পবিত্র কোরআনের আলো-সত্যের পথে আহবান জানানোর ক্ষেত্রে কখনো হতাশ হওয়ার কারণ নেই

৬৪. ওয়া ইয ক্বা-লাত উম্মাতুম্ মিনহুম লিমা তায়ি'যূনা ক্বাওমা; আল্লা-হু মুহ্লিকুহুম আও মুআ'য্যিবুহুম আ'যা-বান শাদীদা; ক্বা-লূ মা'যিরাতান ইলা রাবি্বকুম ওয়া লাআ'ল্লাহুম ইয়াত্তাক্বূন। ১৬৫. ফালাম্মা নাছূ মা যুক্কিরূ বিহি আনজাইনাল্লাযীনা ইয়ানহাওনা আ'নিচ্ছূয়ি ওয়া আখায্নাল্লাযীনা যালামূ বিআ'যা-বিম্ বায়ীছিম্ বিমা কা-নূ ইয়াফ্ছুক্বূন। ১৬৬. ফালাম্মা আ'তাও আ'ম্মা নুহূ আ'নহু ক্বুলনা লাহুম কূনূ কি্বরাদাতান খা-ছিয়ীন।


[সুরা : আল-আ'রাফ, আয়াত : ১৬৪-১৬৬] অনুবাদ : ১৬৪. আর যখন তাদের মধ্যকার একটি দল অন্য দলকে অর্থাৎ উপদেশ প্রদানকারী দলকে বলেছিল, তোমরা এমন সব লোককে কেন উপদেশ দিচ্ছ, যাদের আল্লাহ ধ্বংস করে ফেলবেন অথবা কঠোর শাস্তি দেবেন? তখন তারা (উপদেশ প্রদানকারীরা) বলল, আমরা এটা করাই এ জন্য, যাতে আমরা জগতের প্রতিপালকের কাছে দায়িত্বমুক্ত হতে পারি, আর এটাও তো হতে পারে যে, এ উপদেশের বদৌলতে তারা দায়িত্বনিষ্ঠ হয়ে উঠতে পারে। ১৬৫. তাদের যে উপদেশ দেওয়া হয়েছিল তা যখন তারা ভুলে গেল, তখন খারাপ কাজে যারা বাধা দিচ্ছিল তাদের তো আমি রক্ষা করি, কিন্তু যারা জুলুম করেছে তাদের আমি তাদের পাপাচারের কারণেই কঠোর শাস্তিতে নিপতিত করেছি। ১৬৬. অতঃপর তাদের যেসব কাজ থেকে নিষেধ করা হয়েছিল, যখন তারা সে কাজগুলোই আরো ধৃৃষ্টতার সঙ্গে করছিল, তখন আমি তাদের বললাম, তোমরা লাঞ্ছিত বানর হয়ে যাও।

ব্যাখ্যা : ১৬৪ ও ১৬৫ নম্বর আয়াতে নবী দাউদ (আ.)-এর আমলের বনি ইসরাইলের আদর্শিক ও নৈতিক অবস্থা বর্ণনা করতে গিয়ে তাদের মধ্যকার তিনটি স্তরের কথা বর্ণনা করা হয়েছে। এদের একদল তো নাফরমানি ও বক্রতা অনুসন্ধানে লেগেই থাকে। দ্বিতীয় দলটি হলো এদের যারা প্রথম দিকে নাফরমানদের সঠিক পথে আনার জন্য চেষ্টা করেছিল। কিন্তু তারা যখন মানল না তখন হতাশ হয়ে নিষ্ক্রিয়তা অবলম্বন করে এবং আত্মকেন্দ্রিক হয়ে পড়ে। তৃতীয় দলটি হলো তাদের যারা হতাশ না হয়ে নিজেদের দৃঢ়বিশ্বাস ও দায়িত্ববোধে অবিচল থাকে এবং বিভ্রান্তদের সঠিক পথে আনার চেষ্টা চালিয়ে যায়। ১৬৪ নম্বর আয়াতে দ্বিতীয় দল কর্তৃক তৃতীয় দলটিকে যে প্রশ্ন করা হতো তা উল্লেখ করে তৃতীয় দলের উত্তরের কথাগুলো বর্ণনা করে প্রকৃত মুমিন, দৃঢ়চিত্ত ও দায়িত্বনিষ্ঠদের অবস্থান পরিষ্কার করা হয়েছে। এসব বলিষ্ঠ চরিত্রের লোক তাদের অবস্থানের পক্ষে দুটি যুক্তি তুলে ধরেছেন। তাদের প্রথম যুক্তিটা এ রকম যে যখন আমরা আল্লাহর দরবারে হাজির হব তখন বলতে পারব, হে আল্লাহ! আমরা আমাদের গোত্রের নাফরমানদের তোমার পথে আহ্বান জানানোর মাধ্যমে অন্তত আমাদের দায়িত্ব পালন করেছি। আমরা তাদের নাফরমানির অংশীদার নই। দ্বিতীয় যুক্তিটা হলো, আমরা সব সময়ই আশাবাদী হয়ে থাকব এই ভেবে যে তাদের মধ্য থেকে কোনো ব্যক্তি আমাদের কথা শুনে আল্লাহর আদেশ মানবে এবং পাপের পথ থেকে ফিরে সত্যের পথে আসবে। আল্লাহ তায়ালা কোরআন মজিদে দৃঢ়চিত্ত ইমানদারদের এ উত্তরটি বিশেষভাবে উদ্ধৃত করে মুসলমানদের সতর্ক করছেন যে সমাজে পাপাচারের ব্যাপক বিস্তার ঘটলে একজন মুমিনের দায়িত্ব কেবল এতটুকুতেই শেষ হয়ে যায় না যে সে কেবল নিজেকে বাঁচানোর চেষ্টা করবে। বরং অন্যকে সঠিক পথ দেখানোও তার দায়িত্ব। এটা করা ছাড়া সে দৃঢ়চিত্ত বা দায়িত্বশীল মুমিন হতে পারবে না। মানুষ না বুঝে যা-ই করুক, সত্যের দাওয়াতদাতার পক্ষে হতাশ হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। হেদায়াতের আশায় সত্যের দাওয়াত সর্বদা চালু রাখতে হবে_এটাই চিরন্তন
ইসলামের শিক্ষা।
গ্রন্থনা : মাওলানা হোসেন আলী

No comments

Powered by Blogger.