পিপিপির ভিত্তিতে কীভাবে বাস্তবায়িত হতে পারে, তা বাস্তবায়নে কত বছর সময় লাগতে পারে সে ব্যাপারে নিশ্চয়তা নেই; প্রধানমন্ত্রীর উক্তিতেও এই অনিশ্চয়তার প্রকাশ ঘটেছে।
দ্বিতীয়ত, পদ্মা সেতু যদি পিপিপির ভিত্তিতেই নির্মিত হয়, তাহলে নির্মাতা বেসরকারি অংশীদারদের কাছে প্রাধান্য পাবে এর বাণিজ্যিক দিকটি। বেসরকারি নির্মাতারা এ খাতে অর্থ বিনিয়োগ করবে, তা থেকে মুনাফা তুলে নিতে সেতুর ওপর এমন হারে মাশুল আরোপ করবে, যা গরিব জনসাধারণের জন্য বহন করা কঠিন হয়ে পড়বে। সে ক্ষেত্রে এটি কোনো গণমুখী প্রকল্প হবে না, বরং একটি বেসরকারি গোষ্ঠীকে বহু বছর ধরে উচ্চ হারে টোল আদায়ের সুযোগ করে দেওয়া হবে। আমাদের প্রয়োজন দরিদ্র জনগণের কল্যাণার্থে পদ্মা সেতু নির্মাণ করা। বিশ্বব্যাংকের কাছ থেকে অর্থ পাওয়া যেত সহজ শর্তের ঋণ হিসেবে, যা বেসরকারি খাত থেকে পাওয়ার সুযোগ নেই। এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়।
যে মন্ত্রীকে কেন্দ্র করে পদ্মা সেতুর অর্থায়নে বিশ্বব্যাংকের আপত্তি, তাঁকে যোগাযোগ মন্ত্রণালয় থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। এখন বিশ্বব্যাংকের এমন আস্থা ফিরে আসতে পারে যে পদ্মা সেতু নির্মাণে দুর্নীতি হবে না। দুর্নীতির আশঙ্কা বা স্বচ্ছতার ব্যাপারে অনাস্থা থাকার কারণে বিশ্বব্যাংক যদি আপত্তি তুলে থাকে, তাহলে এখন বিশ্বব্যাংকের কাছে সরকারের অবস্থান আগের চেয়ে অনেক মজবুত হওয়ার কথা। এমন পরিস্থিতিতে পিপিপির কথা না ভেবে বরং বিশ্বব্যাংকের অর্থায়ন নিশ্চিত করে যেন দ্রুত সেতুটি নির্মাণের কাজ শুরু করা যায়, সে লক্ষ্যে তৎপর হওয়া উচিত।

No comments

Powered by Blogger.