ইউরোপের সেক্যুলারিজম by ফাহমিদ-উর-রহমান


উরোপ নিয়ে আমাদের সমাজে একটা মোহ আছে। বিশেষ করে আমরা যারা আধুনিক শিক্ষিত, উদারমনা ও প্রগতিশীল বলে দাবি করি, তাদের মধ্যে এই মোহ কিন্তু আমাদের এখানে ঔপনিবেশিকতার দান। ঔপনিবেশিকতাই আমাদের শিখিয়েছিল ইউরোপ মানেই উন্নত, আধুনিক, উদারনীতিক, প্রগতিশীল, গণতন্ত্রী ও সেক্যুলার। অন্যপক্ষে আমরা হচ্ছি এক না চিজ, অজ্ঞ, অনুন্নত, পশ্চাত্পদ, অসহায় ও বোকা।
আমরা আমাদের সমস্যার মোকাবিলা করতেও অক্ষম। এই ঔপনিবেশিক হীনম্মন্যতার জটাজালে এখনও আমরা ঘুরপাক খাই। ঔপনিবেশিকতাই আমাদের মগজে ঢুকিয়ে গেছে সেক্যুলারিজম, সেক্যুলার রাষ্ট্র আর সেক্যুলার শিক্ষা বিষয়ক ধ্যানধারণা। এখনও সেক্যুলারিজম বলতে আমাদের উপনিবেশিত ভাবুককুল মনে করেন, সব পেয়েছির এক দেশে পৌঁছে যাওয়া। তাই কি? মতবাদ হিসেবে সেক্যুলারিজম বলতে বোঝায় যাবতীয় ধর্মীয় কর্তৃত্ব থেকে মুক্তি। মানুষের কাজকর্ম হবে সাক্ষ্য-প্রমাণভিত্তিক, ধর্মীয় বিশ্বাসভিত্তিক নয়।

সেক্যুলারিস্টরা বিশ্বাস করেন, ধর্ম হচ্ছে প্রগতির পথে একটা বড় রকমের প্রতিবন্ধক। এসব চিন্তাভাবনা ইউরোপে বহু বছর ধরে নানারকম রাজনৈতিক, সামাজিক বিবর্তনের ভেতর দিয়ে বিকশিত হয়েছে। গ্রিক দার্শনিক এপিকিউরাস, অরেলিয়াস, মধ্যযুগের আলোকায়ন (Enlightenment) পর্বের ভাবুক দিদেরো, ভলটেয়ার, জন লক, জেফারসন, টমাস পেইন, একালের চিন্তাবিদ রাসেল প্রমুখের লেখালেখি ও ভাবনা-চিন্তার ভেতর দিয়ে এই ধারণা অগ্রসর হয়েছে। সেক্যুলারিজমকে তাই মনে করা হয় আধুনিকতা ও আধুনিকায়নের আবশ্যিক অংশ।
সেক্যুলারিজম বিষয়ক চিন্তাভাবনা মধ্যযুগে ইউরোপে শক্তভাবে দানা বাঁধার কারণ হলো চার্চ ও রাষ্ট্রের দ্বন্দ্ব। সেই দ্বন্দ্বের পরিণাম হচ্ছে এ দুটো প্রতিষ্ঠান পৃথক হয়ে যাওয়া, যা আগে কখনও কল্পনা করা যেত না। এই পৃথকীকরণ থেকেই আসে সেক্যুলার রাষ্ট্রের ধারণা। ইউরোপজুড়ে তখন শোনা যায় : Then Give to Caesar what is Caesar's, and to God What is God's.
