পিছু হটছে উইকিলিকস? by একরামুল হক শামীম

কিছুদিন আগেই পঞ্চম জন্মদিন পালন করেছে উইকিলিকস। ২০০৬ সালের ৪ অক্টোবর যাত্রা শুরু করেছিল সাইটটি। জন্মদিন উদযাপন করতে গিয়ে ব্যয়বহুল তথ্যযুদ্ধের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে ডোনেশনের অনুরোধ জানিয়েছিল উইকিলিকস। তার ২০ দিনের মাথায় গোপন নথি প্রকাশ সাময়িকভাবে বন্ধ ঘোষণা করেছে তারা। উইকিলিকসের ওয়েবসাইটে (িি.িরিশরষবধশং.ড়ৎম) বড় অক্ষরে লেখা 'উইকিলিকস নিডস ইউ'।


উইকিলিকস জানাচ্ছে_ 'অর্থনৈতিকভাবে বেঁচে থাকা নিশ্চিত করতে আমরা সাময়িকভাবে প্রকাশনা বন্ধ করতে বাধ্য হচ্ছি। প্রায় এক বছর ধরে আমরা একটি বেআইনি অর্থনৈতিক অবরোধ যুদ্ধে লড়ে যাচ্ছি। আমেরিকান বড় আর্থিক কোম্পানিগুলো সারা পৃথিবীর মানুষের মতো পকেটস্থ করবে এমনটি আমরা হতে দিতে পারি না। আমাদের এই যুদ্ধ খুবই ব্যয়বহুল। এই যুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর জন্য আপনাদের সহযোগিতা প্রয়োজন। দয়া করে দান করুন।' উইকিলিকস জানাচ্ছে, নিরাপত্তা খাতে তাদের ৩ লাখ ইউএস ডলার প্রয়োজন। স্টাফদের নিয়মিত বেতনের জন্য ৫ লাখ, ক্যাম্পেইনের জন্য ৩ লাখ, প্রোডাকশনের জন্য ৪ লাখ, প্রকাশনা গবেষণার জন্য ৫ লাখ, টেকনিক্যাল ইনফরমেশনের জন্য ৫ লাখ ডলার প্রয়োজন। তবে সবচেয়ে বেশি অর্থ খরচ হচ্ছে আইনি লড়াইয়ের জন্য। এ খাতে উইকিলিকসের প্রয়োজন ১২ লাখ ডলার। ব্যয়বহুল এই যুদ্ধের জন্যই সাময়িকভাবে প্রকাশনা বন্ধ করেছে উইকিলিকস। উইকিলিকসের তথ্য মতে, ৭ ডিসেম্বর ২০১০ থেকে উইকিলিকসের প্রতি বেআইনি অর্থনৈতিক অবরোধ আরোপিত হয়েছে। ব্যাংক অব আমেরিকা, ভিসা, মাস্টারকার্ড, পেপাল এবং ওয়েস্টার্ন ইউনিয়ন ব্যবহার করে উইকিলিকসকে ডোনেট করার সুবিধা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। উইকিলিকসের তথ্য মতে, ২০১০ সালের নভেম্বর মাসে সর্বোচ্চ ৮ লাখ ইউরো ডোনেশন পেয়েছিল সাইটটি। তার পরের মাস থেকে এই ডোনেশনের অর্থ কমে যেতে থাকে। এটি হয়েছে আমেরিকার কিছু আর্থিক কোম্পানির অসহযোগিতার কারণে।
উইকিলিকস ২০১০ সালের অক্টোবরে ইরাক যুদ্ধ সংক্রান্ত যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় ৪ লাখ গোপন নথি প্রকাশ করেছিল। এসব নথি থেকে জানা যায়, ইরাকে সংঘটিত হত্যাকাণ্ড, মানবাধিকার লঙ্ঘন ও নির্যাতনের অসংখ্য ঘটনা যুক্তরাষ্ট্র প্রকাশ হতে দেয়নি। সে বছরের জুলাইতে আফগানিস্তান যুদ্ধ সংক্রান্ত ৯২ হাজারের বেশি গোপন নথি প্রকাশ করেছিল উইকিলিকস। আফগানিস্তানের নিরপরাধ নাগরিক হত্যার বিষয় উঠে এসেছিল। তবে উইকিলিকস সবচেয়ে আলোচিত হয় যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাসের গোপন নথি প্রকাশ করে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাস থেকে পাঠানো গোপন তারবার্তার নথি প্রকাশ করে দেয় উইকিলিকস। তারপর থেকেই উইকিলিকসের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের এক ধরনের যুদ্ধ চলছে। জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জ একে বলছেন তথ্যযুদ্ধ। স্বীকার করতে দ্বিধা নেই, এই তথ্যযুদ্ধের কারণেই তথ্যবিশ্বের চেহারা পরিবর্তিত হয়ে যায়। গোপন নথি প্রকাশের ক্ষেত্রে শুরুতে কিছুটা বিতর্ক উঠলেও পরবর্তীকালে জনমত উইকিলিকসের পক্ষেই যায়। বিকল্প সাংবাদিকতার ইতিহাসে এই বিষয়টিকে গুরুত্বপূর্ণ ইভেন্ট হিসেবে বিবেচিত।
উইকিলিকসের পাশাপাশি আরেকটি নাম সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়ে। নামটি জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জ। তথ্যযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছেন তিনি। অর্থনৈতিক চাপ নাকি রাষ্ট্রীয় চাপে উইকিলিকসের প্রকাশনা সাময়িকভাবে বন্ধ ঘোষণা করা হয়, তা-ই এখন আলোচনায়। তবে জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জ নিশ্চিত করেছেন, তথ্যযুদ্ধ থামছে না।
 

No comments

Powered by Blogger.