অধিনায়কত্ব নয়, ইউনিসের চাই শুধু রান

ট্টগ্রাম থেকে প্রতিনিধি : ২০০১ সালের মুলতানে পাকিস্তানের যে ছয় ব্যাটসম্যান ক্রিজে গিয়েছিলেন, এর মধ্যে পাঁচজনই ফিরেছিলেন সেঞ্চুরি করে। যদিও সর্বোচ্চ স্কোর আবদুল রাজ্জাকের অপরাজিত ১১০। ১০ বছর পর এবার পাকিস্তানের সাত ব্যাটসম্যানকে নামতে বাধ্য(!) করেছে বাংলাদেশের বোলাররা। তাঁদের আরো 'কৃতিত্ব' তিনজনের বেশি ব্যাটসম্যানকে সেঞ্চুরি করতে দেননি। নিজেদের ব্যর্থ(!) ভাবতে পারেন তাঁরা এই ভেবে যে তিন সেঞ্চুরিয়ানের


একজন প্রায় দেড় শ এবং আরেকজন পুরো দুই শ করে ফেলল বলে! ১৪৩ রান করে আগের দিন আম্পায়ারের ভুলে আউট হয়েছেন মোহাম্মদ হাফিজ। ইউনিস খানকে সে দুর্ভাগ্যের শিকার হতে হয়নি। ৯৬ রানে অপরাজিত থাকা এ ব্যাটসম্যান দিনের তৃতীয় বলে শাহাদাতকে ফ্লিক করে মারা বাউন্ডারিতে তুলে নেন ক্যারিয়ারের ১৯তম টেস্ট সেঞ্চুরি। এরপর বাংলাদেশের গোবেচারা বোলিংয়ের বিপক্ষে তুলে নেন ক্যারিয়ারের তৃতীয় ডাবল সেঞ্চুরিও। অভিষেক টেস্ট সেঞ্চুরি পেয়েছেন আসাদ শফিকও। সব মিলিয়ে বাংলাদেশকে রানপাহাড়ে পিষ্ট করার আরেকটি দিনই ছিল কাল।
স্বভাবতই ডাবল সেঞ্চুরি করে উল্লসিত ইউনুস, 'আমি খুব আনন্দিত। এটি আমি আমার পরিবারকে উৎসর্গ করছি। দেশের যখন আমাকে প্রয়োজন, তখন আমি তাতে সাড়া দিতে পেরে আনন্দিত।' দিনের শুরুতে যে এই দ্বিশতকের লক্ষ্য ছিল না, বলেছেন সেটি, 'আসলে প্রথম চার রানই ছিল প্রথম লক্ষ্য। দিনের তৃতীয় বলে সেটি হয়ে যাওয়ায় আমি আনন্দিত। সেঞ্চুরি হয়ে যাওয়ার পর অধিনায়ক ও কোচ আমাকে বলল, অবশ্যই যেন ডাবল সেঞ্চুরির লক্ষ্যে আমি ব্যাটিং করি। এরপর আমি সেভাবেই খেলে গেছি।' এর আগে দুবার ১৯০-এর ঘরে আউট হওয়ার অতীত থাকলেও এবার ভুল হবে না বলে নিজের আত্মবিশ্বাস থাকার কথাও জানিয়েছেন ইউনিস।
ইউনুসের ১৯ সেঞ্চুরির মধ্যে সাতটিই দেড় শ পেরোনো। কাল করলেন তৃতীয় ডাবল সেঞ্চুরি। পাকিস্তানিদের মধ্যে জাভেদ মিঁয়াদাদের আছে সর্বোচ্চ ছয়টি ডাবল সেঞ্চুরি। এ ছাড়া জহির আব্বাস (৪) ও মোহাম্মদ ইউসুফই (৪) আছেন কেবল তাঁর সামনে। স্বদেশিদের মধ্যে সর্বোচ্চ শতকে ইনজামাম উল হক (২৫), মোহাম্মদ ইউসুফ (২৪), জাভেদ মিঁয়াদাদের (২৩) পরই ইউনিসের অবস্থান। এখন পর্যন্ত ৭২ টেস্টে ৬১৪০ রান করেছেন স্টাইলিশ এ ডানহাতি। এখানেও চার নম্বরে তিনি, মিঁয়াদাদ (৮৮৩২), ইনজামাম (৮৮২৯) এবং ইউসুফের (৭৫৩০) পর তিনি। তবে এসব রেকর্ডের চেয়ে ১০০ টেস্ট খেলাই মূল লক্ষ্য ইউনিসের। কারণ হিসেবে বলেছেন, 'হয়তো সে ক্ষেত্রে আমি ওসব রেকর্ড ছাড়িয়ে যেতে পারি।'
পাকিস্তানের বর্তমান দলে বেশ কয়েকজন সাবেক অধিনায়ক রয়েছেন। তার পরও পুরো দলকে মনে হচ্ছে এক সুতোয় গাঁথা। সে জন্য অধিনায়ক মিসবাহকে কৃতিত্ব দিয়েছেন তিনি। পাশাপাশি জানিয়ে দিয়েছেন অধিনায়কত্ব ফিরে পাওয়ার কোনো ইচ্ছে নেই তাঁর, 'মিসবাহকে আমি শতভাগ মার্কস দেব। সে শিক্ষিত লোক, দলের সবার শ্রদ্ধা আছে তার ওপর, সবাই তাকে মানে। আর আমি যদি এভাবে পারফরম করতে পারি, তাহলে আমার কখনোই অধিনায়কত্বের দরকার নেই।' অথচ ইমরান খানের পর এই পাঠানের অধীনেই বৈশ্বিক শিরোপা জিতেছিল পাকিস্তান। ২০০৯ সালের টোয়েন্টি টোয়েন্টি বিশ্বকাপ। এর আগে-পরে অধিনায়কত্ব নিয়ে কত নাটকই না হয়েছে ইউনিসের ক্যারিয়ারে। এখন জানাচ্ছেন ওসব ভুলে গিয়ে নিজের ব্যাটিংয়েই কেবল মনোযোগ দেওয়ার কথা।
এসবই তো ইউনিসের নিজের কথা। তাঁর দলের কথা। প্রতিপক্ষ বাংলাদেশকে নিয়েও মূল্যায়ন আছে তাঁর। সেখানে যথারীতি ভদ্রতার মুখোশ ইউনিসের, 'বাংলাদেশের বোলাররা অবশ্যই আন্তর্জাতিক মানের। তাদের মুখোমুখি হওয়া সহজ না। আসলে ব্যাটিং-বোলিংয়ে আরো বেশি ধারাবাহিক হতে হবে। উন্নতির জন্য তাদের বেশি বেশি করে টেস্ট খেলা উচিত। এক আশরাফুলই তো কেবল ৫০টির বেশি টেস্ট খেলেছে। অন্যদের সময় দিলে বাংলাদেশ আরো ভালো করবে।'
ওই ৫৬ ম্যাচ খেলা আশরাফুল এই টেস্টের দুই ইনিংসে যেভাবে আউট হলেন, তাতে ইউনিসের পরামর্শে ভরসা কি করে রাখে বাংলাদেশ!

No comments

Powered by Blogger.