ন্যাটোকে দিয়ে আমেরিকার মধ্যপ্রাচ্য জয়-আন্তর্জাতিক by নুরুল ইসলাম বিএসসি

র্নেল গাদ্দাফিকে হত্যা করা হয়েছে। যেভাবে হত্যা করা হয়েছে তা আমাদের মধ্যযুগের বর্বরতাকে স্মরণ করিয়ে দেয়। আমি গাদ্দাফির সমর্থক নই বা গাদ্দাফির আচরণেরও ভক্ত নই। গাদ্দাফি বঙ্গবন্ধুর খুনিদের আশ্রয় দিয়ে বাংলাদেশ ও এ দেশের মানুষের বিপরীতে দাঁড়িয়েছিলেন। বঙ্গবন্ধুর একজন কর্মী হিসেবে গাদ্দাফিকে ঘৃণা না করে পারা যায় না।


কিন্তু তবুও কথা থাকে, গাদ্দাফি কি তার দেশের মানুষের জন্য কোনো উপকারই করেননি? যেভাবে মুখে, বুকে লাথি মেরে, মাথায় গুলি করে তাকে হত্যা করা হলো, তাতে মনে হয় যেন একটি বিষধর সাপকেই এরা মারছে। পশ্চিমা বিশ্ব, ন্যাটো_ সবাই আমরা আইনের শাসনের কথা বলি। জীবিত ধরে বিচার না করে কিল-ঘুষি দিয়ে মারার মধ্যে কোনো আইনের শাসন নিহিত আছে কি-না এ মুহূর্তে তা বোঝা মুশকিল। আমেরিকার বন্ধু হলে মধ্যপ্রাচ্যের তেলক্ষেত্রগুলোতে লুণ্ঠন চালাতে পারলে, সব ঠিক। যারাই বাধার সৃষ্টি করবে এদের খতম করাই এখন পশ্চিমা বিশ্বের নীতি। কই সৌদি বাদশাহ তো গণতন্ত্র মানেন না। সৌদি আরবে এখনও বর্বরতা বহাল আছে। শিরশ্ছেদ করে এখনও শাস্তি দেওয়া হলেও পশ্চিমা বিশ্ব টুঁ শব্দটি করে না। সেদিন আটজন বাংলাদেশির শিরশ্ছেদ করা হলেও বিশ্ববিবেক নিশ্চুপ থেকেছে। কারণ বর্তমান সৌদি প্রশাসন পশ্চিমা বিশ্বের স্বার্থ রক্ষা করে এবং তাদের কথামতো চলে।
পত্রিকার খবরে এবং ভিডিও ফুটেজ থেকে দেখা যায়, আল বিবি নামক ১৮ বছর বয়সী এক যুবক গাদ্দাফিকে শুধু গুলি করে ঝাঁঝরাই করেনি, তাকে জুতাপেটাও করেছে। ৪২ বছরের শাসনে এই ১৮ বছর বয়সী যুবক কত ঘৃণা আর বিদ্বেষ নিয়ে বড় হয়েছে! এটাকে বর্বরতা বললেও কম বলা হয়। এর খেসারত একদিন না একদিন লিবিয়াবাসীকে দিতে হতে পারে।
কিছু দিন আগে একই পদ্ধতিতে সাদ্দাম হোসেনকে হত্যা করা হয়েছে। সাদ্দামের দোষ ছিল, জ্বালানি তেলের ন্যায্যমূল্য দাবি করেছিলেন। পশ্চিমাদের কথামতো সস্তা তেল দিতে তিনি রাজি ছিলেন না। রাসায়নিক অস্ত্র আছে_ এ অজুহাতে তাকে উৎখাত করে পরবর্তী সময়ে বিচারের নামে প্রহসন করে তাকে হত্যা করা হয়। তাতে কি ইরাকে শান্তি প্রতিষ্ঠা হয়েছে? কুর্দিরা নতুন করে ইরাককে ভাগ করতে চাইছে। সাদ্দাম হোসেনের অবর্তমানে হয়তো কুর্দিরা একদিন বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে। ইরাক হবে খণ্ডিত। সাদ্দামকে হারিয়ে ইরাকের কী লাভ হয়েছে?
গাদ্দাফির কী দোষ ছিল? দোষ_ গাদ্দাফি কারও কথা শোনেন না। গাদ্দাফি পশ্চিমা বিশ্বের, জাতিসংঘের স্থায়ী কমিটির কঠোর সমালোচক ছিলেন। তিনি কম মূল্যে যার-তার কাছে তেল বিক্রিতে রাজি ছিলেন না। এককথায়, তিনি ছিলেন জাতীয়তাবাদী নেতা। আর জাতীয় স্বার্থ ধরে রাখতে গিয়ে নিজের প্রাণ বিসর্জন দিলেন। তিনি বলেছিলেন, তিনি এক মুহূর্তের জন্যও লিবিয়া ত্যাগ করবেন না। তিনি দেশ ত্যাগ করেননি, কথা রেখেছেন। ভেনিজুয়েলার প্রেসিডেন্ট শাভেজ তাকে শহীদের মর্যাদা দিয়েছেন। আমাদের আজকে বিচার করা প্রয়োজন যে, জাতিসংঘ কী? জাতিসংঘ কার স্বার্থ রক্ষা করে? মূলত জাতিসংঘ আমেরিকা ও তার দোসরদেরই কাজ করে। জাতিসংঘের সদর দফতর বর্তমান অবস্থান থেকে না সরালে এদের একচেটিয়া ব্যবহার থেকে রক্ষার কোনো উপায় নেই। এক সময় ছিল সোভিয়েত ইউনিয়ন, যাকে আমেরিকা একটু সমীহ করত। পরে সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে খান খান হয়ে গেলে আমেরিকাই হয়ে ওঠে বিশ্বের শাসনকর্তা। বর্তমান সোভিয়েত প্রকারান্তরে আমেরিকাকে খুশি করেই চলে। বাকি থাকে চীন। চীন ব্যস্ত এখন ব্যবসা-বাণিজ্য নিয়ে। চীনে মানবাধিকার নেই। বেশি ঘাঁটাঘাঁটি করতে গেলে কোন বিপদ আবার ডেকে আনা হয়_ এই ভয়ে থাকে। এমনিতে আমেরিকা তাইওয়ানকে দিয়ে চীনের ওপর চাপ রেখেছে। ভারতও উঠতি শক্তি। এরাও এখন আমেরিকা তোষণে লিপ্ত। ফিদেল কাস্ত্রোর শাসন এখন অতীত। ভেনিজুয়েলাই এখন একটু উঁচুগলায় কথা বলছে আমেরিকার বিরুদ্ধে। কবে হোয়াইট হাউস ভেনিজুয়েলার প্রেসিডেন্টকে বিপদে ফেলে দেবে, আল্লাহ জানেন।
আমেরিকা এখন বিশ্বশাসক হওয়ার পথে ধীরে ধীরে এগোচ্ছে। তাদের মিশনে যারা বাধা বলে গণ্য হচ্ছে এদের খতম করা হচ্ছে। গাদ্দাফিও ওই খতম মিশনে আত্মাহুতি দিলেন। ভবিষ্যতে এ মিশনের শিকার আর কে কে হবেন তা দেখার বিষয়।

নুরুল ইসলাম বিএসসি : সংসদ সদস্য
 

No comments

Powered by Blogger.