বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা-টিপাইমুখ বাঁধ হলে ভূমিকম্প ও সুনামি আঘাত হানতে পারে

ভারতে প্রস্তাবিত টিপাইমুখ প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে এ অঞ্চলে বড় ধরনের ভূমিকম্প ও সুনামি আঘাত হানতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা। তাঁদের মতে, ওই প্রকল্পের নেতিবাচক প্রভাব বাংলাদেশের প্রায় তিন কোটি মানুষের ওপর পড়বে। গতকাল রবিবার ঢাকায় জাতীয় প্রেসক্লাবে আয়োজিত এক গোলটেবিল বৈঠকে বিশেষজ্ঞরা এ অভিমত দেন। 'টিপাইমুখ বাঁধ : বাংলাদেশের জন্য করণীয়' শীর্ষক ওই গোলটেবিল বৈঠক আয়োজন করে আন্তর্জাতিক


ফারাক্কা কমিটি, নিউ ইয়র্ক ও আন্তর্জাতিক ফারাক্কা কমিটি বাংলাদেশ। জাতিসংঘের সাবেক পানি ও পরিবেশ বিশেষজ্ঞ ড. এস আই খান বৈঠকে বলেন, টিপাইমুখ প্রকল্প এলাকা ভূমিকম্পের জন্য অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ।
গত ১১০ বছরে ওই এলাকায় বড় ধরনের অনেক ভূমিকম্প হয়েছে। তিনি বলেন, টিপাইমুখ বাঁধে (ড্যাম) ৫০০ ফুট গভীর জলাধার নির্মাণ করা হবে। এর ফলে প্রতি বর্গমিটারে ১৬০ টন চাপ সৃষ্টি হবে, যা ওই অঞ্চলে বড় ধরনের ভূমিকম্পের আশঙ্কা সৃষ্টি করবে। এস আই খান বলেন, বড় ধরনের ভূকম্পনের ফলে টিপাইমুখ বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এর ফলে জলাধারের পানি ভাটিতে নেমে আসবে অর্থাৎ মেঘনা অববাহিকার জনগণকে ভাসিয়ে নিয়ে যাবে। এ ছাড়া বড় ধরনের সুনামির আশঙ্কাও থাকবে।
ইন্টারন্যাশনাল ফারাক্কা কমিটি বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ড. জসীম উদ্দিন আহমেদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত ওই গোলটেবিল বৈঠকে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ভাষাসৈনিক আবদুল মতিন, ইন্টারন্যাশনাল ফারাক্কা কমিটি-নিউ ইয়র্কের সাধারণ সম্পাদক ড. জাফরুল্লাহ খান, টিপু সুলতান, ইঞ্জিনিয়ার
আবদুল কাদের ও নিউ নেশন সম্পাদক মোস্তফা কামাল মজুমদার।
ড. এস আই খান বৈঠকে বলেন, মণিপুরে বরাক নদের ওপর বিতর্কিত টিপাইমুখ বাঁধ নির্মাণের পরিকল্পনা নিয়েই ভারত সরকার অগ্রসর হচ্ছে। কিন্তু এটি আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন। পানিবিষয়ক আন্তর্জাতিক আইন ও সনদ অনুযায়ী ভাটির দেশে ক্ষতির আশঙ্কা থাকে এমন কিছু উজানের দেশ অভিন্ন নদ-নদীতে করতে পারে না।
তিনি আরো বলেন, ওয়ার্ল্ড কনজারভেশন অন ড্যামস অনুযায়ী অভিন্ন নদ-নদীর ওপর যদি কোনো দেশ ১৫ মিটার উঁচু ও কমপক্ষে ৩০ লাখ ঘনমিটার ধারণ ক্ষমতাসম্পন্ন জলাধার নির্মাণ করতে চায়, তবে ওই প্রকল্প অবশ্যই ভাটির দেশগুলোর সরকারগুলোর কাছেই শুধু নয়, অববাহিকার ওপর নির্ভরশীল জনগণের কাছেও গ্রহণযোগ্য হতে হবে।
১৯৯৬ সালে সই হওয়া গঙ্গা চুক্তির নবম অনুচ্ছেদের কথা উল্লেখ করে এস আই খান বলেন, ওই অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, পারস্পরিক সাম্য, স্বচ্ছতা ও ক্ষতি না করার নীতি থেকে উভয় দেশ অভিন্ন নদ-নদীর পানি বণ্টনে চুক্তি বা সমঝোতার ব্যাপারে সম্মত হয়েছে। তিনি বলেন, প্রস্তাবিত টিপাইমুখ প্রকল্পের উচ্চতা ১৬৩ মিটার এবং জলাধারের ধারণক্ষমতা দেড় কোটি ঘনমিটার। এর পরও ভাটির দেশ বাংলাদেশের সঙ্গে এ নিয়ে আলোচনা করার কোনো আগ্রহ ভারত দেখায়নি।
হেলসিঙ্কি সনদের কথা উল্লেখ করে এস আই খান বলেন, উজানের দেশ এমন কিছু করতে পারে না যার নেতিবাচক প্রভাব ভাটির দেশের পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্যের ওপর পড়ে। কিন্তু ভারতের টিপাইমুখ প্রকল্প বাস্তবায়নের বিতর্কিত উদ্যোগ বাংলাদেশে পরিবেশগত বিপর্যয় ডেকে আনবে।
টিপাইমুখ প্রকল্প বাস্তবায়নের আগে জাতিসংঘের অধীনে একটি পরিবেশ ও আর্থ-সামাজিক বিষয়ক একটি যৌথ সমীক্ষা চালানোর প্রস্তাব দেন ড. জসীম উদ্দিন আহমেদ। তিনি জাতীয় স্বার্থ মাথায় রেখে ভারতের একতরফা সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে সব শ্রেণীর মানুষকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান।

No comments

Powered by Blogger.