তৈরি পোশাক খাত দেশের অর্থনীতিকে বাণিজ্যনির্ভর করেছে

তৈরি পোশাক খাত দেশের অর্থনীতিকে 'এইড টু ট্রেড' (সাহায্য নির্ভরতা থেকে বাণিজ্যে) পরিণত করেছে। মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) এ খাতের অবদান এখন ১০ শতাংশেরও বেশি। কর্মসংস্থানেও তৈরি পোশাক দেশের সবচেয়ে বড় একক খাত। তবে বহির্বিশ্বে এখনও এ খাতের ইমেজ সংকট কাটেনি। কারখানা শতভাগ কমপ্লায়েন্ট না হওয়া, মজুরি বৈষম্য, মধ্যম পর্যায়ে ব্যবস্থাপনা সংকট, সময়মতো সরবরাহ করতে পারার সক্ষমতা না থাকা সত্ত্বেও


রফতানি আদেশ গ্রহণ এবং মালিক-শ্রমিক সম্পর্কে সংকটের মতো বেশ কিছু বিষয় রয়েছে এর মধ্যে। তৈরি পোশাক রফতানিতে কমপ্লায়েন্স শর্ত বিষয়ক এক সেমিনারে বক্তারা এসব কথা বলেন। বাটেক্সপো-২০১১-এর দ্বিতীয় দিনে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে গতকাল রোববার এ সেমিনারের আয়োজন করে তৈরি পোশাক প্রস্তুত ও রফতানিকারক ব্যবসায়ীদের সংগঠন বিজিএমইএ।
সংগঠনের সভাপতি সফিউল ইসলাম মহিউদ্দীনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সেমিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন বাণিজ্য সচিব গোলাম রহমান। গেস্ট অব অনার ছিলেন বাংলাদেশে ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের ডেলিগেশন প্রধান উইলিয়াম হানা। বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি কুতুব উদ্দীন আহমেদ এবং বিশ্ববিখ্যাত ব্র্যান্ড জে সি পেনির আঞ্চলিক পরিচালক জেনিফা কে জব্বার অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন। বিষয়ের ওপর মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক কমপ্লায়েন্স সার্টিফিকেশন সংস্থা ডবি্লউআরএপির পরিচালক এভেডিস এইচ সেফেরিয়ান। বিজিএমইএর সহ-সভাপতি ফারুক হাসান সেমিনার
সঞ্চালনা করেন।
প্রধান অতিথি বলেন, তৈরি পোশাক খাতের জন্য কমপ্লায়েন্স শর্ত বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। কারণ বিশ্ববাজারে প্রতিযোগিতার ভিত্তিতে এ খাতকে টিকে থাকতে হচ্ছে। রাষ্ট্রে নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে বিভিন্ন সময় অনেকে বলেছেন, দেশের তৈরি পোশাক খাত বন্ধ হয়ে যাবে। তিনি বলেন, তৈরি পোশাকই একমাত্র খাত যেখানে সরকারের কোনো নিয়ন্ত্রণ বা হস্তক্ষেপ নেই। দুর্ঘটনাসহ কিছু বিষয়ে বাংলাদেশকে দায়ী করা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রবণতা হয়ে দাঁড়িয়েছে। তবে প্রতিযোগিতার প্রশ্নে কমপ্লায়েন্স মেনে নিয়েই বাজার সম্প্রসারণের জন্য ব্যবসায়ীদের প্রতি আহ্বান জানান তিনি। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ইইউ জিএসপি সুবিধা দিলেও যুক্তরাজ্য জিএসপি সুবিধা দিচ্ছে না। প্রতিযোগিতা করেই এসব বাজারে রফতানি বাড়াতে হবে। গোলাম হোসেন বলেন, শতভাগ দেশি আইন মেনে চললেই অন্তত ৯৮ শতাংশ কমপ্লায়েন্স শর্ত পূরণ করা সম্ভব।
ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের (ইইউ) ডেলিগেশন প্রধান উইলিয়াম হানা বলেন, তৈরি পোশাক খাত বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে। দরিদ্র দেশ হিসেবে ইইউ বাংলাদেশকে যে সহায়তা করে, এ খাতের রফতানি আয় তারচেয়ে কয়েকগুণ বেশি। এ খাতে যে কোনো দেশের তুলনায় ভালো করছে বাংলাদেশ। হানা বলেন, এ বছরের জানুয়ারিতে ইইউ বাজারে জিএসপি সুবিধা পাওয়ার পর রফতানি বেড়েছে অন্তত ১৪ শতাংশ। তবে কমপ্লায়েন্স প্রশ্নে কিছু কারখানা ভালো করলেও অনেক কারখানাই এখনও শর্ত পালনে সমর্থ হচ্ছে না। একটি অভিন্ন কমপ্লায়েন্স নীতি বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের নিয়ে সমঝোতায় আসার বিষয়ে উদ্যোগ নেবেন বলে জানান তিনি। মূল প্রবন্ধে এভেডিস এইচ সেফেরিয়ান বলেন, তৈরি পোশাক খাতে বাংলাদেশ যথেষ্ট ভালো করলেও ইমেজ সংকট এখনও বড় সমস্যা। বেশ কিছু কারখানা যথাযথভাবে কমপ্লায়েন্স মেনে চললেও বেশির ভাগ কারখানা এখনও সমর্থ হয়নি। সাধারণ কমপ্লায়েন্সের বাইরে সোশ্যাল কমপ্লায়েন্স, প্রপার ডকুমেন্টেশন, কমপ্লায়েন্স ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম সমস্যার কথা
বলেন তিনি।
অনুষ্ঠানে জে সি পেনির আঞ্চলিক পরিচালক জেনিফা কে জব্বার বলেন, বাংলাদেশের কারখানা মালিককেন্দ্রিক, এক ব্যক্তিনির্ভর। মালিক-শ্রমিক সম্পর্ক সন্তোষজনক নয়। এ যাবৎ এ খাতে যত শ্রমিক অসন্তোষ হয়েছে, সুসম্পর্ক থাকলে সেগুলো এড়ানো যেত। এখনও এটা সম্ভব হলে এ খাতে বাংলাদেশের ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে।

No comments

Powered by Blogger.