ক্ষতিগ্রস্তদের স্বার্থরক্ষায় সুপারিশ চূড়ান্ত করেছে বিশেষ কমিটি-সরকারের নীতি-অস্থিরতার সপ্তাহ

শেয়ারবাজারের সাম্প্রতিক ধসে ক্ষতিগ্রস্ত বিনিয়োগকারীদের সহায়তা দিতে কিছু সুপারিশ চূড়ান্ত করেছে সরকার-গঠিত বিশেষ স্কিম কমিটি। গতকাল কমিটির সর্বশেষ বৈঠকে এসব সুপারিশ চূড়ান্ত করা হয়। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
কমিটির আহ্বায়ক ও ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশের (আইসিবি) ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ ফায়েকুজ্জামান জানান, ২৭ জানুয়ারির মধ্যে সুপারিশগুলো প্রতিবেদন আকারে অর্থ মন্ত্রণালয়ে জমা দেওয়া হবে।


মোহাম্মদ ফায়েকুজ্জামান আরও জানান, বিনিয়োগকারীদের ক্ষতি, দেশের সামগ্রিক অর্থনীতি ও বাস্তবতা বিবেচনায় নিয়েই সুপারিশগুলো চূড়ান্ত করা হয়েছে। প্রান্তিক ঋণগ্রস্ত ও ঋণ ছাড়া নিজের টাকায় বিনিয়োগ করেছেন—উভয় শ্রেণীর বিনিয়োগকারীদের সহায়তা দেওয়ার বিষয়টি চূড়ান্ত করা হয়েছে।
তবে নগদ অর্থে নয়, নীতি-সহায়তা দিয়ে বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ সুরক্ষার বিষয়টিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।
জানা যায়, ঋণ নিয়ে বিনিয়োগ করে যাঁরা ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়েছেন, তাঁদের বেলায় ঋণের সুদের একটি অংশ মওকুফ ও বিনিয়োগকারীর সামর্থ্য অনুযায়ী ঋণ পুনঃ তফসিলের ব্যবস্থা করা এবং সরকারি-বেসরকারি সব কোম্পানির আইপিওতে ক্ষতিগ্রস্ত বিনিয়োগকারীদের জন্য বিশেষ কোটা সংরক্ষণের সুপারিশ করতে যাচ্ছে কমিটি।
পুঁজিবাজারের সাম্প্রতিক ধসে প্রকৃতই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন এমন বিনিয়োগকারীদের স্বার্থরক্ষায় বিশেষ স্কিম প্রণয়নের জন্য আইসিবির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ ফায়েকুজ্জামানকে প্রধান করে গত ২৭ নভেম্বর ছয় সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়। কমিটিকে দুই মাসের মধ্যে প্রতিবেদন তৈরি করে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগে জমা দিতে বলা হয়। ২৭ জানুয়ারি এই সময়সীমা শেষ হচ্ছে।
কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন: অর্থ মন্ত্রণালয়ের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের উপসচিব নেওয়াজ হোসেন চৌধুরী, সেন্ট্রাল ডিপোজিটরি বাংলাদেশ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম এ সামাদ, সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের নির্বাহী পরিচালক সাইফুর রহমান, ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোশাররফ হোসেন ও প্রধান অর্থ কর্মকর্তা শুভ্র কান্তি চৌধুরী, চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দ সাজিদ হোসেন।
এর আগে কমিটি প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্ত বিনিয়োগকারীদের খুঁজে বের করতে ২০০৯ থেকে ২০১১ সালের নভেম্বর পর্যন্ত বিভিন্ন শ্রেণীর বিনিয়োগকারীর বিনিয়োগতথ্য সংগ্রহ করে। এসব তথ্যের ভিত্তিতে কমিটি সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন মহলের সঙ্গে আলোচনার পর তাদের সুপারিশমালা চূড়ান্ত করেছে।
সাপ্তাহিক বাজারচিত্র: দেশের শেয়ারবাজারে গত সপ্তাহটি ছিল চরম অস্থিরতা ও বিশৃঙ্খলাপূর্ণ। সরকারের নীতিনির্ধারণী সিদ্ধান্তই বাজারে এই বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি তৈরি করে। এ কারণে সপ্তাহজুড়ে রাজধানীর মতিঝিলে ডিএসই ভবনের সামনের সড়কে বিনিয়োগকারীদের ব্যাপক বিক্ষোভ দেখা যায়।
শেয়ারবাজারে কালোটাকা বা অপ্রদর্শিত অর্থ বিনিয়োগ ও সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের শেয়ারে বিনিয়োগ নিয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড এবং জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের দুটি প্রজ্ঞাপন ঘিরে এই অস্থিরতা দেখা দেয়। ব্যাপক প্রতিক্রিয়ার মুখে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিনিয়োগ-সংক্রান্ত পরিপত্রটি জারি হওয়ার দেড় ঘণ্টার মধ্যে আবার প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়।
বাজার পর্যালোচনায় দেখা যায়, গত সপ্তাহ শেষে ডিএসইতে সাধারণ মূল্যসূচক প্রায় ১৬৮ পয়েন্ট বা ৩ দশমিক ২৮ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে চার হাজার ৯৪৬ পয়েন্ট। সপ্তাহ শেষে ঢাকার বাজারের দৈনিক গড় লেনদেনের পরিমাণ আগের সপ্তাহের চেয়ে ৩৪ দশমিক ৪৫ শতাংশ বা ১৫৮ কোটি টাকা কমে নেমে এসেছে ৩০০ কোটিতে। ডিএসইর মোট লেনদেন এক হাজার ৯১ কোটি টাকা বা প্রায় ৪৮ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে এক হাজার ২০৪ কোটি টাকায়।
সপ্তাহজুড়ে ঢাকার বাজারে লেনদেন হওয়া ২৭২টি কোম্পানির মধ্যে ২৪৫টিরই দাম কমেছে, বেড়েছে মাত্র ১৯টির আর অপরিবর্তিত ছিল তিনটি কোম্পানির শেয়ারের দাম।
যোগাযোগ করা হলে বেসরকারি ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির বিজনেস স্কুল বিভাগের শিক্ষক মোহাম্মদ মূসা প্রথম আলোকে বলেন, গত সপ্তাহটি বিনিয়োগকারীদের জন্য ছিল ‘রোলার কোস্টার’ যাত্রা। সপ্তাহজুড়ে উত্থান-পতনের যেসব ঘটনা ঘটেছে, তা কোনো সুস্থ বাজারের লক্ষণ নয়।
মোহাম্মদ মূসা আরও বলেন, শেয়ারবাজার ঘিরে সরকারের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে যেসব ঘটনা ঘটছে, তাতে মনে হচ্ছে, সরকার শেয়ারবাজার নিয়ে কী করতে চায় সেটি সঠিকভাবে বুঝে উঠতে পারছে না। অথবা সরকারের মধ্যে থেকে কেউ না কেউ সরকারকে ভুল পথে পরিচালিত করছে।

No comments

Powered by Blogger.