শেয়ারবাজারে দরপতন অব্যাহত, বিক্ষোভ-প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা নীরব!

রপতনই যেন শেয়ারবাজারে এখন নিয়মে পরিণত হয়েছে। আগের সপ্তাহজুড়ে চলা দরপতনের ধারা অব্যাহত ছিল গতকাল। এদিন ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) সূচক কমেছে ৮৫ পয়েন্ট। গত ১ ডিসেম্বর থেকে শুরু হওয়া টানা দরপতনে এ সূচক কমেছে ৩৮৯.৯৫ পয়েন্ট। আর গত ২৩ নভেম্বর নিয়ন্ত্রক সংস্থা এসইসির পক্ষ থেকে ২১ দফা প্যাকেজ সিদ্ধান্ত ঘোষণার পর থেকে গতকাল পর্যন্ত সূচক কমেছে ৫২৫.৫৪ পয়েন্ট। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে


প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা নানা প্রতিশ্রুতির কথা বললেও টানা দরপতনে তাঁদের নীরব ভূমিকা নিয়ে অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন।
প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের অংশগ্রহণ না থাকায় এ দরপতন হচ্ছে বলে মনে করছেন বাজার সংশ্লিষ্টরা। এসইসির প্যাকেজে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগের অনেক সুযোগ দেওয়া হলেও ডিসেম্বরের ক্লোজিংয়ের কারণে ব্যাংকগুলো বিনিয়োগ থেকে বিরত রয়েছে বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন। ডিএসইর জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি আহসানুল ইসলাম টিটু কালের কণ্ঠকে বলেন, 'বাজারে ব্যাংক-বীমাসহ প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের কোনো সাপোর্ট নেই। অথচ প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে অনুষ্ঠিত বৈঠকে ব্যাংকের প্রতিনিধিরা কথা দিয়েছিলেন তাঁরা বাজারকে সাপোর্ট দেওয়ার জন্য শেয়ার কিনবেন।' কেউ পাঁচ হাজার কোটি টাকার, কেউ দুই হাজার কোটি টাকার শেয়ার কেনার ঘোষণা দিয়েছিলেন। তাঁদের যে সক্ষমতা নেই সে কথা তখন বলেননি। এখন তাঁরা নীরব। এ ধরনের মূল্য সংবেদনশীল তথ্য দিয়ে নিজেদের গুটিয়ে নেওয়া এক ধরনের অপরাধ। এ অপরাধে তাঁদের শাস্তি হওয়া উচিত বলে মন্তব্য করেন তিনি।
পুঁজিবাজারের স্বাভাবিক অবস্থা ফিরিয়ে আনার দাবিতে গতকালও বিনিয়োগকারীরা ডিএসই ভবন ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সামনে বিক্ষোভ করেছেন। লেনদেন শুরুর কিছুক্ষণের মধ্যে দরপতন শুরু হলে বিনিয়োগকারীরা রাস্তায় নেমে আসেন। 'পুঁজিবাজার স্বাভাবিক করো নইলে বুকে গুলি করো' এ ধরনের স্লোগান দিতে থাকেন তাঁরা।
বিনিয়োগকারীরা বাজারকে স্থিতিশীলতায় ফিরিয়ে আনতে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে ঘোষিত প্রণোদনা প্যাকেজ বাস্তবায়নের জন্য প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেন। তাঁরা জানান, প্যাকেজ ঘোষণার পর ১৮ দিন অতিবাহিত হলেও বাজারে এর কোনো প্রভাব পড়েনি। বাজারের এ অবস্থার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের শনাক্ত করে শাস্তির দাবি জানান তাঁরা। বিক্ষোভের সময় ডিএসইর সামনে থেকে ইত্তেফাক মোড় পর্যন্ত রাস্তায় সব ধরনের যান চলাচল বন্ধ থাকে। বিকেল ৪টা পর্যন্ত বিনিয়োগকারীদের এ বিক্ষোভ অব্যাহত থাকে।
গতকাল সকাল ১১টায় সূচকের পতনের মধ্য দিয়ে লেনদেন শুরু হয়। কয়েক দফা ওঠানামার পর ডিএসইর সাধারণ মূল্যসূচক ৮৫ পয়েন্ট কমে ৪৮৪৬ পয়েন্টে শেষ হয় লেনদেন। সারা দিনে মোট ২৫৩টি কম্পানি ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের শেয়ার ও ইউনিটের লেনদেন সম্পন্ন হয়েছে। এর মধ্যে দর বেড়েছে ৩১টির, কমেছে ২১৬টির ও অপরিবর্তিত ছিল ছয়টি কম্পানির শেয়ারের দাম। টাকার পরিমাণে মোট লেনদেন হয়েছে ২০৪ কোটি ৬৬ লাখ টাকার শেয়ারের।
অন্যদিকে চট্টগ্রাম স্টক এঙ্চেঞ্জে (সিএসই) দিন শেষে সার্বিক মূল্যসূচক ১৩২ পয়েন্ট কমে ৮৯২৫ পয়েন্টে অবস্থান করে। এ সময় মোট ১৬২টি কম্পানি ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে দর বেড়েছে ১৯টির, কমেছে ১৩৮টির এবং অপরিবর্তিত ছিল পাঁচটি কম্পানির শেয়ারের দর। মোট লেনদেন হয়েছে ২৮ কোটি ৩৬ লাখ টাকার।
গতকাল ডিএসইর বাজার মূলধনের পরিমাণ ছিল দুই লাখ ৪৫ হাজার ৭৪০ কোটি ৫০ লাখ ৮০ হাজার ৮৭৫ টাকা। লেনদেনের ভিত্তিতে গতকালের প্রধান ১০টি কম্পানি হলো_বেঙ্মিকো লিমিটেড, যমুনা অয়েল, ইউনাইটেড এয়ারওয়েজ, বেঙ্মিকো ফার্মা, গ্রামীণফোন, উত্তরা ব্যাংক, এসআইবিএল, ইউসিবিএল, সিটি ব্যাংক ও আরএন স্পিনিং।
দর বৃদ্ধির শীর্ষে থাকা ১০টি কমপানি হলো_তাল্লু স্পিনিং, বঙ্গজ, এপেঙ্ স্পিনিং, এআইবিএল প্রথম ইসলামী মিউচু্যুয়াল ফান্ড, উসমানিয়া গ্লাস, সোনালি আঁশ, ফার্মা এইড, জুট স্পিনার্স, গ্ল্যাঙ্ােস্মিথ কেলাইন ও মিউচ্যুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক। অন্যদিকে দাম কমার শীর্ষে প্রধান ১০টি কমপানি হলো_অলটেঙ্, মেঘনা পেট্রোলিয়াম, আইসিবি এএমসিএল প্রথম, অলিম্পিক ইন্ডাস্ট্রি, প্রথম বিএসআরএস, এইচআর টেঙ্টাইল, সালভো কেমিক্যাল, ডেল্টা ব্র্যাক হাউজিং, রেকিট বেঙ্কাইজার ও
সেন্ট্রাল ইনস্যুরেন্স।

No comments

Powered by Blogger.