হতাশ রিয়াল, উড়ছে বার্সা

নিয়তি! বিশ্বের সবচেয়ে আকর্ষণীয় দ্বৈরথের ফল তাহলে নিয়তি নির্ধারিত! এল ক্লাসিকোর লড়াই জিতে স্প্যানিশ প্রিমেরা লিগার শীর্ষে পেঁৗছানোর পর বার্সেলোনার কোচ পেপ গার্দিওলা বলছেন, এ লড়াই জিততে 'খানিকটা হলেও ভাগ্যের সহযোগিতা প্রয়োজন ছিল'। আর হেরে যাওয়া রিয়াল মাদ্রিদের কোচ হোসে মরিনহো তো সরাসরিই দুষছেন 'দুর্ভাগ্য'কে! না করে আর কি-ই বা করার আছে তাঁর! অনেক অনেক দিন পর এবারই প্রথম চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীদের বিপক্ষে


মাঠে নামার আগে মানসিকভাবে কিছুটা হলেও এগিয়ে ছিল মরিনহোর দল। টানা ১৫টি ম্যাচ জিতে ৪১ বছরের পুরনো ক্লাব রেকর্ড ছুঁয়েছিল তারা, স্ট্রাইকাররা সবাই ছিলেন দুর্দান্ত ফর্মে। উল্টোদিকে বার্সেলোনা একটু হলেও চাপের মুখে ছিল এ ম্যাচের আগে লিগ লড়াইয়ে এক ম্যাচ বেশি খেলেও তিন পয়েন্ট পিছিয়ে পড়ায়। রিয়ালের নিজেদের মাঠ সান্টিয়াগো বার্নাব্যুতে ম্যাচের শুরুটাও হয়েছিল রিয়ালের জন্য একেবারে আদর্শ, মাত্র ২২ সেকেন্ডে এল ক্লাসিকো ইতিহাসের দ্রুততম গোল করে দলকে এগিয়ে নিয়েছিলেন করিম বেনজেমা। তার পরও কিনা ম্যাচটা হেরে গেল তারা!
তাতে ভাগ্যের ছোঁয়া কিছুটা তো ছিলই, বিশেষ করে অ্যালেঙ্সি সানচেজের গোলে সমতা আনার পর যেভাবে এগিয়ে গেছে বার্সেলোনা তাতে। জাভির লম্বা শট রিয়াল ডিফেন্ডার মার্সেলোর পায়ে লেগে পথ বদলে ঢুকে গেছে জালে, শেষ মুহূর্তে আপ্রাণ চেষ্টা করেও ঠেকাতে পারেননি গোলরক্ষক ইকার ক্যাসিয়াস। ম্যাচশেষে সে দিকেই আঙুল তুললেন মরিনহো, 'অনেক ম্যাচেই ভাগ্যের একটা বড় ভূমিকা থাকে। ওদের দ্বিতীয় গোলটার কথাই ভাবুন, ওটা ভাগ্য ছাড়া আর কী? আমরা ২-২ করারও একটা সুযোগ পেয়েছিলাম, এমন সুযোগ ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর মতো খেলোয়াড় সাধারণত নষ্ট করেন না। প্রায় সঙ্গে সঙ্গে ওরা করে বসল তৃতীয় গোলটা, যা আমাদের জন্য ছিল বিরাট এক মানসিক আঘাত।'
তবে ভাগ্যের কথা বলে বার্সেলোনার কৃতিত্বকে উপেক্ষা করছেন না রিয়ালের কোচ, 'ভাগ্যের একটা ভূমিকা তো ছিলই, কিন্তু আমাদের প্রতিদ্বন্দ্বীদের কৃতিত্ব আমি ছিনিয়ে নিতে চাইছি না।' শুনে বিশ্বাসই হতে চায় না, এটা মরিনহোর কথা! সাম্প্রতিক সময়ে বার্সেলোনার কাছে ম্যাচ হারার পর রিয়ালের পর্তুগিজ কোচের কণ্ঠে রেফারি থেকে শুরু করে উয়েফার পর্যন্ত সমালোচনা শুনেই সবাই অভ্যস্ত কিন্তু এবার যেন রীতিমতো দার্শনিক হয়ে গেছেন তিনি, 'আমরা তো একটা মাত্র ম্যাচই হেরেছি! পরের ম্যাচটা জিতলেই আমরা আবার শীর্ষে উঠব।'