ইউরোপের পণ্ডিতরা তখন বলেন, সেক্যুলার রাষ্ট্র হবে নিরপেক্ষ। রাষ্ট্র কোনো বিশেষ ধর্মকে আনুকূল্য দেখাবে না এবং ধর্মের কারণে নাগরিকদের মধ্যে বৈষম্য করা যাবে না। ধর্ম নির্বিশেষে যেমন সব নাগরিকের স্বার্থরক্ষা করতে হবে, তেমনি সবার ধর্মীয় স্বাধীনতাও নিশ্চিত করতে হবে। রাজনীতিবিদরা ইহজাগতিক কাজকর্ম করবেন, ধর্মীয় বিষয়ে নাক গলাবেন না।
খ্রিস্টান চার্চের মধ্যে আছে বহুরকমের ভেদ-বিভাজন। ক্যাথলিক, প্রটেস্ট্যান্ট, অ্যাংলিকান, ইভানজেলিক্যাল, লুথেরান, অরথডক্স, মরমন, কোয়েকার, ক্যালভিনিস্ট। এসব চার্চের মধ্যে বহু বছর ধরে রক্তারক্তি সংঘর্ষ লেগেছিল। এই হানাহানি থেকে বাঁচার জন্য ইউরোপে সেক্যুলার রাষ্ট্রের প্রয়োজন হয়েছিল। এটা খ্রিস্টান ইউরোপের বিবর্তন, আত্মানুসন্ধান ও আত্মোপলব্ধির নিজস্ব ইতিহাস।
এই ইতিহাস দিয়ে বৈশ্বিকভাবে সেক্যুলারিজমকে ব্যাখ্যা করতে যাওয়া বোকামি। কারণ ইউরোপীয় সমাজের বিবর্তন একরকমভাবে হয়েছে। এশিয়া, আফ্রিকার জনসমাজের বিবর্তন অন্যভাবে হয়েছে। তাই আজ যখন ইউরোপ তথা পশ্চিমা বিশ্বে মুসলমানের সংখ্যা বাড়ছে, সেখানকার সমাজে মুসলমানদের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে, তখন সেক্যুলারিজমের আসল চরিত্র ফুটে বের হতে শুরু করেছে। এখন পশ্চিমা বিশ্বে শোনা যাচ্ছে, ইসলামোফোবিয়া নামের নতুন বর্ণবাদের কথা। আফ্রিকার কৃষ্ণাঙ্গদের সঙ্গে শ্বেতাঙ্গরা যে ব্যবহার করেছিল আজ তার পুনরাবৃত্তি হতে চলেছে খোদ ইউরোপের মাটিতে। সভ্যতার সংঘাত তত্ত্বের আড়ালে মুসলমানদের বিরুদ্ধে একরকমের সন্ত্রাসী পরিস্থিতি সেখানে সৃষ্টি করা হয়েছে। সেখানকার ব্যক্তি স্বাধীনতা, ধর্মীয় স্বাধীনতা, পরমতসহিষ্ণুতা ও মৌলিক মানবাধিকারের দাবি আজ ঝুরঝুর করে ঝরে পড়তে শুরু করেছে। ইউরোপের মধ্যে সুইজারল্যান্ডকে মনে করা হতো একটা নিরপেক্ষ দেশ। সাধারণ মানুষের মধ্যে একটা ধারণা আছে, বিশ্ব রাজনীতির টানাটানির মধ্যে দেশটি একটি নিরপেক্ষ ভাবমূর্তি অনুসরণ করে। সেই নিরপেক্ষতার বেলুন এখন ফুটো হয়ে গেছে।
সুইজারল্যান্ডের নাগরিকরা গণভোটের মাধ্যমে সেখানকার সংখ্যালঘু মুসলমানদের ইবাদতের স্থান মসজিদের মিনার নির্মাণের বিরোধিতা করেছে। দেশটি রসরকার এ গণভোটের আয়োজন করেছিল। গণভোটের ফলাফল দেখিয়ে দিয়েছে সুইজারল্যান্ড তথা ইউরোপ কীভাবে সাম্প্রদায়িক মানসিকতার মধ্যে আটকে আছে। রাষ্ট্রের সহযোগিতায় ধর্মীয় প্রতীককে গণভোটের বিষয় করা আর যাই হোক, রাষ্ট্রের সেক্যুলার চরিত্রের স্বীকৃতি দেয় না। সুইজারল্যান্ডকে তাহলে কি একটি ধর্মীয় মৌলবাদী রাষ্ট্র বলা যায়, যেখানে রাষ্ট্র একটি বিশেষ ধর্মের আনুকূল্য করে এবং ধর্মীয় বৈষম্যকে উসকে দেয়।
