সময়ের কথা-অনশন করে বেতন বাড়িয়ে নাও by অজয় দাশগুপ্ত

শিক্ষকদের বেতন বাড়ানো উচিত_ এটা অনেকেই এখন স্বীকার করেন। যথেষ্ট বেতন না হলে মেধাবীরা এ পেশায় আসবে না। আর মেধাবীরা না এলে শিক্ষার মান বাড়ানোর যে প্রবল তাগিদ সেটাও অসম্পূর্ণ থেকে যাবে। শুধু নিবন্ধনকৃত প্রাইমারি স্কুল নয়, হাই স্কুল ও কলেজ শিক্ষকদের বেতন বাড়ানো উচিত।


এ জন্য শিক্ষা খাতে সরকারের বরাদ্দ বাড়াতে হবেই। একই সঙ্গে বেসরকারি খাতের অংশগ্রহণও চাই শাসক দলের একজন বিশিষ্ট নেতা (সংসদ সদস্যও বটে, মন্ত্রিসভায় রদবদলের গুঞ্জন উঠলে তার নামও থাকে) একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠান চলাকালে এক পাশে ডেকে নিয়ে জানতে চাইলেন, \'কী হচ্ছে দেশে?\' তাকে হেসে বলি, আজ (১৮ জানুয়ারি) একাধিক সংবাদপত্রে খবর রয়েছে_ প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষকদের একটি অংশের কর্মবিরতির কারণে ২৪ হাজার প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ক্লাস হয়নি। প্রতিটি বিদ্যালয়ে ১০০ জনও যদি থেকে থাকে, তাহলে ২৪ লাখ ছাত্রছাত্রী পড়াশোনা করতে পারেনি।
আমি এ ধরনের পাশ কাটানো বিষয় তোলায় এমপি সাহেব যে খুশি হননি, সেটা বোঝার জন্য বুদ্ধিমান হওয়ার দরকার নেই। তিনি প্রকৃতই দেশের হালচালে উদ্বিগ্ন। প্রায় কানের কাছে মুখ এনে বলেন, দেশে অনেক গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। কিন্তু তার সমর্থনে প্রকাশ্যে পিএম (প্রধানমন্ত্রী) ছাড়া কেউ মুখ খোলেন না। আবার যারা কিছুটা মুখ খোলেন, তাদের কথা পাবলিকে গ্রহণ করে না। অতিকথন বা উল্টাপাল্টা কথায় তারা ক্ষোভ বাড়ান। তিনি ঢাকা সিটি করপোরেশন উত্তর ও দক্ষিণ_ দুই ভাগে ভাগ করার প্রসঙ্গ টানেন। বলেন, বাজারে আগুন এবং তাতে মানুষ ক্ষুব্ধ। পদ্মা সেতু না হওয়ায় বরিশাল-খুলনা-যশোর অঞ্চলের কোটি কোটি মানুষ দারুণ অসন্তুষ্ট। ঢাকা থেকে মাত্র দুই ঘণ্টায় বরিশাল যাওয়ার প্রকল্প নিয়ে এমন আনাড়িপনা অসহ্য। পত্রপত্রিকা যারা পড়েন, ছাত্রলীগও তাদের ক্ষোভের বড় কারণ। প্রধানমন্ত্রী এ সংগঠনের নেতৃত্ব সর্বোচ্চ ২৯ বছর বয়সীদের মধ্যে সীমিত করে দিলেও তার ইতিবাচক প্রভাব পড়ে না এ সংগঠনে। তারা প্রধানমন্ত্রীর উদ্বেগকে পরোয়া করছে না। মূল দল আওয়ামী লীগে বিভক্তির কথাও তিনি বলেন। নরসিংদী পৌরসভার নির্বাচনের আগে প্রধানমন্ত্রী বললেন, সন্ত্রাসীদের হাতে নিহত মেয়র লোকমান হোসেনের ভাই কামরুজ্জামানকে যেন নরসিংদী আওয়ামী লীগ সমর্থন দেয়। কিন্তু দেখা গেল, শহর আওয়ামী লীগ সভাপতি_ যিনি এ হত্যাকাণ্ডের অন্যতম আসামি_ তিনি প্রধানমন্ত্রীর উপদেশ কেয়ার করলেন না, বরং প্রার্থী হয়ে গেলেন এবং শোচনীয়ভাবে পরাস্ত হলেন। কুমিল্লায় শাসক দলের প্রার্থীও হেরেছেন