গার্দিওলার কণ্ঠেও কিন্তু তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বীরই কথার প্রতিধ্বনি! গত সাত বছর ধরেই একটা অলিখিত নিয়ম দাঁড়িয়ে গেছে, ক্রিসমাসের ছুটির আগের এ লড়াইটা জিতবে যে দল, শেষ পর্যন্ত তারাই জেতে লা লিগা। কিন্তু দারুণ জয়ে লিগ লড়াইয়ে ঘুরে দাঁড়ানোর তৃপ্তি থাকলেও বার্সেলোনার কোচ মনে করিয়ে দিচ্ছেন, 'এখনো কিন্তু অনেক দূর পথ বাকি। আরো ৭০ পয়েন্টের জন্য লড়াই হবে, আর মাদ্রিদই এখনো এগিয়ে আছে। নভেম্বর বা ডিসেম্বরেই কিন্তু বলে দেওয়া যায় না কোনো দল শিরোপা জিতে গেছে।' এ জয়ে তাঁর নিজের দলের আত্মবিশ্বাসের পালে হাওয়া লাগবে মানলেও গার্দিওলা মনে করেন, 'এ হারে কিন্তু রিয়ালের আত্মবিশ্বাস কমে যাবে না। ওরা ঠিকই ঘুরে দাঁড়াবে আর আমাদের সবচেয়ে বড় প্রতিদ্বন্দ্বী হয়েই থাকবে।'
কাগজে-কলমে হয়তো তা-ই! ভক্তরাও চাইবেন তেমনটাই হোক, নইলে যে আর এল ক্লাসিকোর মর্যাদাটাই থাকে না! তবে মরিনহোর রিয়াল আর গার্দিওলার বার্সেলোনার লড়াই কিন্তু একেবারেই জমছে না! রিয়ালের মাঠ সান্টিয়াগো বার্নাব্যু থেকেই যে এ নিয়ে টানা ছয়বার না হেরে ফিরল কাতালানরা। এ জয়ের পর বার্সার মধ্যমাঠের কারিগর জাভি তাই সদর্পে ঘোষণা করছেন, 'আমরা প্রমাণ করেছি রিয়ালের চেয়ে আমরা ভালো দল। এ ম্যাচে আমরা সব দিক দিয়েই রিয়ালের চেয়ে অনেক এগিয়ে ছিলাম।' জয়ের আরেক কারিগর সেস্ক ফ্যাব্রেগাসের জন্য এ এক অন্য রকম অনুভূতি। আর্সেনাল ছেড়ে ছেলেবেলার ক্লাবে ফেরার পর লিগে প্রথম রিয়ালের মুখোমুখি হয়েই এমন জয়! তাতে আবার নিজেরও আছে একটা গোল, তাই উচ্ছ্বাস যেন বাঁধ মানছিল না তাঁর, 'আমার জন্য এটা একটা বিশেষ দিন।'
বার্সা শিবিরে যখন এমন উৎসবের আমেজ, তখন রিয়ালের তাঁবুতে হতাশার গুমোট হাওয়া। মরিনহো যতই বলুন 'এটা তো স্রেফ একটা ম্যাচ হারা', সার্জিও র‌্যামোসের কাছে ব্যাপারটা মোটেই তেমন নয়। এটা যে ছিল এল ক্লাসিকো, 'বার্সেলোনার কাছে হারটা সব সময়ই একটু বেশি কষ্ট দেয়।' জাবি আলন্সোকে বেশি কষ্ট দিচ্ছে 'ভুতুড়ে' দ্বিতীয় গোলটা, আর পেপে কোচের সঙ্গে কণ্ঠ মিলিয়ে বলছেন দুর্ভাগ্যের কথা। তবে রিয়ালের জন্য সবচেয়ে দরকারি কথাটা বলেছেন অধিনায়ক ইকার ক্যাসিয়াস, 'এ হারটা খুব কষ্টের, কারণ আমরা দারুণ ফর্মে ছিলাম, আর হারতে হলো নিজেদেরই মাঠ বার্নাব্যুতে। কিন্তু আমাদের তো কেবল বার্সেলোনার বিপক্ষে ম্যাচের কথা ভেবে বসে থাকলে চলবে না, আমাদের এগিয়ে যেতে হবে।' ওয়েবসাইট

No comments

Powered by Blogger.