গদ্যকার্টুন-বচনামৃত ও ফরেন হেল্প by আনিসুল হক

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, টাকা থাকলে তিনি ঢাকাকে চার টুকরা করতেন। ঢাকা মানে ঠিক ঢাকাকে নয়, ঢাকা সিটি করপোরেশনকে। নাগরিক সুবিধা জনগণের দোরগোড়ায় তুলে দেওয়ার লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এই সাহসী ও দূরদর্শী পদক্ষেপ।


এই ধরনের একটি বলিষ্ঠ সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রী দেশরত্নকে অভিনন্দন জানিয়ে ঢাকার রাস্তায় রাস্তায় ব্যানার ও পোস্টার লাগানো হয়েছে। দুটো ব্যানার/পোস্টার আমার চোখে পড়েছে। ব্যানারটা ঝোলানো হয়েছে ঢাকার একজন সাংসদ শেখ ফজলে নূর তাপসের পক্ষ থেকে, পোস্টারটা প্রকাশ করেছেন ঢাকার আরেক সাবেক সাংসদ হাজি সেলিম। এই পোস্টার ও ব্যানার দেখে মনে হচ্ছে, টাকার কোনো অভাব নেই। শেখ হাসিনা অবশ্য নিজেও বলেছেন, টাকার কোনো অভাব তার সরকারের নেই।
তেলনির্ভর বিদ্যুৎ উৎপাদনকেন্দ্র প্রতিষ্ঠা ও পরিচালনা করতে গিয়ে প্রচুর জ্বালানি তেল আমদানি করতে হচ্ছে, তাই টাকা চলে যাচ্ছে বিদেশে। ফলে সরকারের হাতে টাকা নেই, এই সমালোচনার জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, দেশে টাকার কোনো অভাব নেই। এই তো কিছুদিন আগে মোবাইল অপারেটর কোম্পানিগুলো লাইসেন্স নবায়ন ফি বাবদ সরকারকে তিন হাজার কোটি টাকা দিয়েছে। আরও টাকা আসছে।
যেহেতু টাকার কোনো অভাব নেই এবং আরও টাকা আসছে, আর যেহেতু, ঢাকা সিটি করপোরেশনকে ভাগ করা হচ্ছে নাগরিক সুবিধা জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেওয়ার জন্য, সুতরাং ঢাকাকে মানে ঢাকা সিটি করপোরেশনকে চার টুকরা করার ভাবনাটা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এখন বাস্তবায়ন করেই ফেলতে পারেন।
এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যথার্থই বলেছেন, শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ঘরে বসে যারা সরকারের বিদ্যুৎ উৎপাদন প্রয়াসের সমালোচনা করেন, তাঁদের বাড়িতে বিদ্যুতের লাইন দুদিনের জন্য হলেও কেটে দেওয়া উচিত। তাহলেই তাঁরা বুঝবেন, বিদ্যুৎ কত জরুরি। আর টিভি টকশোতে বসে কথা বলা সোজা, কিন্তু বাস্তবতা অত্যন্ত কঠিন। বিদ্যুৎ না থাকলে বলবেন বিদ্যুৎ কেন নেই, আবার বিদ্যুৎ পেলে এসি ঘরে বসে সমালোচনা করবেন, টাকা কেন খরচা হয়ে যাচ্ছে, তা তো হবে না।
বিএনপি-জামায়াত জোট রোড মার্চের নামে রোড শো করছে। এসব গাড়ি কীভাবে কেনা হলো, তা জনগণ জানতে চায়। ভাষাকন্যার কণ্ঠেই জনগণের সেই চাওয়া ভাষা পেয়েছে। তিনি বলেছেন, ‘বিরোধীদলীয় নেত্রী ক্ষমতায় থাকতে দুর্নীতির মাধ্যমে কত টাকা কামিয়েছেন তা প্রমাণিত হয় ওই রোড মার্চের গাড়িগুলো দেখলে। প্রত্যেকটা গাড়ির নম্বর নিয়েছি, কারা কীভাবে গাড়ি কিনেছে, সব আমরা দেখব।’
তিনি যথার্থই বলেছেন, ‘বিএনপি আমলের দুর্নীতির কারণেই বিশ্বব্যাংক পদ্মা সেতুর অর্থায়ন স্থগিত করেছে। বিএনপি আমলের যোগাযোগ মন্ত্রীর দুর্নীতির দুটো ডকুমেন্ট বিশ্বব্যাংকের কাছে গেছে। তারপরই তারা অর্থায়ন স্থগিত করেছে। ’
এটা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন অক্টোবর মাসে, লালমনির হাটের জনসভায়। ডিসেম্বরে এসে তিনি বলেছেন, পদ্মা সেতুতে এখনো টাকা বরাদ্দ হয়নি। দুর্নীতি হলো কীভাবে? কাজেই পদ্মা সেতুতে দুর্নীতি হয়েছে, এটা বিশ্বব্যাংককেই প্রমাণ করতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উচিত বিএনপিকেও চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেওয়া। পদ্মা সেতুতে দুর্নীতি হয়নি, এটা বিএনপিকে প্রমাণ করতে হবে। তা না হলে দেশের দুর্নাম হয়ে যাচ্ছে। (কারণ দুর্নীতি হয়ে থাকলে বিএনপির আমলে হয়েছে, আবুল হোসেনের আমলে নয়)
তো বিশ্বব্যাংক যদি টাকা না দেয়, না দেবে। সরকারের টাকার অভাব নেই। দরকার হলে আমরা সরকারি-বেসরকারি অংশীদারির ভিত্তিতে পদ্মা সেতু বানাব। শুধু একটা বানাব না, দুইটা বানাব।
এই কথা যখন আমাদের প্রধানমন্ত্রী উচ্চারণ করেন, গর্বে আমাদের মাথা উঁচু হয়ে ওঠে। কিন্তু এখানেও তথাকথিত টকশো-জীবীরা নানা কথা বলাবলি শুরু করেছেন। তাঁদের মতে, বিশ্বব্যাংকের ঋণ নাকি খুব কম সুদে পাওয়া যায়, আর বেসরকারি উদ্যোক্তার কাছ থেকে সেতু নির্মাণে বিনিয়োগ আনা হলে তারা দাম নেবে বেশি, পরে আমাদের সেতুর সারচার্জ গুনতে হবে চড়া। যাঁরা এসি রুমে বসে এই ধরনের কথা বলছেন, তাঁদের বাড়ির বিদ্যুৎ সংযোগ কেটে দেওয়া হোক। শুধু তাই নয়, তাঁদেরও গাড়ির নম্বর টুকে রাখা হোক, ভবিষ্যতে যখন দুটো পদ্মা সেতু হবে, সেই সেতুতে এই গাড়িগুলো উঠতে দেওয়া হবে না।

