সারা দিনে সান্ত্বনা সাকিব-নাজিমের প্রতিরোধ-বাংলাদেশ : ১ম ইনিংস ১৩৫ ও ২য় ইনিংস ১৩৪/৪ -পাকিস্তান : ১ম ইনিংস ৫৯৪/৫ ডিক্লেয়ার্ড by মাসুদ পারভেজ

ব্যাটসম্যানদের ঢালাও ব্যর্থতার পর বাংলাদেশের দ্বিতীয় ইনিংসটা একটু অন্যরকমই হয়। 'একটু'-ই। দিনের শেষে প্রশংসিত হওয়ার মতো ব্যাটিং করে ফেলেন দু-একজন, একটা-দুটো বড় পার্টনারশিপ হয় এবং এর ভিত্তিতে মোটামুটি একটা সংগ্রহ দাঁড়িয়ে গেলেও তাতে কিন্তু বড় হারের ভাগ্য বদলায় না! পাকিস্তানের বিপক্ষে এ চট্টগ্রাম টেস্টেও কি তা-ই হতে যাচ্ছে? ইঙ্গিত সে রকমই_এ মুহূর্তে এটাই বোধহয় সবচেয়ে 'সেফ' উত্তর!
প্রতিপক্ষের কাছ থেকে 'সেফ ক্রিকেট' খেলতে না শেখার কুফলই বলতে পারেন এটাকে। তৃতীয় দিনের সকাল থেকে সাফল্যের জন্য মাথাকুটে মরলেন বাংলাদেশের বোলাররা। ক্যারিয়ারের তৃতীয় ডাবল সেঞ্চুরি করা ইউনিস খান আর প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরির আনন্দে ভাসা আসাদ শফিকদের অবলিলায় রান করে যাওয়ায় তাঁদের নিরীহ ও নির্বিষ বোলিংয়ের অবদানও তো কম নয়। অথচ দিনের শেষে বাংলাদেশ দলের প্রতিনিধি হিসেবে সংবাদ সম্মেলনে আসা ইলিয়াস সানি সেটা না মেনে বরং বললেন, 'ওরা সেফ ক্রিকেট খেলেছে বলেই...।'
তো ওই নিরাপদ ক্রিকেট খেলেই বাংলাদেশের বিপক্ষে সর্বোচ্চ ৫ উইকেটে ৫৯৪ রান তুলে পাকিস্তানের ইনিংস ঘোষণার পর স্বাগতিকদের ওপর রানের পাষাণভার যে বেড়েছে আরো। নিজেদের ইতিহাসে তৃতীয় সর্বোচ্চ ৪৫৯ রানের লিড নেওয়া পাকিস্তানের বিপক্ষে ব্যাটসম্যানদের নিজ গুণেই আবার চরম অস্বস্তিতে বাংলাদেশ! নাজিমউদ্দিন আর সাকিব আল হাসানের ব্যাটে প্রতিরোধের একটা সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে বটে, কিন্তু দিনের শেষে রান ৪ উইকেটে ১৩৪। ইনিংস পরাজয় এড়াতেই করতে হবে আরো ৩২৫ রান। স্কোরবোর্ডে ৪ উইকেট লেখা হলেও ধরতে হবে ৫টাই চলে গেছে, কারণ কাল ফিল্ডিংয়ের সময় কাঁধে চোট পাওয়া রুবেল হোসেনের দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাটিংয়ে নামা হচ্ছে না। গুরুতর কিছুর আশঙ্কা আপাতত না থাকলেও পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য আজ ম্যাচের চতুর্থ দিনে তাঁর থাকার কথা ঢাকায়। দ্বিতীয় টেস্টের আগে তাঁর সুস্থতা নিশ্চিত করার দিকেই এখন বেশি মনযোগ টিম ম্যানেজমেন্টের। এ টেস্টের ভবিষ্যৎ বাংলাদেশ শিবিরেরও খুব ভালো জানা বলেই হয়তো!
কাঁধে চোট পাওয়ার আগে দলকে বঞ্চনার আগুনেও পুড়িয়েছেন রুবেল। আসাদ শফিকের প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরির স্বপ্নটা আপাতত স্বপ্নই থেকে যেত, সকালে শাহাদাত হোসেনের লাফিয়ে ওঠা বলে হুক করতে গিয়ে তুলে দেওয়া ক্যাচ ফাইন লেগে রুবেল ধরতে পারলে। তখন ৪৩ রানে থাকা শফিক ১০৪ রানই শুধু করেননি, ইউনিসের সঙ্গে পঞ্চম উইকেট পার্টনারশিপকে ২৫৯ পর্যন্ত বাড়িয়েছেনও। আর দিনের তৃতীয় বলেই শাহাদাতকে বাউন্ডারি হাঁকিয়ে ৯৬ থেকে নিজের উনিশতম টেস্ট সেঞ্চুরিতে পেঁৗছে যাওয়া ইউনিসেরও ১৩৭ রানেই সাজঘরে ফেরার কথা। ডিপ স্কয়ার লেগে সানি ক্যাচ ঠিকঠাকই নিয়েছিলেন, কিন্তু ততক্ষণে রুবেলের ওভারস্টেপিংয়ের জন্য ডেলিভারিটি 'নো' ঘোষিত হয়ে গেছে!
অপেক্ষাটা ছিল ইউনিসের (২০০*) ডাবল সেঞ্চুরির। সেটি হয়ে যেতেই আর দেরি করেননি পাকিস্তান অধিনায়ক মিসবাহ-উল হক। গোটা তিনেক বাউন্ডারিতে ভালো কিছুর সম্ভাবনা জাগানো তামিম ইকবাল চা বিরতির পর প্রথম ওভারেই টললেন। তাও আবার কি না মোহাম্মদ হাফিজের বল ব্যাট উঁচিয়ে ছেড়ে দিতে গিয়ে বোল্ড হয়ে! সিরিজের তৃতীয় ও শেষ ওয়ানডেতেও একই বোলারের বলে আউট হওয়া তামিম (১৫) যেন ক্ষণিকের জন্য ফিরিয়ে এনেছিলেন সাবেক ওপেনার হান্নান সরকারকেও, যিনি কি না ওয়েস্ট ইন্ডিজের পেসার পেড্রো কলিন্সের বিপক্ষে বেশ কয়েকবারই বল ছেড়ে বোল্ড হয়ে হতবাক হওয়ার জন্য বিখ্যাত হয়ে আছেন!
দুঃস্বপ্নের মতো একটা সিরিজ কাটাতে থাকা তামিমের মতোই অবস্থা শাহরিয়ার নাফীসেরও। জীবন পেয়ে আসাদ শফিকরা যেখানে সেঞ্চুরি করে ফেলতে পারেন, সেখানে নাফীসরা নিজের উইকেটটাকে বানিয়ে ফেলেন সস্তা। এ ইনিংসে যেমন ১২ রানে স্লিপে তাঁর ক্যাচ ফেললেন ইউনিস, আরো দু-একবার আউট হওয়ার আশঙ্কাও তৈরি হলো এবং শেষমেশ তেড়েফুঁড়ে কিছু বাউন্ডারি মেরে ধৈর্যের পরীক্ষায় ফেল মারলেন নাফীস! সাঈদ আজমলের বলে সুইপ করতে গিয়ে এলবিডাবি্লউ হওয়া নাফীসকে (২৮) দ্রুত অনুসরণ করলেন মোহাম্মদ আশরাফুলও (০)। আর ভালো পারফরম্যান্সের জন্য এবার ব্যাটিং অর্ডারে প্রমোশন পেয়ে ওপরে উঠে আসা নাসির হোসেনও (৩) এবার গড্ডলিকা প্রবাহে তাঁদের সঙ্গী। আইজাজ চিমার বাউন্সারে হুক করার লোভ সামলাতে না পারায় বাংলাদেশ ৩ উইকেটে ৮০।
তবে এ ইনিংসেও উজ্জ্বল ব্যতিক্রম নাজিমউদ্দিন। টেস্ট অভিষেকেই দলের ধারার বিপরীতে গিয়ে তিনি এখনো অবিচল। নাজিমের (৪১*) সঙ্গে সচল হয়েছে সাকিবের (৪১*) ব্যাটও। কিন্তু কতক্ষণ? এ প্রশ্ন সামনে নিয়ে আজ চতুর্থ দিনে গড়াচ্ছে খেলা। সেই সঙ্গে এটাও না জানালেই নয় যে, কাল ইউনিসের ডাবল আর শফিকের সেঞ্চুরির বাইরেও হয়েছে আরেকটা সেঞ্চুরি। করেছেন বাংলাদেশের শাহাদাত হোসেন! টেস্ট ক্রিকেটে কাল তাঁর শততম নো বলটি করেছেন এ পে

No comments

Powered by Blogger.