মিয়ানমারে মিডিয়ার ওপর নিয়ন্ত্রণ আংশিক শিথিল

ব্যবসা-বাণিজ্য ও অপরাধবিষয়ক বেশ কিছু পত্রপত্রিকা, সাময়িকী ও বই প্রকাশের ওপর থেকে সরকারি নিয়ন্ত্রণ (সেন্সরশিপ শিথিল করেছে মিয়ানমার। তবে সংবাদ শিরোনামের (নিউজ টাইটেলস) ওপর নিয়ন্ত্রণ আগের মতোই বহাল থাকবে। মিয়ানমার টাইমস পত্রিকা গতকাল রবিবার এ কথা জানিয়েছে। সরকারের এ সিদ্ধান্তের সমালোচনা করেছে সংবাদপত্রের স্বাধীনতা আদায়ে আন্দোলনকারী বিভিন্ন সংস্থা।


মিয়ানমারে জার্নাল, ম্যাগাজিন ও বই প্রকাশের আগে তার বিষয়বস্তু অনুমোদনের জন্য তথ্য মন্ত্রণালয়ে জমা দেওয়ার নিয়ম রয়েছে। মিয়ানমার টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এ রকম ৫৪টি জার্নাল, ম্যাগাজিন ও বই প্রকাশের পূর্বে এখন থেকে আর তার বিষয়বস্তু তথ্য মন্ত্রণালয়ে জমা দিতে হবে না। তবে প্রকাশিতব্য সংবাদগুলোর শিরোনাম জমা দিতে হবে। গত শুক্রবার থেকে নতুন এ সিদ্ধান্ত কার্যকর হয়েছে। সরকারি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সংবাদপত্রের ক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রণ সময়মতো শিথিল করা হবে।
গত বছরের নভেম্বরে অনুষ্ঠিত বিতর্কিত নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসা বর্তমান সরকার গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থায় উত্তরণের লক্ষ্যে বেশ কিছু কর্মসূচি গ্রহণ করে। গণতন্ত্রপন্থী নেত্রী অং সান সু চির সঙ্গে একাধিক বৈঠক করেছে সরকার। চলতি মাসের গোড়ার দিকে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটন মিয়ানমার সফর করেন। সংস্কার কর্মসূচির অংশ হিসেবে মিডিয়ার ওপর থেকে আংশিক এ নিয়ন্ত্রণ তুলে নেওয়া হলো বলে মনে করা হচ্ছে।
মিয়ানমারের প্রেস নিরীক্ষণ ও নিবন্ধনবিষয়ক বিভাগের (পিএসআরডি) কর্মকর্তা তিন্ত সুইয়ের বরাত দিয়ে মিয়ানমার টাইমস জানায়, নতুন মিডিয়া আইন প্রণয়ন করার আগে সংবাদ, শিক্ষা ও ধর্মবিষয়ক শিরোনাম নির্ধারণের ব্যাপারটিও সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের 'নিজস্ব বিচারবিবেচনার' (সেলফ-সেন্সরশিপ) ওপর ছেড়ে দেওয়া হবে। তবে নতুন মিডিয়া আইনটি কবে থেকে কার্যকর হবে অথবা তাতে কী কী বিধিবিধান সংযুক্ত হবে, সে ব্যাপারে বিস্তারিত জানাননি তিনি।
সেভেন-ডে নিউজের একজন নির্বাহী সম্পাদক সরকারের এ সিদ্ধান্তে হতাশা প্রকাশ করেছেন। তবে ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রকাশনাগুলোর ওপর নিয়ন্ত্রণ শিথিলের উদ্যোগকে স্বাগত জানান তিনি। ওই নির্বাহী সম্পাদককে উদ্ধৃত করে মিয়ানমার টাইমস জানায়, 'আমাদের দেশে অর্থনৈতিক সংস্কার বাস্তবায়নের কাজ চলছে। এ অবস্থায় মুক্ত হস্তে লেখার ও সমালোচনার স্বাধীনতা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।'
রাষ্ট্রনিয়ন্ত্রিত পত্রিকা নিউ লাইট অব মিয়ানমার গতকাল জানিয়েছে, সিনেমা ও ভিডিওর ক্ষেত্রেও নিয়ন্ত্রণ শিথিল করা হবে। তথ্য ও সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রী কিয়াও হেসানের বরাত দিয়ে পত্রিকাটি এ কথা জানায়। তবে কবে থেকে এটি কার্যকর হবে, সে ব্যাপারে কিছু জানানো হয়নি।
এর আগে গত জুন মাসে প্রকাশকদের জানানো হয়েছিল, খেলাধুলাবিষয়ক জার্নাল, বিনোদনভিত্তিক ম্যাগাজিন, রূপকথাবিষয়ক পত্রিকা ও লটারির ড্রয়ে বিজয়ীদের নম্বর প্রকাশের আগে আর তথ্য মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনের দরকার হবে না।
প্রসঙ্গত, গত সেপ্টেম্বর থেকে সরকারের নিষিদ্ধঘোষিত ওয়েবসাইটগুলোও (যেমন বিবিসি) মিয়ানমারবাসী দেখতে পাচ্ছে। এমনকি দেশ থেকে বিতাড়িত মিডিয়া সংস্থা ডেমোক্রেটিক ভয়েস অব বার্মাও (ডিভিবি) দেখার সুযোগ পাচ্ছে জনগণ। এ ব্যাপারে সরকারের তরফে কোনো ঘোষণা দেওয়া হয়নি। সূত্র : এএফপি।

No comments

Powered by Blogger.