বোকো হারামের দায়িত্ব স্বীকার-নাইজেরিয়ায় বোমা হামলা বন্দুকযুদ্ধে ১৬২ জন নিহত

নাইজেরিয়ার কানো শহরে নিরাপত্তাকর্মীদের লক্ষ্য করে সমন্বিত বোমা হামলা ও বন্দুকযুদ্ধে গত শুক্রবার সন্ধ্যায় কমপক্ষে ১৬২ জন নিহত হয়েছেন। নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে রয়েছেন বেসামরিক লোক, সাংবাদিক, সেনাসদস্য ও পুলিশ কর্মকর্তা। হামলার দায়িত্ব স্বীকার করেছে ইসলামি জঙ্গিগোষ্ঠী বোকো হারাম। হামলার পর সেখানে সান্ধ্য আইন জারি করা হয়েছে।
কানো শহরটি নাইজেরিয়ার উত্তরাঞ্চলে অবস্থিত। দেশের এই দ্বিতীয় বৃহত্তম শহরটি মূলত মুসলিম-অধ্যুষিত। কানো শহরের যে আটটি লক্ষ্যবস্তুতে বোমা হামলা চালানো হয়েছে, তার মধ্যে রয়েছে পুলিশ সদর দপ্তর, তিনটি পুলিশ কেন্দ্র, গোয়েন্দা সদর দপ্তর এবং অভিবাসনবিষয়ক প্রধান কার্যালয়।
পুলিশ জানায়, শহরে মোট ২০টি বড় ধরনের বোমা বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে। এর মধ্যে একজন আত্মঘাতী হামলাকারী আঞ্চলিক পুলিশ কার্যালয়ে বোমার বিস্ফোরণ ঘটায়। আর রাজ্যের পুলিশ সদর দপ্তরের বাইরে একটি গাড়িবোমার বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। হামলাকারীদের অনেকেই পালিয়ে যায় এবং কয়েকজন নিরাপত্তাকর্মী গুলিতে নিহত হন।
পুলিশ সূত্র জানায়, পুলিশ সদর দপ্তরে একজন সম্ভাব্য আত্মঘাতী হামলাকারী বিস্ফোরকভর্তি গাড়ি নিয়ে পুলিশ কমিশনারের গাড়িবহরে ঢুকে পড়ার চেষ্টা করে। তবে পুলিশ কর্মকর্তারা তাঁকে লক্ষ্য করে গুলি ছুড়লে হামলাকারী গাড়ি থেকে লাফ দিয়ে বের হয়ে পালানোর চেষ্টা করে। তবে গুলিতে সে নিহত হয়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বোমা বিস্ফোরণের পর পুলিশ সদর দপ্তর ও গোয়েন্দা সদর দপ্তর থেকে ধোঁয়ার কুণ্ডলী উড়তে দেখা যায়। হামলায় জানালা ভেঙে চুরমার হয়ে যায়, ছাদ ধসে পড়ে এবং সেখানে আগুন লেগে যায়। পরে দমকল কর্মীরা আগুন নিয়ন্ত্রণে আনেন।
বোমা হামলার পাশাপাশি শহরের বিভিন্ন এলাকায় গুলির শব্দও পাওয়া গেছে। স্থানীয় একটি টেলিভিশনের সাংবাদিক সহিংসতার খবর সংগ্রহের সময় গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা গেছেন। এ ছাড়া নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে কমপক্ষে ১১ জন পুলিশ কর্মকর্তা বলে ধারণা করা হচ্ছে।
কানো শহরের প্রধান মর্গের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, মর্গে এ মুহূর্তে ১৬২ জনের লাশ রয়েছে। এই সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। রেডক্রসের একটি সূত্র জানায়, তারা ১২১টি লাশ গুনতে পেরেছে।
রাজ্যের পুলিশ সদর দপ্তরের কাছাকাছি বসবাসকারী নাজিরু মুহাম্মদ বলেন, তিনি তাঁর বাড়ি থেকে পুলিশ সদর দপ্তর পর্যন্ত হেঁটে যাওয়ার পথে অন্তত ১৬টি মৃতদেহ রাস্তায় পড়ে থাকতে দেখেছেন, যার মধ্যে ছয়টি ছিল পুলিশ সদস্যের। একটি মেডিকেল সূত্র বলেছে, একই হামলায় একজন সেনাসদস্য ও একটি মেয়ের মৃত্যু হয়েছে।
স্থানীয় সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, হামলার দায়িত্ব স্বীকার করে ইসলামি গোষ্ঠী বোকো হারামের পক্ষে বিবৃতি দিয়েছে একজন মুখপাত্র। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, কারাগার থেকে তাদের সহযোগীদের মুক্তি দিতে কর্তৃপক্ষের অস্বীকৃতির জবাবে এই হামলা চালানো হয়েছে।
হামলার পর কানো শহরজুড়ে সান্ধ্য আইন জারি করেছে কর্তৃপক্ষ। পরবর্তী ঘোষণা না দেওয়া পর্যন্ত এই সান্ধ্য আইন বলবৎ থাকবে।
অন্যদিকে কানো শহরে হামলার পরপরই দেশটির দক্ষিণাঞ্চলীয় বায়েলসা প্রদেশের রাজধানী ইয়েনাগোয়া শহরে পর পর দুটি শক্তিশালী বোমার বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। তবে কেউ হতাহত হয়নি। নাইজেরিয়ার প্রেসিডেন্ট জনাথন গুডলাকের নিজ শহর ইয়েনাগোয়া। এএফপি, রয়টার্স ও বিবিসি।

No comments

Powered by Blogger.