আজকে গণভোটের আশ্রয় নিয়ে সুইজারল্যান্ডের সরকার মসজিদের মিনার নির্মাণের বিরোধিতা করেছে। এরপর মসজিদ নির্মাণে বাধা এলে সেটাকে অস্বাভাবিক বলা যাবে না। এ ঘটনা আরেকটি জিনিস চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়েছে, সুইজারল্যান্ড তথা ইউরোপের সমাজ মোটেই সেক্যুলার নয়। আর সমাজ সেক্যুলার না হলে রাষ্ট্রের সেক্যুলার হওয়ার দাবি যথার্থ নয়। মনে পড়ছে বসনিয়ার গণহত্যার সময় তত্কালীন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর দম্ভোক্তি : ইউরোপের বুকে কোনো মুসলমান রাষ্ট্রকে সহ্য করা হবে না। সুইজারল্যান্ডের গণভোট প্রমাণ করেছে, ইউরোপে মুসলমানদের থাকতে হলে দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিক হয়েই থাকতে হবে।
এখন যদি সুইজারল্যান্ডকে অনুসরণ করে কোনো মুসলিম দেশের সরকার গণভোট দিয়ে চার্চ, সিনাগগ, মন্দির, প্যাগোডা বা এর অংশ বিশেষ নির্মাণের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে তাহলে নিশ্চয় প্রতিক্রিয়া একইরকম হবে না। যে কাজ করে সুইজারল্যান্ড পার পেয়ে যায়, সেই কাজ করে মুসলমান রাষ্ট্রের রাতারাতি জাত চলে যাবে। পশ্চিমা মিডিয়া তখন সন্ত্রাসবাদ, জঙ্গিবাদ, মধ্যযুগ আবিষ্কারের জন্য নতুন জমিন খুঁজে পাবে।
দুই.
ইউরোপকে আমরা কতটুকু চিনি? ঔপনিবেশিকতা আমাদের যে চিন্তার ছক কেটে দিয়েছে তার বাইরে এসে ইউরোপকে পড়ার বা বুঝার মতো মানসিক বলটুকুও এখন আমাদের অবশিষ্ট নেই। ঔপনিবেশিকতা আমাদের শিখিয়েছে ইসলামের প্রতি ঘৃণা ও ন্যক্কার। এ কারণেই মুসলমানদের প্রতি ইউরোপের নির্বিচার ঘৃণাকেও আমরা আমলে নিতে চাই না বা পারি না। উল্টো এসব জিনিসকে আমরা ইউরোপের কায়দায় সাম্প্রদায়িক বলে বাতিল করতে পারলে বেঁচে যাই। Antisemitism গত শতাব্দীর ইউরোপের প্রথম দিককার ঘটনা। নাজিজম-ফ্যাসিজম ইউরোপীয় সভ্যতারই দান। ইসলামোফোবিয়া তারই ধারাবাহিকতা এবং এখন সভ্যতার সংঘাতের যুগে এর দ্রুত বংশবিস্তর ঘটছে।
যে সুইজারল্যান্ডের নিরপেক্ষতার চাদর এতদিন আমাদের চোখের ওপর ঝুলানো ছিল, সেখানকার কয়েকটি ক্যান্টনে (প্রদেশ) এখনও রাষ্ট্রধর্ম হচ্ছে ক্যাথলিক চার্চ।
যে ব্রিটিশের কাছ থেকে আমরা সেক্যুলারিজম শিখেছি, তাদের রাষ্ট্রধর্ম হচ্ছে প্রটেস্ট্যান্ট খ্রিস্টানদের একটা শাখা অ্যাংলিকান চার্চ। ব্রিটেনের রাজা বা রানি যেই হোন না কেন, তাকে আবশ্যিকভাবে অ্যাংলিকান চার্চের প্রধান হতে হবে। এজন্যই ইউরোপে বচনটি চালু হয়েছিল State follow the religion of the ruler. রাজ উত্তরাধিকারদের কেউ অ্যাংলিকান