বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ-আগাম সতর্কতা জরুরি

কটানা তিন বছর পর বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ১০ মিলিয়ন ডলারের নিচে নেমে গেছে। এর আগে ২০০৮ সালে এই রিজার্ভ অতিক্রম করেছিল ১০ মিলিয়নের ঘর। এরপর দেশের অর্থনীতিতে অনেক ঘাত-প্রতিঘাত এসেছে, কিন্তু বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কখনো ১০ মিলিয়নের ঘর থেকে নামেনি। এবারই রিজার্ভ নেমে এসেছে। আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী, প্রত্যেক দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হাতে তিন মাসের আমদানি ব্যয় মেটানোর
মতো বৈদেশিক মুদ্রা মজুদ থাকতে হয়। সাম্প্রতিক সময়ে রপ্তানি আয় বাড়লেও আমদানি ব্যয় বৃদ্ধি এবং প্রবাসীদের পাঠানো অর্থের প্রবাহ বা রেমিট্যান্স কমে যাওয়ায় রিজার্ভের ওপর চাপ পড়ছে। রিজার্ভ কমে যাওয়ায় লেনদেনের ভারসাম্য বা ব্যালান্স অব পেমেন্ট চাপের মধ্যে পড়বে, এটাই স্বাভাবিক। গত কয়েক মাসে আমদানি ব্যয় যেভাবে বেড়েছে, তা হিসাব করলে এখনকার রিজার্ভ দিয়ে তিন মাসের আমদানি ব্যয় মেটানোই কঠিন হবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। তাঁরা মনে করেন, রিজার্ভের ওপর চাপ বাড়ায় ডলারের বিপরীতে টাকার মান প্রতিদিনই কমছে, জ্বালানি তেল আমদানি অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে গেছে। আন্তর্জাতিক বাজারে মূল্যবৃদ্ধি এবং আমদানির পরিমাণ বেড়ে যাওয়ায় এ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। অন্যদিকে নেতিবাচক ধারা দেখা দিয়েছে রেমিট্যান্সেও। চলতি অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে (জুলাই-আগস্ট) রেমিট্যান্স প্রবাহে ১৫ শতাংশের মতো প্রবৃদ্ধি হলেও গত মাসে (সেপ্টেম্বর) তা কমে এসেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবে, জুলাই মাসে প্রবাসীরা ১০৩ কোটি ডলার দেশে পাঠিয়েছিলেন। আগস্ট মাসে পাঠিয়েছিলেন ১০৮ কোটি ডলার। আর গত ২৩ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত দেশে রেমিট্যান্স এসেছে ৬৫ কোটি ডলার। অথচ ২০১০-১১ অর্থবছরে রেমিট্যান্সের প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ৬ দশমিক শূন্য ৩ শতাংশ। তার আগে ২০০৯-১০ অর্থবছরে বেড়েছিল ১৩ দশমিক ৪০ শতাংশ। ২০০৮-০৯ অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি ছিল ২২ দশমিক ৪২ শতাংশ।
এ অবস্থায় ঋণের কোনো বিকল্প সরকারের হাতে নেই। স্বাভাবিকভাবেই আইএমএফের দ্বারস্থ হতে হয়েছে সরকারকে। অর্থমন্ত্রী এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ওয়াশিংটনের আইএমএফের বার্ষিক সভায় যোগ দিয়ে এই ঋণপ্রাপ্তির বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
বাংলাদেশ একটি আমদানিনির্ভর দেশ। স্বাভাবিকভাবেই আমদানি খাতে প্রচুর অর্থ চলে যায়। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের একটি বড় অংশ নির্ভর করে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্সের ওপর। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, সেই রেমিট্যান্স প্রবাহ দিনের পর দিন কমছে। ওয়াশিংটন থেকে ফিরে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরও বিষয়টি উল্লেখ করেছেন। তিনি জানিয়েছেন, প্রবাসীদের হাতে প্রচুর অর্থ আছে। দেশে বিনিয়োগের সুযোগ ও পরিবেশ সৃষ্টি করা গেলে প্রবাসীরা দেশে বিনিয়োগ করতে আগ্রহী। সেই পরিবেশ গড়ে তুলতে হবে। দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ যাতে ভবিষ্যতে হুমকির মুখে না পড়ে, তার জন্য নিজেদেরই ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। দাতা সংস্থার দিকে তাকিয়ে না থেকে রিজার্ভ বাড়ানোর চেষ্টা করতে হবে। দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ হতে পারে এর বিকল্প ব্যবস্থা। বিনিয়োগের পরিবেশ গড়ে তুলতে ব্যবস্থা নিতে হবে।

No comments

Powered by Blogger.