শোচনীয়ভাবে। তার বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছিলেন আওয়ামী লীগেরই দুই তরুণ নেতা। আর মেয়র পদে জিতেছেন বিএনপির এক নেতা, যাকে কেবল কৌশলগতভাবেই দল থেকে \'অব্যাহতি\' দেওয়া হয়। নারায়ণগঞ্জেও আওয়ামী লীগের অফিসিয়াল প্রার্থী শামীম ওসমান হেরে যান বিপুল ভোটে। আর যে সেলিনা হায়াৎ আইভী জয়ী হন বিপুল ভোটে তার পেছনে অফিসিয়াল আওয়ামী লীগ নেই।
৬২ বছরের পুরনো দলটির পায়ের তলায় ভিত কি তাহলে শক্ত আছে? দলটি সদস্য সংগ্রহের অভিযান চালাবে বলেছিল। কেউ তাতে সাড়া দেয়নি। সম্মেলন করার ঘোষণা এসেছিল। তাতে কারও নজর নেই। সরকারের পক্ষে জনমত গঠনের জন্য ঘোষণা দেওয়া হয় সমাবেশ-মিটিংয়ের। তাতে সফলতা আসে না।
একাত্তরে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী বাঙালিদের চিরতরে দমিয়ে রাখার জন্য যে সর্বাত্মক গণহত্যা অভিযান শুরু করেছিল তার পেছনে \'এ দেশীয় মদদ\' সবচেয়ে বেশি মিলেছিল জামায়াতে ইসলামীর কাছ থেকে। তারা রাজাকার ও আলবদর বাহিনী গড়ে তুলেছিল। রাজাকার বাহিনী ছিল বাঙালিবিদ্বেষী সব ধর্মান্ধ দলের জন্য উন্মুক্ত। কিন্তু আলবদর বাহিনীকে জামায়াতে ইসলামী রেখেছিল একান্তই নিজেদের হার্ডকোর কর্মীদের জন্য। ডিসেম্বরে যখন মুক্তিবাহিনী ও ভারতীয় বাহিনী ঢাকাকে মুক্ত করার চূড়ান্ত অভিযান শুরু করে, তখনও জামায়াতে ইসলামী এবং তাদের আলবদর বাহিনী মাথা ঠাণ্ডা রেখে কাজ করে। জামায়াতে ইসলামী নভেম্বরের শেষ দিকে ঢাকায় এবং ডিসেম্বরের প্রথম দিকে গোটা বাংলাদেশে হরতাল আহ্বান করেছিল এই \'মুক্তি অভিযানের\' বিরুদ্ধে। ১৩-১৪ ডিসেম্বর যখন পাকিস্তানি সেনাবাহিনী তাদের পরাজয় মেনে নিয়ে আত্মসমর্পণের সিদ্ধান্ত মুক্তি ও মিত্র বাহিনী এবং যুক্তরাষ্ট্রকে জানিয়ে দেয় তখনও জামায়াতে ইসলামী বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করার পরিকল্পনা বাস্তবায়নে ধীরস্থিরভাবে কাজ করতে থাকে। আরও একটি বিষয় মনে রাখা দরকার। ১৬ ডিসেম্বরের পর জামায়াতে ইসলামী এবং তাদের আলবদর বাহিনীর নেতা ও সক্রিয় সদস্যরা সুপরিকল্পিতভাবে \'পশ্চাদপসরণ\' করেছিল। গোলাম আযম পাকিস্তানে চলে যান। কিন্তু মতিউর রহমান নিজামী, আলী আহসান মুজাহিদ, কামারুজ্জামানসহ দলের শীর্ষ নেতারা কেউই কিন্তু গ্রেফতার হয়নি। তারা সেই কঠিন সময়ে খুব সতর্কতার সঙ্গে নিজেদের শক্তিকে বাঁচিয়ে রাখে। নিশ্চিতভাবেই বলা যায় যে, তাদের অনেকেই সে সময়ে বাংলাদেশের বাইরে চলে যায় এবং ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর বাংলাদেশে ফেরত আসে। এ সুযোগ করে দেওয়ার জন্য জিয়াউর রহমানের নেতৃত্বে তৎকালীন সামরিক নেতৃত্বকে দায়ী করা যায় অবশ্যই। কিন্তু এটাও ঠিক যে, স্বাধীনতার পরবর্তী দিনগুলোতে আওয়ামী লীগ এ বিষয় নিয়ে আদৌ তেমন মাথা ঘামায়নি। বাংলাদেশের স্বাধীনতাবিরোধী স্ট্রাইকফোর্স কোথায় অবস্থান নিয়ে কী অপকর্ম করে চলেছে তা নিয়ে মাথা ঘামানোর পরিবর্তে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা বেশি ব্যস্ত ছিল দলাদলি এবং \'ক্ষমতার সুবিধা\' ভোগ করতে। এখন যেমন দেশবাসী দেখছে যে সরকারি কাজের টেন্ডার পেতে আওয়ামী লীগ-ছাত্রলীগ মরিয়া_ সে সময়েও ছিল এটা প্রকটভাবে। তখন আরও একটি বিষয় ছিল_ পরিত্যক্ত শিল্প, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও বাড়িঘর দখল। বায়তুল মোকাররম ও নিউ মার্কেটের দোকানগুলোর পজেশন রাতারাতি বদল হয়ে যায়। সরকার যেসব ব্যবসা ও শিল্প প্রতিষ্ঠান জাতীয়করণ করে সেগুলোর প্রশাসক-ম্যানেজার হতে আগ্রহী লোকের অভাব ছিল না। সদ্য গড়ে ওঠা যুবলীগ নামের সংগঠনটির নেতারা ব্যস্ত হয়ে পড়ে সরকারের ব্যবসা করায়। ছাত্রলীগ ১৯৭২ সালের শুরুতেই বিভক্ত হয়ে পড়ে এবং বড় অংশ হয়ে পড়ে মূল আওয়ামী লীগের বিরোধী। এ অবস্থায় জামায়াতে ইসলামী কোথায় কী করে চলেছে, তা নিয়ে ভাবার খুব বেশি লোক ছিল না। তারা দেশের বাইরে থেকে নতুন চক্রান্ত আঁটতে থাকে। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের পর তারা রীতিমতো ১৯৪৭ সালের ১৪ আগস্টের পরিবেশ পেয়ে যায়। সামরিক শাসন তাদের জন্য অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি করে। তখন গণতান্ত্রিক শক্তির জন্য সামান্যতম রাজনৈতিক তৎপরতাও নিষিদ্ধ। কিন্তু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মুহসীন হলে জামায়াতে ইসলামী ও একাত্তরের ঘাতকদের সংগঠন ইসলামী ছাত্রসংঘের নবজন্ম দেয় ইসলামী ছাত্রশিবির নামে। তারা ছাত্র-জনতার সমর্থনে মহীরুহ হয়নি ঠিকই, কিন্তু যা কিছু সুন্দর, মহৎ ও উদার, যেখানে রয়েছে গণতন্ত্রের উপাদান_ সবকিছুতে আঘাত হানার মতো শক্তি সঞ্চয়ের চেষ্টা করেছে। মধ্যপ্রাচ্যের কয়েকটি দেশ, বিশেষ করে সৌদি আরবের আর্থিক ক্ষমতা তাদের জন্য দারুণ প্রেরণা। তাদের জন্য একমাত্র সমস্যা বাঙালিদের ধর্মান্ধতার বিরুদ্ধে প্রবল ক্রোধ-রোষ। এর প্রমাণ বিশেষভাবে মিলেছে শায়খ আবদুর রহমান ও বাংলাভাইয়ের নেতৃত্বে জঙ্গি তৎপরতার সময়।
গোলাম আযম-মতিউর রহমান নিজামীর বিচার কাজ শুরু হলে এই অপশক্তি মরিয়া হয়ে তা বানচালের চেষ্টা চালাবে, এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা এ বিষয়টিকে তেমন আমল দিয়েছে বলে মনে হয় না। জনজীবনে যেসব সমস্যা রয়েছে তা নিয়ে তারা মাঠ গরমের চেষ্টা চালাবে। বিএনপির এক কেন্দ্রীয় নেতা কিছুদিন আগে বলেছেন, ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বরের নির্বাচনে বিপর্যয়ের পর এত দ্রুত তারা ঘুরে দাঁড়াতে পারবে, সেটা এমনকি ম্যাডামও ভাবতে