হুমায়ূন আহমেদ প্রেরিত কৌতুকের বই থেকে
আমার অফিসের টেবিলে দেখি একটা কাগজের প্যাকেট। প্যাকেটটা খুললাম। দেখি একটা ইংরেজি বই। কৌতুকের বই। বইটা কে পাঠাল, কেন পাঠাল, ভাবছি। তারপর দেখি লেখা:
আনিসুল হক,
তোমার রসিকতাগুলো পানসে হয়ে যাচ্ছে। ফরেন হেল্প নাও।
হুমায়ূন আহমেদ
২৯ নভেম্বর ২০১১, জ্যামাইকা, নিউইয়র্ক।
সর্বনাশ, আমার লেখা যে পানসে হয়ে যাচ্ছে, নিউইয়র্কে বসে হুমায়ূন আহমেদ স্যারও সেটা টের পাচ্ছেন। সত্যি সত্যি আমার ফরেন হেল্প দরকার।
হুমায়ূন স্যারের পাঠানো ৬০০ নতুন কৌতুকের বইটা ঢুঁড়ছি। নাহ, বেশির ভাগ কৌতুকই প্রাপ্তবয়স্কের জন্য। গদ্যকার্টুনের অনেক পাঠক আছে, যারা প্রাপ্তবয়স্ক নয়।
আচ্ছা, পাওয়া গেছে। সারা পলিনকে নিয়ে কৌতুক। সারা পলিন এবার প্রেসিডেন্ট পদে নির্বাচন করুন, এই বিষয়ে ব্যাপক সমর্থন পাওয়া যাচ্ছে।
সকালবেলা এ রকম একটা কথা শুনে সারা পলিন তাঁর এক সহযোগীকে বললেন, ‘এটা কি সত্য অনেকে বলছে, আমার আবার নির্বাচনে দাঁড়ানো উচিত, এবং এবার প্রেসিডেন্ট পদে?’
‘জি, অনেকেই তা বলছে।’
‘তা তারা বলছে পার্টি ফোরামে?’
‘জি, তা তারা বলছে পার্টি ফোরামে।’
‘এবং তারা সবাই রিপাবলিকান?’
সহযোগী তখন মাথা চুলকে বলল, ‘না, তারা রিপাবলিকান নয়। তারা সবাই ডেমোক্র্যাট।’

