মিলনমেলা-আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ভার্সিটিতে কালের কণ্ঠ by মাহমুদুল হাসান

র্মের বৈচিত্র্যময় সড়ক ধরেই জীবনের এ প্রবাহ চলছে। নিত্যকর্মের ঘানি টানতে গিয়ে জীবন হয়ে পড়েছে আড়ষ্ট। একটু নতুনত্ব, একটু বিনোদন তখন জীবনের কাম্য হয়ে ওঠে। আর এ বিনোদনের বিচিত্র শাখার মধ্যে অন্যতম সংবাদপত্র। ইতিহাসের চলন্তিকা। এর মূল কাজ হলো চলমান রাষ্ট্রব্যবস্থা ও সমাজের সঙ্গে পাঠককে সচেতন রাখা এবং তাল মেলাতে সাহায্য করা। এই কথাগুলো বললেন আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশের
(এআইইউবি) বিবিএর প্রথম সেমিস্টারের শিক্ষার্থী জোবায়ের হালিম খান। তাঁর কথা শেষ হতে না হতেই হাজির রাতুল, আশা, পিয়াশ, লাবণী, জুয়েলসহ অন্যরা। তাঁরা বললেন, গণমাধ্যমের কল্যাণে আমরা সমাজে ঘটে যাওয়া অজানা তথ্যগুলো খুব সহজেই পাই। সংবাদপত্র অনুসন্ধানের মাধ্যমে খবরের পেছনের খবর আমাদের সামনে তুলে ধরে। সে ক্ষেত্রে কালের কণ্ঠ পত্রিকা প্রশংসার দাবিদার। কালের কণ্ঠের বস্তুনিষ্ঠ সাংবাদিকতায় আমরা মুগ্ধ।
তরুণ প্রজন্মের মধ্যে সংবাদপত্র পাঠের অভ্যাস গড়ে তুলতে আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিতে শিক্ষার্থীদের হাতে দেওয়া হয় কালের কণ্ঠ। গতকাল রবিবার এ আয়োজনে চার সহস্রাধিক শিক্ষার্থী ছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের হাতে তুলে দেওয়া হয় কালের কণ্ঠের কপি। এ আয়োজন চলাকালে শুভসংঘের বন্ধুদের কাছে শিক্ষার্থীরা নিজেদের অভিমত প্রকাশ করেন এভাবেই।
এরই মধ্যে এআইইউবির সাতটি ক্যাম্পাসে শুরু হয়ে যায় কালের কণ্ঠের জয়জয়কার। ইলেকট্রিক অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং (ইইই) ভবনের সামনের খোলা আকাশ, গাছপালাঘেরা মনোরম পরিবেশে প্রতিদিনই আড্ডায় মাতেন মাহাজাবিন, তানভির, হোসাইন মুরসালিন, রীজবানুল ইসলামসহ অনেকে। গতকালও তার ব্যতিক্রম ছিল না। তবে সবার হাতে ছিল কালের কণ্ঠ।
দেখা যায়, ভবনের পাশের চায়ের দোকানে বসে চায়ের কাপে চুমুক দিতে দিতেই কালের কণ্ঠ পড়ছেন অনেক শিক্ষার্থী। ক্লাসের ফাঁকে প্রতিদিনের আড্ডার বিষয়বস্তু অন্য কিছু থাকলেও গতকাল চলে কালের কণ্ঠ নিয়ে আলোচনা। কালের কণ্ঠের অন্য কোনোখানে, মগজ ধোলাই, ঘোড়ার ডিমের মজার মজার বিষয় নিয়ে আলোচনায় মেতে ওঠেন তাঁরা।
দুপুরে অনাড়ম্বর এক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ভিসি ড. কারমেন জেড ল্যামাগনার হাতে শুভেচ্ছা স্মারক তুলে দেন কালের কণ্ঠের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক ইমদাদুল হক মিলন। এ সময় তিনি বলেন, 'আমরা কালের কণ্ঠের সঙ্গে অভিভাবক, শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের আবদ্ধ করতে চাই। সময়ের দাবি মেটাতেই গণমাধ্যমের সঙ্গে সর্বসাধারণের যোগসূত্র তৈরিতে কাজ করছে কালের কণ্ঠ।'