পারেননি। তাদের সভা-সমাবেশে প্রচুর লোক হচ্ছে। নেতাকর্মীরা ফের ক্ষমতায় আসার ব্যাপারে দারুণ আস্থাশীল। পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের ফল তাদের আশাবাদী করে তুলেছে। বিগত নির্বাচনে বিপর্যয়ের জন্য দলের অনেক নেতাকর্মীই যুদ্ধাপরাধীদের সঙ্গে নির্বাচনী জোট গঠনকে দায়ী করেছিল। কিন্তু এখন শুধু জামায়াতকে নিয়ে একত্রে চলা হচ্ছে না, বিএনপি প্রকাশ্যে বিচার কাজ বন্ধ রাখারও দাবি করেছে এবং তাতে দলে তেমন অসন্তোষ নেই। ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য বিএনপি যা করার সবই করবে বলে তিনি মনে করেন।
২৪ হাজার শিক্ষকের আন্দোলনের প্রসঙ্গ টানতে গিয়ে এত কথা কেন, সে প্রশ্ন করা যেতেই পারে। শুধুু শিক্ষকরা নন, আরও অনেকেই তাদের দাবি নিয়ে সোচ্চার। বিশেষ করে দ্রব্যমূল্যের কশাঘাতের কারণে সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছে বিপুলসংখ্যক মানুষ। এর বিপরীত সমস্যাও রয়েছে। ধান ও পাটের দাম না পেয়ে কৃষকরা ক্ষোভের প্রকাশ ঘটাচ্ছে। ফুলকপি-বেগুন-বাঁধাকপি-আলুর দামও কৃষক পর্যায়ে মিলছে না। এ বছর শীত মৌসুমে এসব পণ্যের ক্রেতা মধ্যবিত্ত যথেষ্ট খুশি। চালের দামও কম। কিন্তু উৎপাদক কৃষকের হাতে ফসলের ভালো দাম পেঁৗছাতে না পারলে অর্থনীতির ওপর তার বিরূপ প্রভাব পড়ে। এখন সংবাদপত্র ও টেলিভিশনে নিয়মিত কৃষকের বক্তব্য তুলে ধরা হচ্ছে। বাজার ব্যবস্থাপনায় তারা দারুণ হতাশ। ভারতের পশ্চিমবঙ্গেও এবারে কৃষক ফসলের ন্যায্যমূল্য পাচ্ছে না বলে অভিযোগ। কয়েকজন কৃষক এজন্য আত্মহত্যাও করেছে। বাংলাদেশে এমন ঘটনা এখনও ঘটেনি। তারা সুযোগ পেলে শুধু ক্ষোভের কথা জানায়। ডিজেল ও সারের দাম বাড়তে থাকায় বোরো মৌসুমে তাদের বড় ধরনের সমস্যায় পড়তে হবে। কিন্তু প্রাইমারি স্কুলেরর্ িশক্ষকদের মতো স্কুল বন্ধ রেখে রাজপথে নেমে আসার সুযোগ তাদের নেই। বাংলাদেশে এখন প্রাইমারি স্কুল আশি হাজারেরও বেশি। ছাত্রছাত্রী এক কোটি ৬০ লাখের বেশি। ছাত্র ও ছাত্রী সংখ্যা সমান সমান। শিক্ষক সংখ্যা কেবল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়েই সাড়ে তিন লাখের বেশি। তারা নিয়মিত বেতন পান, যদিও এর পরিমাণ বর্তমান চড়া দ্রব্যমূল্যের বাজারে সামান্যই বলতে হবে। প্রাথমিক স্কুলের মধ্যে ২০ হাজার রয়েছে, যার শিক্ষকরা \'সরকারি\' হতে চায়। তাদের বেতন-ভাতা সরকারি স্কুলগুলোর তুলনায় অনেক কম। এ কারণে তারা সরকারি হতে চায় এবং মাঝেমধ্যে না খেয়ে অর্থাৎ অনশন করে নিজেদের ক্ষোভ জানায়, স্কুলে তালা ঝুলিয়ে দেয়। ছাত্রছাত্রীরা নতুন বই হাতে পেয়েছে। প্রাইমারি স্কুল বন্ধ থাকলে সচ্ছল পরিবারের সন্তানদের সমস্যা নেই। কিন্তু দরিদ্র পরিবারের সন্তানরা স্কুলবিমুখ হবে, এটাই স্বাভাবিক। কে ভাববে তাদের কথা?