সারা পলিনের মতো দেখতে একজন মহিলা একটা রেস্তোরাঁয় ঢুকেছেন। সঙ্গে সঙ্গে সেখানে ভীষণ ভিড় জমে গেল। তবে এই জনতা শিগগিরই বুঝতে পারল, এই মহিলা সারা পলিন নন।
কীভাবে?
কীভাবে? জনতা আশ্চর্য হয়ে দেখল, তাদের উত্থাপিত প্রশ্নের সঠিক উত্তর এই মহিলা দিয়ে দিচ্ছেন।
মানে কী? মানে বুঝতে হলে বুশ সাহেবের পুরোনো কৌতুক দিয়ে চালাতে হবে।
বুশ সাহেব গেছেন স্বর্গের দরজায়। প্রহরী তাকে আটকে দিল। বলল, ‘জনাব, আপনার পরিচয়পত্র দেখান।’
বুশ বললেন, ‘আমি বুশ, আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ছিলাম। অবশ্যই আমি স্বর্গে যাওয়ার যোগ্যতা রাখি। আমার আবার পরিচয়পত্র কী?’
প্রহরী বলল, ‘আপনি আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ছিলেন। অবশ্যই আপনি স্বর্গে যাবেন। তবে এখানকার নিয়ম হলো, পরিচয়পত্র দেখিয়ে তারপর ঢুকতে হয়। যেমন ধরুন, একটু আগে পাবলো পিকাসো এসেছিলেন। আমরা তাঁকে বললাম, আপনিই যে পিকাসো, তার প্রমাণ কী। উনি ওনার বিখ্যাত শান্তির পায়রার ছবিটা একটানে এঁকে দিয়ে স্বাক্ষর করে দিলেন। তাঁকে আমরা ঢুকতে দিলাম। তারপর এলেন আইনস্টাইন। তাকে বলা হলো নিজের পরিচয়ের প্রমাণ দিতে। এই দেখুন তিনি লিখে দিয়েছেন ই ইজ ইকুয়াল টু এম সি-স্কয়ার। তারপর তিনি সাইন করেছেন। আমরা তাকে ঢুকতে দিয়েছি। আপনিও একটা কিছু করে দেখান।’
বুশ বললেন, ‘পাবলো পিকাসো, আইনস্টাইন, এরা আবার কারা?’
প্রহরী বলল, ‘বুঝেছি, বুঝেছি, আপনিই বুশ। আপনি প্রবেশ করুন।’
আনিসুল হক: সাহিত্যিক ও সাংবাদিক।

No comments

Powered by Blogger.