চার্চ ছেড়ে অন্য কোনো চার্চের অনুসারী হলে তাকে রাজা বা রানীর আসনে বসতে দেয়ার আইন নেই। রাজা বা রানির ঈড়ত্ড়হধঃরড়হ অভিষেকের সময় রাজা বা রানিকে প্রটেস্ট্যান্ট ধর্মকে রক্ষার ব্যাপারে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হতে হয়। শুধু তাই নয়, হাউস অব লর্ডসের ২৬ জন সদস্য নির্বাচিত হয় খ্রিস্টান যাজকদের মধ্য থেকে। এদের বলা হয় Lords Spiritual। আইনসম্মতভাবে এরকম একটি বিশেষ ধর্মকে বিশেষ সুবিধা দেয়ার বিধানকে আর যাই হোক সেক্যুলার বলা যায় না। এ ধরনের সাম্প্রদায়িক আইনকানুনকে রদ করার জন্য ব্রিটেনের মুক্তবুদ্ধির মানুষেরা বিভিন্ন সময় চেষ্টা করেছেন। এদের বলা হয় Liberationist । কিন্তু লিবারেশনিস্টদের এসব চেষ্টা আজ পর্যন্ত হালে পানি পায়নি।
সেক্যুলারিজম নিয়ে সব চেয়ে মজার ব্যাপার ঘটে ফ্রান্সে। এটি রাষ্ট্রের ব্যাপারে ধর্মের প্রভাবকে স্বীকার করে না এবং রাষ্ট্র ও ধর্মের পৃথকীকরণের গোড়া সমর্থক। তারপরও ফ্রান্সে ক্যাথলিক চার্চের প্রভাব খুব বেশি। ক্যাথলিক স্কুলগুলো সরকারি অনুদানেই চলে। ফ্রান্সের একটা আইনের নাম হচ্ছে Concordat। এই আইনের আওতায় ফ্রান্সের চার্চগুলো বিশেষ সুবিধা ভোগ করে।
Alsace-Moselle বলে ফ্রান্সের একটি নির্দিষ্ট অংশে চার্চ ও রাষ্ট্রের পৃথকীকরণ মানা হয় না। এখানে রোমান ক্যাথলিক, লুথেরান, ক্যালভিনিস্ট চার্চ ও ইহুদি যাজকরা রাষ্ট্রের বিশেষ সুবিধা পায়। এখানে যাজকদের সরকার বেতন দেয়। ক্যাথলিক ধর্মীয় স্কুলগুলো সরকারি অনুদানে চলে। এমনকি পোপের অনুমোদনক্রমে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এখানকার ক্যাথলিক বিশপদের নিয়োগ দেন।
অথচ ফ্রান্সের দ্বিতীয় সংখ্যাগরিষ্ঠ ধর্ম ইসলাম এরকম সুযোগ-সুবিধা পায় না। আরও মজার ব্যাপাার হচ্ছে, ফ্রান্সে যখন মুসলমান মেয়েদের আইন করে হিজাব নিষিদ্ধ করা হয় এই যুক্তিতে যে, সেক্যুলারিজমের শুদ্ধতা রক্ষার জন্য এটা করা হচ্ছে, তখন সেক্যুলারিজমের তাত্পর্য নিয়ে আমাদের মনে সংশয় জাগে বৈকি।
Concordat-এর মতো আইন পোল্যান্ড, পর্তুগাল, স্পেন ও অস্ট্রিয়াতেও আছে। এছাড়া ইউরোপের অনেক দেশেই আছে রাষ্ট্রধর্মের বিধান। ডেনমার্ক, আইসল্যান্ড, নরওয়ে, ফিনল্যান্ডের রাষ্ট্রধর্ম হচ্ছে লুথেরান চার্চ। সাইপ্রাস, গ্রিসের রাষ্ট্রধর্ম হচ্ছে অর্থডক্স চার্চ। স্কটল্যান্ডের রাষ্ট্রধর্ম হচ্ছে রিফরমড চার্চ।