নিবন্ধনকৃত বা রেজিস্টার্ড প্রাথমিক বিদ্যালয় যারা গড়ে তুলেছে তারা অভিনন্দন পেতেই পারে। এসব স্কুলে শিক্ষক হওয়ার জন্য অনেককে ঘুষ দিতে হয়েছে। তারা মনে করেছেন, সরকারি হয়ে গেলে সমস্যা কমবে। সরকারের আর্থিক সামর্থ্য সীমিত। তাই এগোতে হয় ধীরস্থিরভাবে। কিন্তু পেটের তাগিদেই শিক্ষকরা অস্থির। তারা রাজপথে নামেন। যাদের ঘুষ দিয়ে তারা শিক্ষক হয়েছেন তারা বলে_ আপনারা অনশন করেন আর মিছিল-মিটিং করে যেভাবে পারেন_ দাবি আদায় করে নেন। আমাদের কিছু করার নেই। কিন্তু এমন ঘোষণা দিতে পারে না বাংলাদেশের কৃষক। তাদের ফসলের দাম বাড়িয়ে নেওয়ার ক্ষমতা সীমিত। অনেক সময় দেখা যায়, বাম্পার ফসলের সুবিধা কৃষকের চেয়ে ফড়িয়ারা বেশি ভোগ করে। ধান ভালো হলে বাজারে স্বস্তি থাকে, কিন্তু কৃষকের দুশ্চিন্তা বাড়ে। তারা অনশন করে দাবি আদায় করতে পারে না। স্কুল শিক্ষকদের মতো দাবি আদায়ের জন্য জমিতে \'তালা ঝোলাতে\' পারে না।
শিক্ষকদের বেতন বাড়ানো উচিত_ এটা অনেকেই এখন স্বীকার করেন। যথেষ্ট বেতন না হলে মেধাবীরা এ পেশায় আসবে না। আর মেধাবীরা না এলে শিক্ষার মান বাড়ানোর যে প্রবল তাগিদ সেটাও অসম্পূর্ণ থেকে যাবে। শুধু নিবন্ধনকৃত প্রাইমারি স্কুল নয়, হাই স্কুল ও কলেজ শিক্ষকদের বেতন বাড়ানো উচিত। এ জন্য শিক্ষা খাতে সরকারের বরাদ্দ বাড়াতে হবেই। একই সঙ্গে বেসরকারি খাতের অংশগ্রহণও চাই। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বা জগন্নাথ কিংবা জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে যেসব পরিবারের সন্তানরা গাড়ি করে আসে এবং সচ্ছল জীবনযাপন করে তারা কেন মাসে ২০-৩০ টাকা বেতনে পড়ার সুযোগ পাবে? দেশের রাজনীতি কোন পথে সে বিষয় নিয়ে যারা সদাসর্বদা ভাবেন, তাদের কিন্তু এসব বিষয়েও মাথা ঘামানো চাই। স্কুল-কলেজের ম্যানেজিং কমিটি নিয়েও ভাবতে হবে। এটা এখন স্পষ্ট যে, দলীয় ম্যানেজিং কমিটি শিক্ষার মান বাড়ানোর পথে সবচেয়ে বড় প্রতিবন্ধক। তারা শিক্ষক নিয়োগে ঘুষ নেয়, স্কুলের ভবন তৈরিতে সরকারি বরাদ্দে ভাগ বসায়। শিক্ষার স্বার্থকে গৌণ করে দেখে নিজেদের সংকীর্ণ স্বার্থ প্রাধান্য দেয়।

অজয় দাশগুপ্ত :সাংবাদিক
ajoydg@gmail.com

No comments

Powered by Blogger.