পদ্মা সেতু দুর্নীতি তদন্ত-জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে

র্তমান বিশ্বে একটি দেশের অবকাঠামো নির্মাণ প্রকল্পের দুর্নীতি যে আরেক দেশের ভূখণ্ডে বসেই হতে পারে তার আরো একটি প্রমাণ মিলল পদ্মা সেতু দরপত্র প্রক্রিয়া নিয়ে বিশ্বব্যাংকের অনুরোধে মন্ট্রিলভিত্তিক প্রতিষ্ঠান এএনসি-লাভালিন ইনকরপোরেশনের কার্যালয়ে রয়াল কানাডিয়ান মাউন্টেড পুলিশের অভিযানের মধ্য দিয়ে। বিশ্বব্যাংকের অনুরোধে কানাডার কর্তৃপক্ষ প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে সার্চ ওয়ারেন্ট জারি করেছে।


ফলে এএনসি লাভালিনের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান সার্চের সম্মুখীন হচ্ছে। বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশের সবচেয়ে বৃহৎ চার মাইল দীর্ঘ পদ্মা সেতু নির্মাণে ৪০ বছর মেয়াদে ইতিমধ্যেই ১২০ কোটি ইউএস ডলার ঋণ চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছে। বিশ্বব্যাংকের নেতৃত্বে একটি আন্তর্জাতিক কনসোর্টিয়াম গত বছর ২৯০ কোটি ইউএস ডলার অনুমোদনের ব্যাপারে সম্মতি দেয়। উল্লেখ্য, ২৯টি দেশে ৪৮টি প্রকল্পে দুর্নীতি ঠেকাতে বিশ্বব্যাংক সম্প্রতি একটি প্রিভেনশন সার্ভিস ইউনিট চালু করেছে, যেখানে যেকোনো অনিয়ম ও সন্দেজনক লেনদেনের ব্যাপারে তাৎক্ষণিক অডিট পরিচালনার জন্য দুই হাজার ৭০০ কর্মকর্তাকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। বিশ্বব্যাংক এ তদন্তে কোনো অনিয়মের প্রমাণ পেলে সত্যিই বিব্রতকর পরিস্থিতির সম্মুখীন হবেন বাংলাদেশ সরকারের যোগাযোগমন্ত্রী। ইতিমধ্যেই যোগাযোগমন্ত্রী দেশের অভ্যন্তরে সড়ক অবকাঠামোর দুর্দশা নিয়ে চাপের মুখে পড়েছেন। সেই সঙ্গে নতুন করে যোগ হয়েছে উইকিলিকসে প্রকাশিত মার্কিন কেব্ল্ তথ্য। ৩০ আগস্ট উইকিলিকসের প্রকাশিত তথ্যে দেখা গেছে, ২০১০ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি ঢাকাস্থ মার্কিন দূতাবাস থেকে ওয়াশিংটনে পাঠানো এক গোপন তারবার্তায় বাংলাদেশে নিযুক্ত তৎকালীন রাষ্ট্রদূত জেমস এফ মরিয়ার্টি লিখেছিলেন, চীনের সঙ্গে যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেনের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। তিনি উল্লেখ করেছেন, যোগাযোগমন্ত্রীর সততা প্রশ্নবিদ্ধ। এ ছাড়া মরিয়ার্টি লিখেছেন, বাংলাদেশের অনেক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা আমাদের জানিয়েছেন, যোগাযোগমন্ত্রী যে পদ্ধতিতে কাজ করেন, তাতে অনেক সমস্যা রয়েছে। জেমস এফ মরিয়ার্টির মন্তব্য এবং বিশ্বব্যাংকের দুর্নীতির তদন্ত পদ্মা সেতু নির্মাণ প্রকল্প নিয়ে আমাদের শঙ্কিত করে। পদ্মা সেতু নির্মাণকাজ সম্পন্ন হলে দেশের অপেক্ষাকৃত অনুন্নত দক্ষিাঞ্চলের সঙ্গে রাজধানী ঢাকা এবং বন্দরনগর চট্টগ্রামের যুগান্তকারী সড়ক যোগাযোগ প্রতিষ্ঠিত হবে। দেশের এতবড় স্বার্থ নিয়ে কোনো অনিয়ম, তা যে পক্ষ থেকেই হোক, জনগণ মেনে নেবে না। যোগাযোগমন্ত্রী তথা সরকারের প্রতি আস্থা অটুট রাখতে বর্তমান নাজুক পরিস্থিতিতে কী করণীয় তার বাস্তবসম্মত উপায় সরকারকেই খুঁজে বের করতে হবে। বিশ্বব্যাংক কেন, কোন প্রয়োজনে তদন্ত করছে, এ তদন্তের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পৃক্ততা কী, কারো সম্পৃক্ততা থাকলে তা কী ধরনের সম্পৃক্ততা_এসব বিষয় সরকারের নিজের স্বার্থেই নির্মোহ দৃষ্টিতে জনগণের সম্মুখে প্রকাশ করা অতি প্রয়োজন বলে আমরা মনে করি। এতে যদি কানাডার প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে বাংলাদেশের কোনো দায়িত্বশীল ব্যক্তির সম্পৃক্ততা না থাকে সেটাও ঘোষণা দেওয়া দরকার। এমন একটি বৃহৎ প্রকল্প নিয়ে সরকারের ভাবমূর্তি নষ্ট হওয়ার ব্যাপারে অতি সতর্ক থাকা প্রয়োজন। আমরা মনে করি, এ ব্যাপারে এখন স্বয়ং প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ প্রয়োজন। এ সংকটে সরকারের উচিত হবে বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেওয়া। সরকারকে মনে রাখতে হবে, এ বিষয়ে যেকোনো তদন্ত এবং তথ্য আদান-প্রদানের প্রয়োজন হলে বিশ্বব্যাংকে নিজেদের স্বার্থেই শতভাগ সহযোগিতা দিতে হবে, নচেৎ প্রকল্পের অর্থ ছাড়সহ নানা ধরনের ক্ষতির সম্মুখীন আমরা হতে পারি।

No comments

Powered by Blogger.