ইউরোপজুড়ে খ্রিস্টানদের ধর্মীয় উত্সবই জাতীয় উত্সব হিসেবে পালিত হয়। খ্রিস্টানদের ছুটির দিন সরকারি ছুটির দিন হিসেবে স্বীকৃত। ক্রিস্টমাসের সময় ইউরোপ যেভাবে জেগে ওঠে তাতে পশ্চিমা সভ্যতার সেক্যুলারিকরণ নিয়ে ধন্ধে পড়তে হয়। সেখানকার বড় বড় ক্যাথেড্রালগুলো আজও খ্রিস্টীয় সভ্যতার পতাকা হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। আমাদের দেশে যখন ইসলামকে রাষ্ট্রধর্ম করা হয়, তখন এখানকার অনেক সেক্যুলার ভাবুক পীড়িত বোধ করেন এই ভেবে যে, রাষ্ট্র একটি বিশেষ ধর্মের আনুকূল্য করতে গিয়ে নাগরিকদের মধ্যে বৈষম্যের দেয়াল তুলে দিচ্ছে। এতে সংখ্যালঘুরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগবে এবং সাম্প্রদায়িকতার বাড়বাড়ন্ত হবে। ইউরোপজুড়ে এতগুলো দেশের রাষ্ট্রধর্ম খ্রিষ্টান ধর্ম হওয়ার পরও কেউ এসব রাষ্ট্রের সেক্যুলার চরিত্র নিয়ে প্রশ্ন তোলেনি। সেখানকার সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তাহীনতার কথাও কেউ ভাবেনি।
আমাদের দেশের মাদ্রাসা শিক্ষা নিয়ে অভিযোগের শেষ নেই। এগুলো নাকি জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাসবাদ প্রজননের কারখানা। তাহলে ফ্রান্সের ক্যাথলিক স্কুলগুলো কি সেক্যুলারিজম শিক্ষা দিচ্ছে? ব্রিটেনের লর্ডস সভার অনুকরণে আমাদের সংসদে যদি মুফতি-আলেমদের জন্য কিছু আসন সংরক্ষণ করা হয় অথবা সেখানকার রাজার অভিষেকের অনুসরণে আমাদের রাষ্ট্রপ্রধান শপথ নেয়ার সময় যদি ইসলামকে বুলন্দ করার প্রতিজ্ঞা নেন, তাহলে তো রীতিমত চি চি পড়ে যাবে। আসলে ঔপনিবেশিকতা আমাদের অন্ধ, বোবা ও বধির সবকিছুই করে রেখে গেছে।
তিন.
সুইজারল্যান্ডের ঘটনা আমাদের চোখ খুলে দিক। কেতাবি সেক্যুলারিজমের মাহাত্ম্য কথা আর ইউরোপের ফলিত সেক্যুলারিজম এক কথা নয়। সেখানেও অসাম্য আছে। শোষণ আছে, বেইনসাফি আছে। আছে শ্রেণীতে শ্রেণীতে ভেদ-বিভাজন। ধর্মে ধর্মে বিভেদ। বর্ণবাদ ইউরোপ থেকে উঠে যায়নি। ইসলামোফোবিয়া তারই এক রূপ। সেখানকার মুসলমানরা আজ নানারকম সামাজিক ও অর্থনৈতিক ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত। যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও চাকরি-বাকরি থেকেও তারা বঞ্চিত। মুসলমানরাই হচ্ছে সেখানকার সবচেয়ে গরিব ও মজলুম জনগোষ্ঠী। এর ওপর আছে ইসলাম সম্পর্কে ভয়ানক অপপ্রচার।
আজকে পশ্চিমা সাম্রাজ্যবাদ ইসলামপ্রধান জনগোষ্ঠীর সঙ্গে যে অন্যায় যুদ্ধে জড়িয়ে পড়েছে, তারও অন্যতম কারণ ইসলামোফোবিয়া। ইসলামোফোবিয়ার উত্স খুঁজতে হবে খ্রিস্টান ইউরোপের বহু যুগ-যুগান্তের লালিত ইসলামবিদ্বেষের মধ্যে। এই বিদ্বেষের শিকড় উপড়ে ফেলা ছাড়া সভ্যতার সংঘাত শেষ হবে না। আর উদার, সহনশীল ও বহুত্ববাদী পৃথিবী নির্মাণের স্বপ্নও কেবল কেতাবি ব্যাপার হয়ে থাকবে।

No comments

Powered by Blogger.