‘তারাও বেঁচে গেছে দেশও বেঁচে গেছে’-ষড়যন্ত্র উদ্ঘাটনের জন্য সেনাবাহিনীকে ধন্যবাদ: হাসিনা

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অভ্যুত্থানের ষড়যন্ত্র উদ্ঘাটনের জন্য সেনাবাহিনীকে ধন্যবাদ দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘তারা সময়মতো ষড়যন্ত্র ধরতে পেরেছে। এতে তারাও বেঁচে গেছে, দেশও বেঁচে গেছে। কারণ, ক্ষতি তো তাদের বেশি। এটা সময়মতো উদ্ঘাটন করতে না পারলে যে কী হতো!’ গতকাল শনিবার গণভবনে নোয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনের তৃণমূল নেতাদের সঙ্গে দলের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের এক মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে শেখ হাসিনা এসব কথা বলেন।
বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়ার উদ্দেশে শেখ হাসিনা এ সময় বলেন, ‘যা বলার সংসদে এসে বলেন। ভিন্ন পথ খুঁজে ক্ষমতায় যাওয়া বাংলাদেশে আর হবে না।’ তিনি বলেন, ‘বিরোধীদলীয় নেতা বলেছিলেন, ডিসেম্বর পর্যন্ত সরকার ক্ষমতায় থাকতে পারবে না। এখন তাঁর কথার অর্থ তো বোঝা গেল, এর লক্ষণ তো দেখা যাচ্ছে। জনগণ তাঁকে ভোট দেবে না বলেই এসব করা হচ্ছে।’
শেখ হাসিনা বলেন, মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে সেনাবাহিনী গড়ে উঠেছে। সেই সশস্ত্র বাহিনীর ঘাড়ে বন্দুক রেখে যারা ক্ষমতায় এসেছে, তারাই হত্যা, খুন, ষড়যন্ত্র করেছে। তারা সশস্ত্র বাহিনীরই ক্ষতি করেছে। এখনো তাদের চরিত্র বদলায়নি। তাদের বক্তৃতা-বিবৃতি বিশ্লেষণ করলেই সব স্পষ্ট হয়ে যায়।
শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধুর খুনিদের রাজনীতিতে পুনর্বাসনের জন্য জিয়া ও এরশাদকে দায়ী করে বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর খুনিদের জিয়া বিদেশে চাকরি দিয়ে পুরস্কৃত করেছিলেন। তাঁর স্ত্রী রাজনীতিতে এসে ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি ভোটারবিহীন নির্বাচনে রশীদ ও হুদাকে সাংসদ বানান। একইভাবে এরশাদও এই খুনিদের মদদ দেন। রাজনীতি করার জন্য তাদের দল গঠনের সুযোগ দেন। রশীদকে সাংসদ বানান। ফারুককেও বানাতে চেয়েছিলেন। হত্যাকারী, মানবতাবিরোধীদের নিয়েই তাঁদের রাজনীতি। তাঁরা মানুষকে শান্তি ও কল্যাণ দিতে পারেন না।’
শেখ হাসিনা বলেন, জিয়া সামরিক কর্মকর্তাদের নির্বিচারে হত্যা করেন। বিভিন্ন কারাগারে ও ফায়ারিং স্কোয়াডে হত্যা করা হয়। প্রতিদিন কিছু না কিছু ফাঁসির নির্দেশে সই না করলে জিয়ার নাশতাই করা হতো না। আওয়ামী লীগের বহু নেতা-কর্মীকেও তখন হত্যা, খুন, গুম করা হয়।
শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগের আমলে দেশের সব নির্বাচন শান্তিপূর্ণভাবে হয়েছে। এত শান্তিপূর্ণ নির্বাচন কখনো দেশে হয়নি। বিএনপির সময়ে রমনা-তেজগাঁও আসনের উপনির্বাচনে বিরোধীদলীয় নেতার একজন প্রিয় ব্যক্তিত্বকে পাস করাতে নির্লজ্জের মতো ভোট কারচুপি হয়। এটা ঢাকাবাসী ভুলে যায়নি। বিএনপি ক্ষমতায় থাকা মানেই ভোট কারচুপি ও ভোট ডাকাতি। তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশনের কাজে সরকার হস্তক্ষেপ করছে না। দেশে শান্তিপূর্ণভাবে নির্বাচন করতে কেবল আওয়ামী লীগই পারে। আওয়ামী লীগের নীতি-আদর্শই হচ্ছে জনগণের ক্ষমতা জনগণের কাছে তুলে ধরা।
মতবিনিময়কালে সংসদ উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম, শেখ ফজলুল করিম সেলিম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
বেসামরিক ব্যক্তি জড়িত থাকলে রাষ্ট্রদ্রোহের অপরাধ: সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে সরকার উৎখাতের অপচেষ্টা প্রসঙ্গে আইনমন্ত্রী শফিক আহমেদ বলেন, কিছুদিন আগে এ ধরনের একটি অপচেষ্টাকে সেনাবাহিনী নস্যাৎ করে দিয়েছে। এই অপচেষ্টার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের বিচারের জন্য সেনা আইনে আদালত গঠিত হয়েছে। অন্য কেউ জড়িত আছে কি না, তার তদন্ত চলছে।
রাজধানীর বিচার প্রশাসন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটে বিচারকদের এক প্রশিক্ষণ কোর্সের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তৃতার পর সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে আইনমন্ত্রী এসব কথা বলেন। এ সময় তিনি বলেন, সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে সরকার উৎখাতের অপচেষ্টায় কোনো বেসামরিক ব্যক্তি জড়িত থাকলে তা রাষ্ট্রদ্রোহ বলে বিবেচিত হবে এবং রাষ্ট্রদ্রোহের অপরাধে তাকে বিচারের আওতায় আনা হবে।

No comments

Powered by Blogger.