ভিসি ড. কারমেন জেড ল্যামাগনা বলেন, 'শিক্ষার্থী-শিক্ষকদের বন্ধুভাবাপন্ন সম্পর্ক শিক্ষাকে প্রাণবন্ত করে। এ প্রতিষ্ঠানে সেটা আছে। আমি শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ার জন্য সর্বোচ্চ সুবিধা দিতে চাই। দিতে চাই কর্মমুখী শিক্ষা। নিয়মিত ক্লাসের পাশাপাশি বিভিন্ন সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের সুযোগ দেওয়া হচ্ছে শিক্ষার্থীদের। কালের কণ্ঠের মেলবন্ধনের উদ্যোগকে স্বাগত জানান তিনি।
এ সময়ে এআইইউবির ডিরেক্টর-পিআর-কোঅর্ডিনেটর অব পুলিশ অফিসারস কম্পিউটার ট্রেনিং প্রোগ্রামার মো. লুৎফর রহমান, পরিচালক প্রশাসন লে. কর্নেল গোলাম মাওলা, সহকারী পরিচালক আবু মিয়া আকন্দ, স্টুডেন্টস অ্যাফেয়ারসের ডেপুটি ডিরেক্টর জিয়ারত হোসেন খান, মো. রকিবুল আলম পলক প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ইলেকট্রিক অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থী জিকরুল হাসান বলেন, 'আমার পুরো পরিবারই কালের কণ্ঠের নিয়মিত পাঠক। আমার বাবা একজন মুক্তিযোদ্ধা। যে স্বপ্ন নিয়ে তিনি যুদ্ধ করেছিলেন, তার মধ্যে দেশ স্বাধীন হওয়া ছাড়া আর কোনো স্বপ্নই পূরণ হয়নি। স্বাধীনতার মাসে কালের কণ্ঠের মাধ্যমে তরুণসমাজকে বলতে চাই, ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন ও ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে যেভাবে তরুণরা নিজের জীবন বাজি রেখে যুদ্ধ করেছেন, একইভাবে আজকের তরুণদেরও সামাজিক ও অর্থনৈতিক বৈষম্য, দুর্নীতি এবং দলীয়করণের বিরুদ্ধে আরেকটি যুদ্ধ করতে হবে।' একই বিভাগের শিক্ষার্থী সাইফুল হাসান বলেন, 'পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে এসব বৈষম্য ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ গড়ে উঠেছে এবং তার নেতৃত্বে আছে তরুণ সমাজ। কিন্তু আমাদের দেশে সে প্রতিবাদ এখনো গড়ে ওঠেনি। প্রতিবাদের জন্য প্রয়োজন একটি প্লাটফরম। সেজন্য সংবাদমাধ্যম বড় একটি ভূমিকা রাখতে পারে। সে ক্ষেত্রে কালের কণ্ঠের এ ধরনের উদ্যোগ তরুণ সমাজকে জাগ্রত করবে।'
কালের কণ্ঠের শুভসংঘের বন্ধুদের পরিচালনায় গতকাল আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির সাতটি ক্যাম্পাসে সকাল ৯টা থেকে দুপুর ৪টা পর্যন্ত এ আয়োজন চলে।
উল্লেখ্য, ৮৩/বি, রোড-৪, কামাল আতাতুর্ক এভিনিউতে বনানীর প্রশাসনিক ভবনসহ মোট সাতটি অস্থায়ী ক্যাম্পাসে চলছে বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম। ১৯৯৪ সালের ৪ নভেম্বর প্রতিষ্ঠিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি ১৯৯৫ সালের ৬ নভেম্বর বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন ও বাংলাদেশ সরকারের অনুমোদন পায়। বর্তমানে শিক্ষার্থী সংখ্যা প্রায় ১০ হাজার। প্রতিটি ক্যাম্পাসের নিরাপত্তায় রয়েছে সিসি ক্যামেরা। সুসজ্জিত ল্যাব ও ল্যাবরেটরি রুম, বিটিসিএলের সাবমেরিন ক্যাবলের সঙ্গে সংযুক্ত ২০ মেগাবাইট ব্যান্ডউইথের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা পাচ্ছেন আইটি সুবিধা।

No comments

Powered by Blogger.