আবিদ আলীর পরিকল্পিত খামারে থাই রাজকুমারী

ছোট্ট গেট দিয়ে ভেতরে ঢুকতেই বাঁধাকপির প্লট। এর বাঁয়ে ওলকপি। এ দুই প্লটের ঠিক পূর্বপাশে সাজানো-গোছানো দেশি মুরগির একটি খামার। তারও পূর্বে ছাগলের খামার। বাঁধাকপি ও ওলের সবুজ গালিচার ডানে ফুলকপি, ধনেপাতা, পালং শাক ও মুলাক্ষেত। ফাঁকে ফাঁকে ফুল, ফল ও অন্য গাছের চারা। বাগানের দক্ষিণ পাশটা ঘেঁষে ছিমছাম ছোট্ট পাকাবাড়ি। বাড়ির পূর্ব পাশের মাচায় ঝুলে আছে লাউ-কুমড়া।


বাড়ির সামনেই দুই সন্তান ও স্ত্রীকে নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন কৃষক আবেদ আলী (৪৬)। মুখে হাসির ঝিলিক। গত শনিবার বিকেলে ঘড়ির কাঁটা যখন ৪টা ৪১ মিনিটের ঘরে, তখন আবিদ আলীর খামারবাড়ির ছোট্ট ওই গেটের সামনে এসে থামে বিশাল এক গাড়ির বহর। সামনের গাড়ি থেকে নামেন থাইল্যান্ডের রাজকুমারী মাহা চাকরি সিরিনধরন। সফরসঙ্গী বাংলাদেশের কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরীকে নিয়ে সোজা খামারে ঢুকেই অবিভূত হন সবুজের সমারোহ ও সাজানো সবজি বাগান দেখে। বাঁধাকপি বাগানের পাশ দিয়ে রাজকুমারী হেঁটে সোজা চলে যান আবিদ আলীর বাড়িতে। এ সময় স্ত্রী লতিফা আক্তার ও দুই ছেলেকে নিয়ে রাজকীয় ভঙ্গিতে অতিথিকে স্বাগত জানান আবিদ আলী।
আবিদ আলীর অভিবাদন গ্রহণ করে রাজকুমারী সিরিনধরন বলেন, 'আপনার ছোট সুন্দর খামারটি দেখে আমি খুব খুশি হয়েছি।' জবাবে কৃষক আবিদ আলী তাঁকে ধন্যবাদ জানিয়ে নিয়ে যান নিজের ঘরে। ঘুরে ঘুরে দেখান ঘর-সংসার। ঘর থেকে বের হলে রাজকুমারীকে তিনি মুড়ি উপহার দেন। পরে রাজকুমারী সিরিনধরন সফরসঙ্গীদের নিয়ে যান আবিদ আলীর খামারের উত্তর পাশে। সেখানকার পুকুরের মাছ চাষ, জমিতে লাগানো ধান ও ছাগলের খামার দেখে মুগ্ধ হন তিনি।
গত বছরের মে মাসে বাংলাদেশ সফরে এসে গাজীপুরের কাশিমপুরে অবস্থিত বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনের হর্টিকালচার ডেভেলপমেন্ট সেন্টার পরিদর্শন করেন রাজকুমারী সিরিনধরন। তখন তিনি গরিব কৃষকদের আত্মকর্মসংস্থানের আগ্রহ দেখান। তাঁর আগ্রহে থাই কর্তৃপক্ষের সঙ্গে হর্টিকালচার কর্তৃপক্ষের তিন বছরের একটি চুক্তি হয়। চুক্তি অনুযায়ী পাওয়া সাড়ে চার বিঘা জমিতে থাই রাজকুমারীর সহায়তায় গড়ে তোলা হয় এ খামার।
কৃষক আবিদ আলী জানান, উন্নত প্রশিক্ষণের জন্য গত বছরের ২৪ জুলাই তাঁকে থাইল্যান্ডে পাঠানো হয়। সেখানে কৃষি বিষয়ে হাতে-কলমে তাঁকে সাত দিনের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। দেশে ফিরে অর্থ সহায়তা নিয়ে শুরু করেন খামারের কাজ। তিনি জানান, অল্প জমিতে কিভাবে সহজে দ্রুত আত্মকর্মসংস্থান করা যায় এটাই ছিল প্রশিক্ষণের মূল উদ্দেশ্য। পরিকল্পিতভাবে চাষ ও খামার করে একজন কৃষকের উন্নতি সম্ভব দাবি করে আবিদ আলী জানান, সবজি বাগান শুরু করার মাত্র দেড় মাসের মধ্যে তিনি লাউ ও কুমড়া বিক্রি করে ৭০০ টাকা আয় করেছেন। খামার পরিদর্শনকালে থাই দূতাবাসের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, কৃষি মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনের চেয়ারম্যান সঙ্গে ছিলেন। কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, এ প্রযুক্তি পর্যায়ক্রমে সারা দেশে সম্প্রসারণ করা হবে।
রাজকুমারী সিরিনধরন বেলা সাড়ে ৩টায় কাশিমপুর হর্টিকালচার সেন্টারে এসে পেঁৗছালে কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরী তাঁকে স্বাগত জানান। এ সময় নৃত্য পরিবেশন ও ফুলের পাপড়ি ছিটিয়ে রাজকুমারীকে শুভেচ্ছা জানানো হয়। সন্ধ্যার পর কড়া নিরাপত্তার মধ্যে রাজকুমারী ঢাকার উদ্দেশে রওনা হন।

No comments

Powered by Blogger.