সংখ্যালঘু নির্যাতন-সরকার দায় এড়াতে পারে না

মাইকিং করে সাত হিন্দু পরিবারে হামলা, ঘর-মন্দির ভাঙচুর' এবং 'বাজিতপুরে সংখ্যালঘুর বাড়িতে হামলা-ভাঙচুর' শিরোনামযুক্ত এই দুটি সচিত্র প্রতিবেদন গতকাল ৪ সেপ্টেম্বর কালের কণ্ঠে প্রকাশিত হয়েছে। অনাকাঙ্ক্ষিত ও অনভিপ্রেত এসব ঘটনায় যারা জড়িত, তারা শুধু নির্দিষ্ট কোনো এলাকার নয়, গোটা সমাজের কলঙ্ক এবং মানবতার শত্রু।


কুমিল্লা ও বাজিতপুরে যে দুটি ঘটনা ঘটেছে, এর সঙ্গে বিএনপি (কুমিল্লা) ও আওয়ামী লীগের (বাজিতপুর) স্থানীয় নেতাদের সম্পৃক্ততার অভিযোগ রয়েছে। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির এই দেশে যারা এমন দুষ্কর্মে লিপ্ত হয় কিংবা যারা এসব ঘৃণ্য কাজে ইন্ধন জোগায় তারা যেকোনো রাজনৈতিক দলের জন্যই বোঝাস্বরূপ এবং অবশ্যই অবহনযোগ্যও বটে। রাজনৈতিক দলের পরিচয়ে যারা এমন অপকর্ম জায়েজ করার ক্ষেত্রে শক্তি কিংবা ক্ষমতার বহিঃপ্রকাশ ঘটায়, তাদের ব্যাপারে সব কিছুর ঊধর্ে্ব উঠে কঠোর পদক্ষেপ না নিলে সমাজে অপচ্ছায়া বিস্তৃত হবে। এমনটি শুভবুদ্ধিসম্পন্ন কারোই কাম্য হতে পারে না।
কুমিল্লার দেবীদ্বার উপজেলার ডানী গ্রামে ৩ সেপ্টেম্বর কয়েকটি পরিবারের ওপর হামলা, ভাঙচুর, লুটপাট এবং মাইকিং করে আক্রমণ চালিয়ে যে ভয়াবহ ন্যক্কারজনক দৃষ্টান্ত এই গণতান্ত্রিক সরকারের আমলে স্থাপন করা হলো, এর দৃষ্টান্তযোগ্য প্রতিকার জরুরি। এই ঘটনায় সম্পৃক্ত থাকার অভিযোগ উঠেছে বিএনপির স্থানীয় কয়েকজন নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে। একই রকম ঘটনা ঘটেছে বাজিতপুরে। সেখানকার ঘটনায় আওয়ামী লীগের স্থানীয় কিছু নেতা-কর্মীর জড়িত থাকার কথা প্রতিবেদনে প্রকাশ পেয়েছে। ২০০১ সালে জাতীয় নির্বাচনোত্তর সারা দেশে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর হামলা-নির্যাতনের যেসব ঘটনা ঘটেছিল, তা আন্তর্জাতিক অঙ্গনের দৃষ্টি কেড়েছিল এবং ফলে দেশের ভাবমূর্তিও ক্ষুণ্ন হয়েছিল। সেই চিত্র তো বিপুল জনরায়ে ক্ষমতাসীন কোনো সরকারের আমলে কোনোভাবেই প্রত্যাশা করা যায় না। এও মনে রাখা প্রয়োজন, এর কোনোটিকেই বিচ্ছিন্ন ঘটনা বলে উড়িয়ে দেওয়ার অবকাশ নেই। কঠোর প্রতিকারের মধ্যেই রয়েছে এসবের প্রতিবিধান। একটি রাষ্ট্রে প্রত্যেক নাগরিকের অধিকার সমান; এবং বাংলাদেশে তা আরো গভীরভাবে সত্য। কারণ মহান মুক্তিযুদ্ধ আমাদের সব বিভক্তি মুছে দিয়ে অসাম্প্রদায়িক ও গণতান্ত্রিক একটি জাতিরাষ্ট্রের অভ্যুদয় ঘটিয়েছে।
আমরা আশা করি, প্রশাসন সব কিছুর ঊধর্ে্ব উঠে অন্যায়ের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেবে। একই সঙ্গে যেসব রাজনৈতিক নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে, দলীয়ভাবেও তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন। কেউই আইনের ঊধর্ে্ব নয়। ক্ষমতার ছায়াতলে যদি সমাজবিরোধীদের অবস্থান হয়, তাহলে সামগ্রিকভাবে সমাজচিত্র বিবর্ণ হতে বাধ্য। শুভবুদ্ধিসম্পন্ন কারো কাছে এমনটি প্রত্যাশিত নয়। একজন অন্যায়কারী বা সন্ত্রাসীর দলীয় কোনো পরিচয় থাকতে পারে না। আমাদের অতীত অভিজ্ঞতা সুখকর নয়। রাজনৈতিক পরিচয়ে এমন ঘটনা অতীতেও ঘটেছে। দৃষ্টান্তযোগ্য প্রতিকার হয়নি বলেই এমন ঘটনা বারবার ঘটে। আমরা এসবের চির অবসান চাই। রাষ্ট্রের সব নাগরিকের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দায় সরকারের।

No comments

Powered by Blogger.