পাঠ্যবই-যথাসময়ে শিক্ষার্থীদের হাতে পৌঁছাতে হবে

ত দুই বছর খুব ভালো একটি উদাহরণ সৃষ্টি করেছিল শিক্ষা মন্ত্রণালয়। বছরের শুরুতে স্কুলের প্রথম দিনটিতেই শিক্ষার্থীদের হাতে হাতে নতুন পাঠ্যবই পেঁৗছানো গিয়েছিল। তাতে শিক্ষার্থীরা যেমন উৎসাহিত ও উপকৃত হয়েছিল, তেমনি অভিভাবকরাও স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছিলেন। স্বাভাবিক নিয়মে ক্লাস শুরুর সঙ্গে সঙ্গেই শিক্ষার্থীদের কাছে বই পেঁৗছানোর কথা। কিন্তু সাম্প্রতিক অতীতে এই স্বাভাবিক প্রত্যাশাটাই পূরণ হতে পারছিল না।


শুধু যথাসময়ে বই পাওয়ার ক্ষেত্রেই নয়, অসময়ে বই পেতেও নানা সমস্যা হচ্ছিল। বর্তমান সরকার ক্ষমতাসীন হওয়ার পর শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বিশেষ উদ্যোগে পাঠ্যবই ছাপার কার্যক্রমে গতি এসেছিল। যথাসময়ে ছেপে বই শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিতরণের ব্যবস্থাও হয়েছিল। কিন্তু এ বছর ভিন্ন ধরনের সমস্যায় পড়েছে পাঠ্যপুস্তক ছাপার কাজ। সংশ্লিষ্টরা সংশয় ব্যক্ত করেছেন, অভিভাবকরা চিন্তিত। কিন্তু যে কারণে পাঠ্যবই ছাপার কাজ বিলম্বিত হচ্ছে সেটিকে সাধারণ চোখে অনেকের কাছেই অদ্ভুত বলে বিবেচিত হতে পারে। ষষ্ঠ, সপ্তম ও অষ্টম শ্রেণীর একাধিক বিষয়ের পাঠ্যবই ছাপার কাজ শুরু করা যাচ্ছে না সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী প্রকাশিত না হওয়ায়। বাংলা ও সমাজ বইয়ে সংশোধনীর আলোকে নতুন কিছু আর্টিকেল যুক্ত হওয়ার কথা। কিন্তু অফিশিয়ালি পূর্ণাঙ্গ আকারে সংবিধানের সংশোধিত কপি হাতে না পাওয়ায় সেটি করতে পারছেন না সংশ্লিষ্টরা। সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী সংসদে পাস হয়েছে ৩০ জুন। রাষ্ট্রপতি তাতে সম্মতি দিয়েছেন ৩ জুলাই। এরপর গেজেট আকারে সংশোধনী প্রকাশিতও হয়েছে। গেজেট প্রকাশের তিন মাসের বেশি সময় পার হওয়ার পরও সংশোধিত সংবিধান পূর্ণাঙ্গ আকারে প্রকাশিত হতে পারেনি। সংশোধিত সংবিধান প্রকাশ ও প্রচার একটি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব। সরকারের নিয়ন্ত্রণাধীন বিজি প্রেস এ দায়িত্ব পালন করে। তিন মাসের মধ্যে জরুরি সরকারি কাজের জন্যও এ প্রতিষ্ঠান কেন সংবিধান প্রকাশ করতে পারল না সেটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। আবার এ প্রশ্নও ওঠা উচিত যে, রাষ্ট্রপতি কর্তৃক অনুমোদিত হওয়ার পর গেজেট আকারে সংশোধিত ধারাগুলো প্রকাশের পরও জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) কেন পূর্ণাঙ্গ সংবিধানের জন্য অপেক্ষা করছে? সংশোধিত ধারাগুলো গেজেটে স্পষ্টভাবেই লিখিত আছে। শুধু তা-ই নয়, এগুলো নিয়ে সমাজে নানাভাবে কথাবার্তাও চলছে। এনসিটিবিও স্পষ্টই জানে, পাঠ্যবইয়ে তারা নতুন কী বিষয় অন্তর্ভুক্ত করবে। তাহলে পূর্ণাঙ্গ সংবিধানের জন্য অপেক্ষা কেন সে প্রশ্ন উঠবে। ষষ্ঠ থেকে অষ্টম শ্রেণীর শিশুদের জন্য নিশ্চয় আইনের জটিল ব্যাখ্যা উপস্থাপন করা হবে না, রাজনৈতিক বিবাদ নিয়ে তাদের পাঠদানের প্রয়োজনও নেই। জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে যে সাধারণ তথ্য পাঠ্যবইয়ে যুক্ত হবে তা খুব জটিল কাজ বলে মনে হয় না। তবু এনসিটিবির পক্ষ থেকে যখন পঞ্চদশ সংশোধনীসহ পূর্ণাঙ্গ সংবিধানের প্রকাশিত কপি চাওয়া হচ্ছে তখন আমরা আশা করব বিজি প্রেস দ্রুত সংবিধান প্রকাশ ও প্রচারের ব্যবস্থা করবে। শুধু পাঠ্যবইয়ের জন্য নয়, নাগরিকদের ব্যবহারের জন্যও এটি জরুরি। পাশাপাশি, যথাসময়ে শিক্ষার্থীদের হাতে পাঠ্যপুস্তক পেঁৗছানোর যে ধারা গত দুই বছরে অনুসৃত হয়েছে কোনো ঠুনকো অজুহাতে এবার তার ব্যত্যয় ঘটবে না বলেই আমরা আশা করি। এ বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয় পূর্ববৎ আন্তরিক তৎপরতা চালিয়ে গেলে ভালো ফল মিলবে বলে সকলেই আশা করে। সেটাই হোক, শিক্ষার্থীরা নতুন ক্লাসে নতুন বই নিয়ে হাজির হতে পারুক এটাই আমাদের কামনা।
 

No comments

Powered by Blogger.