চাপ বাড়ছে রিজার্ভের ওপর by ওবায়দুল্লাহ রনি

রকারের আমদানি দায় মেটাতে গিয়ে চাপ বাড়ছে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের ওপর। বাড়ছে ডলারের দাম, কমে যাচ্ছে রিজার্ভ। বিশেষত জ্বালানি আমদানির দায় মেটাতে এই চাপ বলে জানা গেছে। যদিও চাপ সামলে নিতে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ব্যাংকগুলোকে ডলার সরবরাহ করছে বাংলাদেশ ব্যাংক। চলতি অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে কেন্দ্রীয় ব্যাংক রিজার্ভ থেকে সরাসরি বিক্রি ও ধারের মাধ্যমে চার ব্যাংককে সরবরাহ করেছে ১১১ কোটি ২০ লাখ ডলার।


এর মধ্যে শুধু গত নভেম্বরেই দেওয়া হয়েছে ২৮ কোটি ডলার। বিপিসির জ্বালানি তেল আমদানি দায় মেটাতে বিকল্প উৎসের সন্ধান করতে না পারলে রিজার্ভ থেকে বেশি পরিশোধ করতে হবে। এটি অব্যাহত থাকলে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে চাপ আরও বাড়বে বলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক মনে করছে। অন্যদিকে সরকার আর্থিক সংকটের ফলে একদিকে যেমন ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে ঋণ করে চলছে, তেমনি অন্যদিকে
রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ব্যাংকগুলোতে বকেয়াও
রাখছে প্রচুর অর্থ।
যোগাযোগ করা হলে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন অগ্রণী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবদুল হামিদ বলেন, 'মুদ্রাবাজারে চাপের বিষয়টি সত্য। তবে এটিকে আমি সমস্যা হিসেবে দেখছি না। কেননা সরকার বিদ্যুৎ-জ্বালানি খাতের উন্নয়নে বিভিন্ন পণ্য আমদানি করছে। তাই জাতীয় অর্থনীতির স্বার্থে সাময়িক এ সংকট একটি ছোট সমস্যা। তিনি বলেন, আমদানির তুলনায় রফতানি কম থাকায় ডলারের ওপর চাপ বেড়েছে। পর্যায়ক্রমে এটি কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হবে বলে তিনি আশা করেন। সেপ্টেম্বরের পর থেকে সরকার বিপিসির আমদানি দায়ের বিপরীতে পাওনা অর্থ পরিশোধ না করলেও তাদের দৈনন্দিন লেনদেনে এটি কোনো সমস্যা হচ্ছে না বলে তিনি জানান।
সূত্র জানিয়েছে, চাহিদা অনুপাতে জোগান না থাকায় বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমে যাচ্ছে। বর্তমানে রিজার্ভ কমে ৯৩৭ কোটি ডলারে দাঁড়িয়েছে। অন্যদিকে প্রায় প্রতিদিনই টাকার বিপরীতে অন্যান্য মুদ্রা শক্তিশালী হচ্ছে। গতকাল আন্তঃব্যাংক মুদ্রাবাজারে ৭৮ টাকা ২০ থেকে ৭৯ টাকা ৬০ পয়সায় লেনদেন হয়েছে। আমদানিকারকদের ঋণপত্র খুলতে প্রতি ডলারে ব্যয় করতে হয়েছে ৮০ টাকা ২০ থেকে ৮০ টাকা ৬০ পয়সা। কার্ব মার্কেটে এটি ৮২ টাকার বেশি ছিল। সংকট কাজে লাগিয়ে একশ্রেণীর মানুষ ব্যবসা করছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এর সঙ্গে কয়েকটি ব্যাংক জড়িত থাকতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। বৈদেশিক মুদ্রা লেনদেনকারী ব্যাংকগুলোর সংগঠন বাফেদার মাধ্যমে যে দাম বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে দেওয়া হয় তার সঙ্গে ব্যাংকের প্রকৃত লেনদেন তথ্য মিল আছে কি-না সেটি খতিয়ে দেখা হবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের এক কর্মকর্তা জানান, বিপিসির দায় সামলাতে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ব্যাংকগুলোকে হিমশিম খেতে হচ্ছে। চাহিদার তুলনায় ডলারের সরবরাহ কম থাকায় বিশেষত সোনালী ও অগ্রণী ব্যাংক বেশি চাপে পড়েছে। এসব ব্যাংক আন্তঃব্যাংক মুদ্রাবাজার থেকে ডলার কিনছে। এর পাশাপাশি বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে এসেও ধরনা দিচ্ছে। যেহেতু এটি সরকারের দায় সেহেতু বাংলাদেশ ব্যাংক রিজার্ভ থেকে ডলার সরবরাহ করছে। তবে এভাবে চলতে থাকলে রিজার্ভের ওপর চাপ আরও বাড়বে বলে তিনি জানান।
বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ৫ মাসে সরাসরি বিক্রি করা হয়েছে ৬১ কোটি ২০ লাখ ডলার। ব্যাংকগুলোকে স্বল্প সময়ের জন্য ধার হিসেবে দেওয়া হয়েছে ৫০ কোটি ডলার। গত ৫ মাসে বাংলাদেশ ব্যাংক যে ডলার ধার দিয়েছে এর মধ্যে ব্যাংকগুলো এখনও ৪৫ কোটি ডলার পরিশোধ করেনি। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বেশি পাওনা দাঁড়িয়েছে সোনালী ও অগ্রণী ব্যাংকের কাছে। শুধু এ দুটি ব্যাংকের কাছেই ৩৫ কোটি ৫০ লাখ ডলারের মতো পাবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। বিপিসির জন্য যে আমদানি করা হচ্ছে এর বিপরীতে পাওনা পরিশোধ করা হচ্ছে না বলে জানা গেছে। সরকারের ব্যাংক ঋণ ছাড়াও বিপিসির আমদানি বাবদ শুধু অগ্রণী ব্যাংকই সরকারের কাছে আড়াই হাজার কোটি টাকার বেশি পাবে বলে জানা গেছে। এভাবে অন্যান্য ব্যাংকও সরকারের কাছে বড় পরিমাণ অর্থ পাবে বলে সূত্র জানিয়েছে।

No comments

Powered by Blogger.